এ কোন মৃত্যু
‘সবাই এখন আছি মৃত্যুলোকে নিমজ্জিত। কখন উঠবে বেজে শেষ ঘন্টা অকষ্মাৎ কেউ জানি না তা’। পৃথিবীর সামনে এমনই এক ভয়ংকর যুদ্ধের মধ্যে সবাই। কোন গুলির শব্দ নেই। নদীতে সাগরে গানবোট কিংবা রণতরী নেই। আকাশে বোমারু বিমান নেই। মিলিটারি নেই, রাজাকার নেই, আলবদর, আল সামস নেই, তবু যুদ্ধ। মিলিটারি, মুক্তিবাহিনী, মিত্রবাহিনীনহীন এক যুদ্ধ। যার কোন ঘোষক নেই। তবু এ যুদ্ধ। না, প্রাণ বাঁচাতে দেশ ছেঁড়ে কেউ যায়নি কোন দেশের শরনার্থী শিবিরে। মুক্তির গান বাজে না কোথাও। তবু এর নাম যুদ্ধ। কোথাও আগুন নেই, রক্তক্ষরণ নেই, দখলদারিত্বের অভিশপ্ত প্রয়োগ নেই। কেবল আছে মৃত্যু, মৃত্যু আর মৃত্যু।
‘এ কোন মৃত্যু, কেউ কি দেখেছে মৃত্যু এমন? শিউরে যাহার ওঠে না কান্না ঝরে না অশ্রু’? তা হলে এ কেমন মৃত্যু? এক থেকে সুকৌশলে একশত সেখান থেকে হাজার, লক্ষ। আজকের পৃথিবীর এখন নিত্য নৈমিত্তিক খবর মৃত্যু। কেবল প্রশ্ন আর প্রশ্ন- কত? এই মুহূর্তে বিশ্বব্যাপি সব থেকে সহজ এর উত্তর। যেন মৃত্যুর সুনামী পৃথিবী ভূগোল গ্রাস করা। কি নিপুন তার মানুষ হত্যার রণকৌশল। এখনো মানুষের শক্তি বুদ্ধি চরম অন্ধকারে। না কিছু করতে পারছে না, চরম হতাশায় কাটছে সময়। মাঝে মাঝে মনে হয় কোন এক সময় শক্তির দ্বারস্ত যদি হতে পারতাম, যদি বলতে পারতাম ‘হে সময় গ্রন্থি, রক্ষা কর; আমরা সবাই চোখ বুজে আছি, তুমি এ নিষ্ঠুর অসভ্য এই চরিত্রহীন সময়টাকে চোখের নিমিশে ফাস্ট ফরওয়ার্ড করে দাও। আমরা দম ফেলে বাঁচি। আর কিইবা বলবার আছে আর কিইবা বলা যায়। এই মুহূর্তে বিশ্বব্যাপি সবার নাক, কান, চোখ, মুখে গলায় এক অসভ্য চরিত্রহীন কাটা করোনা। বিশ্ব পরিচয় কোভিড-১৯।
এক রক্তক্ষয়ী দীর্ঘ নয় মাসের প্রত্যক্ষ সসস্ত্র যুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত আমাদের স্বাধীনতা। যার প্রতিপক্ষ ছিলো স্থির। আমরা চরম বৈষম্যের কষাঘাতে জর্জড়িত হতে হতে তাকে তনু মোন প্রাণ দিয়ে চিনতে পেরেছিলাম। আমরা চিনতে পেরেছিলাম আমাদের চীর শত্রু পাকিস্তানকে ও তার এ দেশীয় দোশরদের। সেই যুদ্ধে যেমন আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছিলাম আমরা তদ্রুপ চরম প্রত্যাঘাতে পরাজিত করে তবে বিজয়ী হয়েছিলাম। আজ আর তেমনটা হচ্ছে না। এবারের প্রতিপক্ষ সবার ধরা ছোঁয়ার বাইরে। দেখতে পারছি না, বুঝতে পারছি না একেবারে। অথচ তার তীব্র আঘাতে ক্ষতবিক্ষত দুনিয়ার সমস্ত মানুষ। প্রতিদিন সে মেরে চলছে হাজার হাজার মানুষ। অজানা অচেনা অদেখা ভয়ে বিধ্বস্ত সমগ্র বিশ্ব। এ এমন এক যুদ্ধ যার বিরুদ্ধে যোদ্ধা কেবল চিকিৎসক, নার্স এবং স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট প্রতিটি ক্ষেত্র।
