ই-কমার্স গ্রাহকদের লোভ কমানোর পরামর্শ

দেশে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের প্রতারণার এমন চিত্র তুলে ধরার প্রেক্ষাপটে গ্রাহকদের লোভ কমাতে পরামর্শ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
একইসঙ্গে ই-কমার্সের নামে প্রতিনিয়ত প্রতারিত হওয়ায় গ্রাহকদের লোভ কমাতে জনস্বার্থে প্রচারণা চালানো এবং ই-কমার্সের নামে প্রতারণা রোধে মানুষকে সচেতন করার কথাও বলেছেন আদালত।
রোববার বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মুস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ দেশের ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে জানতে চান।
তখন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির আদালতকে বলেন, মাই লর্ড আমাদের দেশের ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিষয়টা এমন যে, প্রথমে তারা অফার দেবে একটা মোটরসাইকেলের টাকায় দুইটা মোটরসাইকেল। এরপর গ্রাহকরা টাকা দিয়ে মোটরসাইকেল পাবে এবং টাকাটা বাংলাদেশ ব্যাংকের গেইট ওয়ে দিয়ে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানে চলে যাবে।
এরপর আবার দুইটা কিনলে আরও দুইটা ফ্রি, চারটা কিনলে আরও চারটা ফ্রি পাবে এমন অফার আসে এবং গ্রাহক সে মোটরসাইকেল পায়। কিন্তু এক পর্যায়ে যখন গ্রাহক অধিক সংখ্যক যেমন, আটটা মোটরসাইকেল কিনলে আরও আটটা মোটরসাইকেল পাওয়ার জন্য টাকা দেয় তখন সে টাকা চলে যায়, কিন্তু মোটরসাইকেল আর আসে না।
এই আইনজীবী আরও বলেন, মাই লর্ড আমাদের এখানে লোভের শিকার হয়ে এবং বিভিন্ন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান দ্বারা গ্রাহকেরা প্রতারিত হচ্ছে।
এ সময় আদালত এ আইনজীবীকে বলেন, আপনারা তো পাবলিক ইন্টারেস্টের মামলা করেন। আপনাদের উচিত পাবলিকদের সচেতন করা, তারা যেন এক্ষেত্রে লোভ কমান।
ফোনে আড়িপাতা বন্ধে ও ফোনালাপ ফাঁসের ঘটনার তদন্ত চেয়ে করা রিটের শুনানিকালে ই-কমার্স সম্পর্কে এমন আলোচনা হয় আদালতে।
পরে ফোনে আড়িপাতা বন্ধে দায়ের করা রিটের আদেশের জন্য আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেন হাইকোর্ট।
এর আগে গত ১৩ সেপ্টেম্বর শুনানিতে রিটের পক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির আদালতকে বলেন, রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও জনশৃংখলা রক্ষায় কারো ফোনালাপ রেকর্ড করায় আপত্তি নেই। কিন্তু এর বাইরে যেকোনো নাগরিকের ব্যক্তিগত ফোনালাপ রেকর্ড ও ফাঁস করার আইনগত অধিকার কারও নেই, আমাদের বক্তব্য এখানে। তাই ফোনালাপ ফাঁস বন্ধে রুল জারির আবেদন করছি। আর যেসব ফোনালাপ ফাঁস হয়েছে, সেসব ঘটনার সঙ্গে কারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করতে বিটিআরসি যেন তদন্ত করে সেই নির্দেশনা চাচ্ছি।
সেদিন শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, যারা এই রিট আবেদনটি করেছেন তারা নিজেরা ব্যক্তিগতভাবে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হননি। আর কারো ফোনালাপ ফাঁস হলে তিনি তো বিটিআরসি আইন অনুযায়ী প্রতিকার চেয়ে আদালতে মামলা করতে পারেন। সেক্ষেত্রে জনস্বার্থে এই রিট আবেদন করার তো সুযোগ নেই।
১৩ সেপ্টেম্বরের শুনানির একপর্যায়ে আদালত বলেন, কেউ যদি ফোনে আড়িপাতে এবং কেউ যদি রেকর্ড করে তাহলে সেটা চিহ্নিত করার বিষয় আছে। আর তৃতীয় পক্ষ যদি কেউ রেকর্ড করে বিভিন্ন মিডিয়ায় দেয়, আর মিডিয়া যদি সেটা প্রচার করে, সেক্ষেত্রে কিন্তু মিডিয়ারও একটা ভূমিকা আছে। এক্ষেত্রে সবাইকে সজাগ থাকা দরকার।
ফোনে আড়িপাতা রোধে ও ফোনালাপ ফাঁস হওয়ার ঘটনাগুলোর তদন্ত চেয়ে গত ১০ আগস্ট হাইকোর্টে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের ১০ জন আইনজীবী।
রিট আবেদনে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের চেয়ারম্যানকে বিবাদী করা হয়।