ইমরান খানের লং মার্চ শুরু

ইমরান খানের লং মার্চ শুরু

আগাম নির্বাচনের দাবিতে রাজধানী ইসলামাবাদে অভিমুখে ‘লং মার্চ’ শুরু করেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ও পিটিআই চেয়ারম্যান ইমরান খান। ইমরান খানের সাথে পিটিআই নেতা শাহ মাহমুদ কোরেশি, আসাদ উমর, সিনেটর ফয়সাল জাভেদসহ দলটির বড় নেতারা এবং কয়েক হাজার পিটিআই সমর্থক লাহোরের লিবার্টি চকে এই লংমার্চে অংশ নিয়েছেন। এই বছরের শুরুতে অনাস্থা প্রস্তাবের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর এটি হবে ইসলামাবাদের দিকে পিটিআই প্রধানের দ্বিতীয় পদযাত্রা।

শুক্রবার লং মার্চ শুরু করার আগে লাহোরের লিবার্টি চকে জনতার উদ্দেশে ভাষণ দেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। তিনি বলেন, তার পদযাত্রা রাজনীতি বা ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য নয়, জাতিকে মুক্ত করার জন্য।

খান বলেন, এর একমাত্র লক্ষ্য আমার জাতিকে মুক্ত করা এবং পাকিস্তানকে একটি স্বাধীন দেশে পরিণত করা। সময় এসেছে হাকীকি আজাদীর (প্রকৃত স্বাধীনতা) যাত্রা শুরু করার।

সমর্থকদের উদ্দেশে ইমরান বলেন, গতকাল ইন্টার-সার্ভিস ইন্টেলিজেন্স (আইএসআই) প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল নাদিম আহমেদ আনজুম এবং ইন্টার-সার্ভিস পাবলিক রিলেশন্স (আইএসপিআর) ডিজি লেফটেন্যান্ট জেনারেল বাবর ইফতিখারের যৌথ সংবাদ সম্মেলন রাশেদ শেখের চেয়ে বেশি রাজনৈতিক ছিল।

ইমরান খান বলেন, ডিজি আইএসআই, মনোযোগ দিয়ে শুনুন, আমি যা জানি, আমি আমার দল এবং দেশের জন্য নীরব আছি। আমি আমার দেশের ক্ষতি করতে চাই না।

ইমরান বলেন, ডিজি আইএসআই, যখন আমরা প্রতিষ্ঠানগুলির সমালোচনা করি, এটি গঠনমূলক এবং আপনার উন্নতির জন্য। আমি আবার বলছি, আমি অনেক কিছু বলতে পারি এবং আপনার প্রতিক্রিয়া জানাতে পারি। কিন্তু আমি চাই না প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্বল হোক।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী আরও বলেছেন যে তিনি সেনা প্রধানের সঙ্গে বৈঠকে কোনও অসাংবিধানিক দাবি করেননি। ইমরান যোগ করেছেন, আমি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। আমি চাই জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে কে দেশকে নেতৃত্ব দেবে - ওয়াশিংটন, আমেরিকা বা অন্য কেউ নয়।

শুক্রবার (২৮ অক্টোবর) লাহোরের লিবার্টি চক থেকে শুরু হওয়া লংমার্চটি ফিরোজপুর রোড, ইছরা, আজাদী চক, মোজাং, দাতা দরবার প্রদক্ষিণ শেষে মুরিদকে অভিমুখে যাবে। পরে কামঙ্কি, গুজরানওয়ালা, ডাস্কা, সুম্বরিয়াল, লালা মুসা, খারিয়ান, গুজ্জার খান এবং রাওয়ালপিন্ডি পেরিয়ে ৪ নভেম্বর ইসলামাবাদে প্রবেশ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

কয়েক হাজার পিটিআই সমর্থক লাহোরের লিবার্টি চকে এই লংমার্চে অংশ নিয়েছেন।

এরআগে মঙ্গলবার সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পিটিআই চেয়ারম্যান ইমরান খান লংমার্চ শুরুর তারিখ ঘোষণা করে বলেন এই লং-মার্চ ঐতিহাসিক হতে চলেছে কারণ প্রকৃত স্বাধীনতার জন্য আমাদের এই লংমার্চ এবং এর কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই। তিনি বলেন, শুক্রবারের মার্চ হবে ক্ষমতার লড়াই এবং পাকিস্তানের ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ঠ স্বাধীনতা সংগ্রাম।

ইমরান খান বলেন, বিক্ষোভ হবে শান্তিপূর্ণ। আমরা আইন ভাঙব না কিংবা রেড জোনে প্রকাশ করব না। আদালত আমাদের যেসব শর্তে অনুমতি দিয়েছেন, তা মেনেই ইসলামাবাদে কর্মসূচি পালন করা হবে। কোনো বিঘ্ন ঘটলে ওপার থেকে হবে, আমাদের পক্ষ থেকে নয়। আমরা বিপ্লবের লক্ষ্যে আছি। আমরা কোনো দুষ্টুমি করার জন্য ইসলামাবাদে যাচ্ছি না। আমরা সবাইকে শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করতে নির্দেশনা দিয়েছি।

এদিকে, ক্ষমতাশীন দল পিএমএল-এন নেতা নওয়াজ শরীফ অভিযোগ করেছেন যে লংমার্চ বিপ্লব ঘটাতে নয় বরং ইমরানের পছন্দের পরবর্তী সেনাপ্রধান নিয়োগের জন্য পরিকল্পনা করা হয়েছে।

তিনি বলেন, জনগণ তার চার বছরের শাসনে তার বিপ্লব দেখেছে, বিদেশী তহবিল এবং তোশাখানা রেফারেন্সের পরে পিটিআই প্রধান অকাট্য প্রমাণ সহ ইতিহাসের সবচেয়ে ‘বড় চোর’ হিসাবে প্রমাণিত হয়েছেন।

অন্যদিকে পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট বুধবার ইমরান খানের ইসলামাবাদে লংমার্চ অবিলম্বে বন্ধ করার জন্য শাহবাজ শরীফের সরকারের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছে। বিপরীতে পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি (সিজেপি) উমর আতা বন্দিয়াল সরকারকে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সাথে আলোচনা করার পরামর্শ দিয়েছেন।

এরআগে, শাহবাজ শরীফের সরকার রাজধানীতে লংমার্চ করার জন্য পিটিআই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আদালত অবমাননার আবেদন করে।

পিটিআইয়ের লংমার্চের জন্য তাদের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে ইসলামাবাদ পুলিশ। দেশটির রাজধানীতে ইতিমধ্যেই নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে, শত শত শিপিং কনটেইনার গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে মোড়ে মোড়ে রাখা হয়েছে, মিছিলকারীদের যদি তারা সরকারি স্থাপনায় হামলা করার চেষ্টা করে তাহলে তাদের বাধা দিতে প্রস্তুত।

উল্লেখ্য, চলতি বছর ২৫ মে ইসলামাবাদ অভিমুখে লংমার্চ শুরু করেছিলো ইমরান খানের দল পিটিআই। তবে কর্মসূচি সহিংস রূপ নিলে মাঝপথে তা স্থগিত করেন ইমরান।

সূত্র: ডন, জিও নিউজ