মুক্তির যুদ্ধে কৃষক, শ্রমিক, মেহনতি মানুষ বুক পেতে সামনের সারিতে দাঁড়িয়ে গুলিকে আলিঙ্গন করেছিল বুকের উপর। আজ এই করোনা যুদ্ধে সে অসহায়। এই যুদ্ধে সংক্রামিত হয়ে তার মরবার সুযোগ আছে কিন্তু মারবার নয়। এই যুদ্ধে তার রুখে দাঁড়াবার বা রুখে দেওয়ার কোন সুযোগ নেই। এই যুদ্ধে তারা কেউ গুলিবিদ্ধ হবেন না। এই যুদ্ধে কৃষক শ্রমিক মেহনতি মানুষ মুক্তিবাহিনি কিংবা অন্য কোন বাহিনীর কেউ এই যুদ্ধে জয়ী হয়ে, পদক কিংবা খেতাবে ভুষিত হবেন না। এই করোনা যুদ্ধে জয়ের সকল পদক ও খেতাব শুধুমাত্র চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিতদের জন্য। তাকে রুখতে পারবে না কেউ কোন রাজনীতি।
খালি কলশির আভরণে যে রাজনীতি তা এখন পলায়নপর। আজকের এই কঠিন সময়ে বাস্তবতার মাঠে যেখানে সৎ, যোগ্য, প্রাজ্ঞার বীজ বপিত হলো সেখানে যেন আর কোনদিন কোন মাকাল ফলের জন্ম না হয়। যদি হয় তবে আজকের পৃথিবীর এই শিক্ষা বিফলে পর্যবসিত হবে।
আর চাই না এত মৃত্যুর পর, এত অযোগ্যতার পর, এত সমন্বয়হীনতার পর তেমন কোন রাজনীতি বা রাজনীতিবিদ। যাদের অতি কথনই একমাত্র রাজনৈতিক শিক্ষা। যারা রাজনৈতিক নির্দেশ না পেলে প্রাকৃতিক কর্মও সাধন করেন না। পৃথিবীতে এখন মূলত অযোগ্যদেরই মহোৎসব চলছে। তা না হলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট কি করে বলে মানব শরীরে কীটনাশক প্রয়োগেই করোনার মৃত্যু। যে কথা শুনে খোদ গাধারাও নাকি মুখ লুকাবার যায়গা খুঁজছেন। আমি জানি এখন ঠাট্টার সময় নয়। হাসির সময় নয়। যদিও এ আমার হাসি নয়, ঠাট্টাও নয়, এ কথাগুলি মূলত: কষ্টের।
এখন সময় করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধের। সমস্ত বিশে^র যোদ্ধারা প্রস্তুত। বাংলাদেশেও স্বাস্থ্যকর্মী নার্স ডাক্তার প্রস্তুত। এ সম্মানের যুদ্ধ পেশার। আমাদের অনেক কিছুই নাই। আমাদের অনেক কিছুই জানা ছিলো না। আমাদের অনেক কিছুই বুঝতে দেরী হয়ে গেছে। তার পরেও এ যুদ্ধকে অতিক্রম করতেই হবে। শুধুই অকাশে শক্তির সন্ধান না করে সমন্বিত উদ্যোগী হতে হবে। নষ্ট রাজনীতির দেশে আত্মউৎসর্গ করতে চাইলেও কারো অনুমতির প্রয়োজন হয়। আমাদের দেশে সকল প্রশংসা রাষ্ট্রপ্রধানের ¯্রষ্টার নয়। যারা যুদ্ধ করতে মাঠে যায় তাদের অনুমতির প্রয়োজন পরে না। যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। এখন দ্বিধার সময় নয়। চরম ক্ষতি হয়ে যাবে। এই যুদ্ধ জোর কদমে