ইউক্রেন-রাশিয়ার সংঘর্ষে নিহত ১০০

পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে কয়েকমাস ধরে উত্তেজনার পর আজ সকাল থেকে ইউক্রেনে তিন দিক থেকে হামলা শুরু করেছে রাশিয়া। ইউক্রেনের সেনারাও রুশ হামলার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে।
আক্রমণ শুরুর প্রথম এক ঘণ্টায় ইউক্রেনের ৪০ জনের বেশি সৈন্য এবং ১০ বেসামরিক নাগরিকের প্রাণহানি ঘটেছে। অন্যদিকে ইউক্রেন বলছে, পাল্টা প্রতিরোধে রাশিয়ার অন্তত ৫০ দখলদার সৈন্য নিহত হয়েছে। রাশিয়ার ৬টি যুদ্ধ বিমান ভূপাতিত করার দাবিও করেছে ইউক্রেন।
ওদিকে, ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর বিমানঘাঁটি ও বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করার দাবি করেছে রুশ সেনারা। বৃহস্পতিবার রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানিয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার ভোরে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনের ডনবাস অঞ্চলে ‘সামরিক অভিযান’ পরিচালনার ঘোষণা দেন।
এরপর ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভসহ খারকিভ, ক্রামাতোরস্কসহ বিভিন্ন শহরে একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়। তিন দিক থেকে ইউক্রেনে ঢুকে পড়ে রুশ বাহিনী।
তার ভাষণ প্রচারের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই রুশ সেনারা ইউক্রেনের বিমান ঘাঁটি ও বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করতে পেরেছে বলে জানানো হয়েছে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার পুতিনের ভাষণ প্রচারের কিছুক্ষণের মধ্যে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ ও অন্যান্য বিভিন্ন শহরে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। ইউক্রেনের বিভিন্ন শহর লক্ষ্য করে রুশ বাহিনীর সামরিক অভিযান শুরু হয়েছে বলে দাবি করেছে কিয়েভ।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, একেবারে নিখুঁত অস্ত্র ব্যবহার করে ইউক্রেনের বিমান বাহিনীর ঘাঁটি এবং সামরিক স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
ইউক্রেনের উপ-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আন্তন জেরাশেঙ্কো বলেছেন, কিয়েভ, খারকভ এবং নিপারের কাছে সামরিক সদর দপ্তর, বিমানবন্দর, সামরিক অস্ত্রাগারে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে রাশিয়া।
কিয়েভে বিমানবন্দর, সামরিক সদরদপ্তর ও সামরিক কমান্ড দপ্তর লক্ষ্য করে ‘ক্রুজ মিসাইল’ হামলা চালানো হয়েছিল বলে ইউক্রেনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
মানবতার দোহাই, যুদ্ধ বন্ধ করুন: জাতিসংঘ মহাসচিব
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে সামরিক অভিযান চালানোর ঘোষণা দেওয়ার পর তা বন্ধ করতে শেষ মুহূর্তের চেষ্টা হিসেবে রুশ প্রেসিডেন্টকে ‘মানবতার দোহাই’ দিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।
ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানকে নিজ মেয়াদের সবচেয়ে ‘দুঃখজনক ঘটনা’ বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
বুধবার টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ভাষণে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে সামরিক অভিযান শুরুর ঘোষণা দেন পুতিন। ওই দিন জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক ছিল, যেখানে উপস্থিত ছিলেন আন্তোনিও গুতেরেস।
বৈঠক শেষে জাতিসংঘ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পুতিনের উদ্দেশে জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ‘জাতিসংঘের মহাসচিব হিসেবে আমার মেয়াদে সবচেয়ে দুঃখজনক ঘটনাটি আর কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘটতে যাচ্ছে।‘
‘আমি প্রেসিডেন্ট পুতিনের উদ্দেশে হৃদয়ের গভীর থেকে বলতে চাই— প্রেসিডেন্ট পুতিন, আপনাকে মানবতার দোহাই, যুদ্ধ বন্ধ করুন, ইউক্রেন থেকে আপনার সৈন্যবহর ফিরিয়ে নিন এবং সেখানে শান্তি স্থাপনের জন্য দায়িত্বশীল হোন। ইতোমধ্যে গত কয়েক বছরে ওই অঞ্চলে বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে।’
যুদ্ধ ইউক্রেনের জন্য ধ্বংসাত্মক পরিণতি নিয়ে আসবে এবং বিশ্ব অর্থনীতিতে এর পরিণতি সুদূরপ্রসারী হবে বলেও সতর্ক করেছেন তিনি।
পিআর/ডিআর