সামনে দাঁড়াবে চিকিৎসক নার্স। এ যুদ্ধ সম্মানের। শুধু অর্থ নয়, শুধুই যশ নয়। শুধুই ক্ষ্যাতি নয়। এবারের এই যুদ্ধে সম্মান প্রত্যাসিরা হবেন মানবিক। নির্ভিক পেশাদার। মানব সেবার ব্রত যারা মুখে নয়, ধারণ করেন বুকে, অন্তরে। আর যারা ইতিমধ্যেই সিমাহীন অর্থের সংগ্রহশালা খুলে তাকে যক্ষের ধনের মতোন করে আকড়ে পাহারা দিচ্ছেন, এ সম্মানের জায়গা তাদের নয় কিছুতেই। তারা কোন ধরণের পি.পি.ই সহযোগেই আর নামবেন না ঘর ছেড়ে। তারা যোদ্ধা নয়, আর কোন কিছুর বিনিময়ে। এদের স্মরণে রাখতে হবে। পরিস্থিতি ঘুরে গেলে শুধুমাত্র প্রাজ্ঞতা আর যোগ্যতার (বয়স) বিনিময়ে যেন সামনের সারি দখল না করে। এমন ভুরি ভুরি উদাহরণ আছে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বাস্তবতায়।
এখন সারা পৃথিবী, দেশ শুধুমাত্র ব্যাতিক্রমদেরই ছালাম জানাবে তাদের প্রতি সম্মান এবং শ্রদ্ধায় নতজানু হবে। আর সেই মানুষেরা হলো ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা এবং তার সাথে মানুষের এই চরম কষ্টের দিনে যে মানুষ মানুষের পাশে আছে খাদ্য নিয়ে, জন নিপাপত্তা নিয়ে, সংবাদ নিয়ে। তারাও শ্রদ্ধায় কৃতজ্ঞতায় স্মরণে থাকবে জাতির। স্মরণে থাকবে ব্যাপক রাজনৈতিক নেতাদের অনুপস্থিতিতে রাষ্ট্র প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিরাও। যাদের উপর ভরসা করেই এই মুহূর্তের পরিস্থিতি অতিক্রম করছেন মাননীয় প্রধানমমন্ত্রী। এই মুহূর্তে মানুষ আশ্বস্ত রাখবার পথ/কথা/বুদ্ধি/পরামর্শ দেবার যোগ্যতা কেবল আছে তাদেরই কাছে। কোন ভিরু কাপুরুষ পালায়নপর প্রাজ্ঞতার কাছে পথের দিশা থাকলেও মাঠে যুদ্ধরত সাহসী প্রজন্ম তা মানবে না।
যারা মুক্তির যুদ্ধ করে এদেশে জয় করেছে, তারা কি কেউ বলেছিলো আগে AK47 রাইফেল এনে দাও তার পরে যুদ্ধে যাবো? তারা কি জানতেন না যুদ্ধ মানেই মৃত্যুরই মেলা? হোক সে মাঠে ময়দানে পানিতে কিংবা আকাশে। সেই মানুষেরা আজ প্রত্যাশা করছে তাদের প্রজন্মের কাছে। প্রত্যাশা করছে চরম বাগারম্বড় রাজনিতীর কাছে। তারা বলছে ‘তোমরা এসো পাশে দাঁড়াও, আমাদের আরো কিছুদিন এই পৃথিবীর আলো দেখতে দাও। আমাদের বুঝতে দাও তোমরা আমাদের সন্তান। মুক্তির যুদ্ধের সময় যারা হিসাব কষেছিলেন পাকিস্তানী মিলিটারি পৃথিবী সেরা, যারা হিসাব কষেছিলেন এই সম্পদ সম্পত্তি অবস্থান ছেড়ে কি করে বাঁচবো? তারা সবাই পিস কমিটির মেম্বর হয়েছিলেন। তারা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেননি। তারা সকলেই প্রজ্ঞাবান ছিলেন, সম্মানিত ও সম্পদশালী ছিলেন। কিন্তু তাদের সিদ্ধান্তের মধ্যে ব্যক্তিকেন্দ্রিকতা ছিলো। দেশাত্মবোধ ছিলো না। অতএব শেষ রক্ষা তাদের হয়নি।
ইতিহাস তাদের আস্তাকুড়ে নিক্ষেপ করেছে। আমরা এই করোনা যুদ্ধে কোন পেশাদারদের মধ্যে সেই বুদ্ধির পুনরাবৃত্তি দেখতে চাই না। আমরা এই করোনা যুদ্ধের যোদ্ধাদের যে কোন মূল্যে যে কোন পন্থায় ময়দানে যুদ্ধরত দেখতে চাই। মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আল-আমিনের প্রতি বিশ্বাস রেখে দয়া করে যার যার স্থান থেকে সরব হোন। নিজেদের নিরাপদ রাখার বুদ্ধি ও উপায় নির্ধারণ করুন। আমরা অর্থাৎ দেশ আজ চরম অসহায়। মানুষের ত্রাতা হয়ে হাজির হোন।
এই মুহূর্তে ডাক্তার, নার্স এবং সকল শ্রেণির স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টদের অনুপস্থিতি আমাদের চরম অন্ধকারে নিমজ্জিত করবে। তাতে করে কারো পক্ষেই ভালো বা নিরাপদ থাকা সম্ভব হবে না। আমরা এই পরিস্থিতিতে ভুলেও যেন ভুলে না যাই। দেশে যখন বালা আসে তখন সাধু ব্রাম্মণ, পীর, ডাক্তার, মোক্তার কেউই নিরাপদ নয়। সবারই এখন সাধ্যাতীত বিচক্ষণতা দিয়ে এই পরিস্থিতি অতিক্রম করতে হবে। সম্মুখ সারিতে দাঁড়িয়ে এ করোনা যুদ্ধ এখন সবার জন্য নয়। সকলেই না বুঝে এই যুদ্ধে অংশ নিলে পরাজয় অবস্যসম্ভামী। এই যুদ্ধে সাধারণের অংশগ্রহণ স্বাস্থবিধি মেনে ঘরে থাকা। লক ডাউনকে যথার্থ অনুসরণ করা। তবেই সহজ এবং নিরাপদ হবে ডাক্তার নার্স সহ স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টদের এ যুদ্ধে জয়ী হওয়া।
ভাবিনি কোনদিন আমাদের ধ্যান জ্ঞ্যানের যায়গাগুলো এভাবে থেমে যাবে। সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাবে। ভাবিনি শবে মেরাজ, শবে বরাতে মসজিদ হতে দূরে থাকতে হবে। পবিত্র রমজানে তারাবী শেষে সমস্বরে বলতে পারবো না ‘আল্লাহুম্মা আজিরনা মিনার নার ইয়া মুজিরু ইয়া মুজিরু ইয়া মুজিরু বি রাহমাতিকা ইয়া আরহামার রাহিমিন’। মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে আজানে ধ্বনিত হবে ‘হাই আলাস সালাহ্’ অথচ মসজিদের দুয়ারে থাকবে প্রবেশ নিষেধের নিয়ম। কখনো ভাবেনি কোন মুসলমান পবিত্র বাইতুল্লাহ শরীফ তাওফ থেমে যাবে প্রবেশ নিষেধ হবে পবিত্র মসজিদে নবমিতে। দেখতে হবে বেথেলহামে খ্রিষ্টীয় সকল গির্জায় তালা। দেখতে হবে জেরুজালেমের পবিত্র আল-আকসা মসজিদসহ পৃথিবীর হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সকল মন্দিরে ভক্তদের প্রবেশ নিষেধ হয়ে যাবে। সকল ধর্মীয় উপাসনালয়ে সমষ্টির উপস্থিতি স্তব্ধ হয়ে যাবে।
ভাবিনি কখনো সামাজিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, রাজনীতির মঞ্চ, ১লা বৈশাখে গীত হবে না গান ‘মুছে যাক গ্লানি ঘুচে যাক জরা, অগ্নি স্নানে শুচি হোক ধরা’। ভাবিনি রমনার বটমূল, মঙ্গল শোভাযাত্রা, বকুল তলায় মানুষ যাবে না। এই আজ সত্য, সবার থেকে সবাই আলাদা। একা একদম একা। ভয়ের প্রচন্ড তান্ডবে কান্না পথ খুঁজছে পালানোর। পৃথিবীতে মানবিক সম্পর্কগুলো শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। মনে হচ্ছে সব কিছু দেখে শুনে এ যেন কেয়ামতের মাঠে- ইয়ানফ্সির অনুশীলন হচ্ছে পৃথিবী জুড়ে। এই আজ সত্য, চরম নিষ্ঠুর সত্য।
এখন প্রয়োজন এই অন্ধকার সময়ের নিষ্ঠুর দেয়াল ভেঙে মানব কল্যাণের সুস্নিগ্ধ পথ সুগম করা। আমরা জানি না এই ভয়ংকর করোনার জন্মের স্থান। কারণ, জানি না এর মাষ্টারমাইন্ডদের নাম। জানি না একি ক্ষুব্ধ প্রকৃতির রুদ্র মূর্তি না কি মানুষ সৃষ্ট শ্রেষ্ঠত্বের প্রতিযোগিতা। জানি না এও কি রাজনীতি না কি নুতন কোন অর্থনৈতিক বলয়ের পথ পরিক্রমার নিষ্ঠুর রূপ? জানি না সত্যিই কিচ্ছু জানি না। তবে সত্য সে যাই হোক তার চরম নিষ্ঠুরতার শিকার ‘মানুষ’। মানুষের প্রাণ। তাকে সুস্থ্য, শান্ত, স্থির, চিন্তাহীন, ভয়হীন, ক্রন্দনহীন করতে পারে এই মুহূর্তে একমাত্র ডাক্তাররূপী মানুষ। আমরা আজ সেই মহান মানুষদের স্যালুট জানাই। আল্লাহকে বলি হে আল্লাহ্ তোমার পরে এই ধরিত্রীতে সব থেকে বড় ত্রাণকর্তা মানুষের, সে হলো ডাক্তার। তুমি তাদের সহায় হও। আর দেশ রাষ্ট্রকে তাদের বাগারম্বড়তা ভুলে একবার হলেও বুঝতে দাও, অযোগ্য পেয়াদা দিয়ে তেল চুরি, চাল চুরি পাহাড়া দেওয়া গেলেও জমিদারী এবং মহামারী নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। এই মুহূর্তের করোনা যুদ্ধে বক্তৃতার থেকে ভোতা কোন অস্ত্র নাই। বাংলাদেশ সরকারের উসচিব জালাল সাইফুর রহমান (পরিচালক দুদক) প্রথম শহীদ। এরপরই সিলেটে করোনা যুদ্ধে দ্বিতীয় শহীদ ডা. মঈন উদ্দীন, সিটি ব্যাংকের কর্মকর্তা মুজতবা শাহরিয়ার, এফভিপি, এইচআর, হুমায়ুন কবীর খোকন, প্রধান প্রতিবেদক, সময়ের আলো (সাংবাদিক), জসিম উদ্দীন, কনস্টেবল, বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী। তাদের সবার আত্মার শান্তি কামনা করছি। পরিবারের সাথে সমব্যাথি আছি। মহান আল্লাহ্ যেন তাদের তার শ্রেষ্ঠ স্থান দান করেন। সেই সাথে রাষ্ট্রের কাছেও অনুরোধ রাখি, এই ডাক্তার, সাংবাদিক এবং পুলিশ সদস্য যেন সর্বশ্রেষ্ঠ সম্মানিত খেতাবে ভূষিত হন। বোঝা দরকার করোনার কোন চরিত্র নাই, সে চরিত্রহীন। প্রতি মূহূর্তে পাল্টাচ্ছে রূপ। সামাজিক কিংবা শারীরিক দুরত্ব বজায় রেখেই স্বাস্থ্য কর্মীদের পাশে আমাদের সমষ্টির ঐক্য উপস্থিতি নিশ্চিত করি। এই কর্মে আমরাও যেন করোনার মতো চরিত্রহীন হয়ে না পরি।
নেতা বক্তৃতা সবাই নির্বাসনে। মাঠে প্রসাশন, নির্দেশনায় প্রধানমন্ত্রী। আছেন যুদ্ধরত কতিপয় সাহসী সংবাদকর্মী, সসস্ত্র বাহিনী, র্যাব ও পুলিশ বাহিনী। আর আছেন করোনার সাথে সম্মুখ সমরে ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীরা। আছেন হাজারো সাধারণ মানুষ বিপন্ন মানুষের পাশে। যুদ্ধ চলছে। ইনশাআল্লাহ আসরাফুল মাখলুকাত মানুষেরই জয় হবে। শুধু যেন মনে থাকে আমাদের, করোনার শিক্ষা এই মুহূর্তের মুখোশের আড়ালের আমিকে। আজ যারা মিউ মিউ করছে দূরে, সাধ্যাতীত দূরে, তারা যখনই বুঝতে পারবে বেঁচে গেছি, অমনি সিংহের গর্জনে লফিয়ে ঘাড়ে পড়বে আমাদের। ছিন্নভিন্ন করে দেবে সময়ের অর্জন। সেই শক্তের অপরাধে আমরা ফের অসহায় হয়ে যাবো। মিউ মিউ করে বলবো আয় করোনা আয়। তখন করোনা যদি ফের ফিরে আসে মানুষের ভোট সেজে। সেদিন তা হলে আর কারোরই পালানোর জায়গা থাকবে না।
আমরা এই পৃথিবীর অদ্ভুত ভেটাররা এই করোনা সময়ে যে ডাক্তার বিনে পয়সায় রোগী দেখে, ফ্রী এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস চালু রাখে, মানবতার বাজার খোলেন আর মুষ্টি ভিক্ষা করেন দ্বারে দ্বারে ক্ষুধার্ত মানুষের জন্য। আমরা কেউ তার ভোটার নই। কারণ তার অর্থ নেই, শক্তি নেই লোকবল নেই। আমরা এই পৃথিবীর মানুষ ভোট দেই তারে, যার অর্থ, বিত্ত, শক্তি এবং ধমক দেওয়ার অসভ্য সক্ষমতা আছে। আর আছে করোনা থেকে মুক্তি পেতে মানব দেহে কিটনাশক প্রয়োগের বুদ্ধি।
পরিশেষে বলি এটিও কোন হাসির কথা নয়। নিতান্তই কষ্টের। করোনা একদিন চলে যাবে। রেখে যাবে কান্না দুঃখ কষ্ট দুর্ভিক্ষের হাহাকার। অনেক শিক্ষাও রেখে যাবে নিজেকে জানার। বারবার সে স্মরণ করিয়ে দেবে আমাদের মুখোশের ভিতরের আমিকে। জানি না প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির কোন সীমারেখা আপাতোত টেনে দিলো কি না করোনা। জানি না এমন সিদ্ধান্ত পৃথিবী গ্রহণ করবে কিনা বছরে অন্তত সাতদিন স্বেচ্ছায় ‘লকডাউন’। জলে চলবেনা তরী, রণতরী কিংবা কোন জলযান, চলবে কেবল হাঙ্গর, তিমি আর আছে যত জীবন্ত জলজ প্রাণ। আকাশে চলবে না কোন ককটার প্লেন কিংবা যুদ্ধবিমান, কেবল উড়বে মুক্ত আকাশে আছে যত উড়ন্ত পাখির প্রাণ। মানুষ ঘরে থাকবে নিজের মত করে রাস্তা থাকবে ফাঁকা। তা হলেই হয়তো এই পৃথিবীর প্রকৃতি পশু-পাখি মানুষ ধর্ম পরিশুদ্ধ রূপে বেঁচে থাকবে।