এই দেশে মুক্তিযুদ্ধ কখনো পরাজিত হবে না: ইউসুফ বাচ্চু

এই দেশে মুক্তিযুদ্ধ কখনো পরাজিত হবে না: ইউসুফ বাচ্চু

নাট্য ব্যক্তিত্ব ও মুক্তিযোদ্ধা নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু বলেছেন, মৌলবাদীরা যতোই আষ্ফালন করুক, বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ কখনো পরাজিত হবে না। সুনামগঞ্জের শাল্লায় হেফাজত ইসলাম হামলা চালিয়ে ভাঙচুর, লুটপাট করেছে। হেফাজতের মামুনুলের নেতৃত্বে হামলার ঘটনা ঘটলেও সরকার তাকে গেপ্তার করেনি। যারা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙছে, যারা ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বাড়িঘরে হামলা ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে তারা এই দেশের শত্রু। তারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী মৌলবাদী গোষ্ঠী। এই হেফাজতের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।

সোমবার সন্ধ্যায় বরিশাল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠিত মুজিব জন্মশতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু।

বরিশাল সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদ, বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশান, বরিশাল বিভাগ এবং বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট বরিশাল বছরব্যাপী মুজিব শতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উৎসবের আয়োজন করে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু বলেন, সুনামগঞ্জের শাল্লায় ধর্মীয় সংখ্যাঘুদের বাড়িঘরে হামলা ভাঙচুর এবং লুটপাটের সঙ্গে জড়িত হেফাজতে ইসলাম। তারা মিথ্যা ধর্মের ধুয়া তুলে সেখানে হামলা চালিয়েছে। সরকার বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুরের হোতা, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বাড়িঘরে হামলার হোতা হেফাজতের মামুনুলদের গেপ্তার করে না। আর আমরা একটি শব্দ বললেই গ্রেপ্তার। সরকারের একটু সমালোচনা করলেই তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। সরকারের বিরুদ্ধে বলা মানেই সরকার বিরোধী নয়। আমরা সমালোচনা করলেও আপনাদেরই লোক। তারপরও আমরা যারা সরকারের সমালোচনা করি তাদেরই গ্রেপ্তার করা হয়। আমরা সরকারের গঠনমুলক সমালোচনা করি। যাতে সরকার সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙার সাহস দেখানো হেফাজতের মামুনুলরা ধর্মীয় উসকানী দিলেও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।

নাছির উদ্দিন ইউসুফ বলেন, মৌলবাদী এই মামুনুলরা এখান আবার ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে শ্লোগান দিচ্ছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে যাতে না আসতে পারে সেজন্য রাস্তায় নেমেছে। একই সময় অন্য দেশের রাস্ট্র প্রধানরা বাংলাদেশ আসছে, তাদের বাধা দিচ্ছে না। মূলত এই মৌবাদী চক্রটি একটি ধর্মীয় উসকানী দিতেই কাজ করে যাচ্ছে। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের কিছু বিষয় দ্বিমত তো আছেই, তাই বলে ভারত যে আমাদের মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতা দিয়েছে সেটা ভুলে গেলে চলবে না। ভারত এবং রাশিয়া আমাদের অন্যতম বন্ধু রাষ্ট্র।

তিনি বলেন, যারা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙছে, যারা ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বাড়িঘরে হামলা ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে তারা এই দেশের শত্রু। তারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী মৌলবাদী গোষ্ঠী। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এই মৌলবাদী  গোষ্ঠী যতই চেষ্টা করুক বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ কখনো পরাজিত হবে না। বাংলাদেশর মানুষ সেটা হতে দেবে না। দেশটাকে আসলে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। তাহলে ৩০ লাখ শহীদ এবং দুলাখ মা-বোনের আত্মদান স্বার্থক হবে।

বছরব্যাপী অনুষ্ঠানমালার প্রথম পর্বের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। বিশেষ অতিথি ছিলেন বরেন্য নাট্য ব্যক্তিত্ব ও মুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি সিটি মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ বলেন, মুক্তিযুদ্ধ ও মা-বোনের রক্ত-সম্ভ্রমের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মহান অর্জনকে যেন ম্লান করে দিতে না পারে সেদিকে নজর দিতে হবে। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে সাম্প্রদায়িক উসকানিসহ যে কোন অপকর্মের বিরুদ্ধে আমাদের সচেতন ও সতর্ক থাকতে হবে। আমাদের আশেপাশে কি ঘটছে সেটা দেখতে হবে। নতুন প্রজন্মের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের সেই বিভিষিকাময় স্মৃতি তুলে ধরেতে হবে। সেই লক্ষ্যে বরিশালে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে পাক বাহিনীর টর্চার সেল সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নতুন প্রজন্ম ওই সময়ের জঘন্য ঘটনা জেনে যুদ্ধাপরাধী এবং বাংলাদেশ বিরোধী চক্রের বিরুদ্ধে গড়ে উঠবে।

মেয়র বলেন, আমার বিরুদ্ধে অনেক প্রপাকা-া ছড়ানো হয়। এটা নতুন কিছু নয়, আমার বাবা, দাদার বিরুদ্ধেও এমন প্রপাকা-া ছড়িয়েছে একটি চক্র। আমি সেগুলো আমলে নেইনি। বরিশালে রাজনৈতিক হানাহানি নেই, ব্যবসায়ীরা সুন্দর পরিবেশে ব্যবসা বাণিজ্য করছে। আমার কোন কর্মী কোন চাঁদাবাজী কিংবা মটরসাইকেল মহড়া দিতে সাহস পায় না। তার মধ্যেও আমার অজান্তে কিছু কিছু ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। সেগুলো আমার নজরে আসলে আমি কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করি। কয়েকদিন আগে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে একটি ঘটনা ঘটেছে। যা আমার জন্য লজ্জাজনক।

তিনি বলেন, সারা দেশের সিটি করপোরেশনগুলো দুর্নীতির আখড়া। বরিশাল সিটি করপোরেশনও তার বাইরে নয়। আমি সিটি করপোরেশন থেকে দুর্নীতি দূর করার চেষ্টা করছি। শতভাগ দুর্নীতি কমানো সম্ভব হবে না। আমি সহনীয় অবস্থায় নিয়ে আসতে কাজ করছি। আমি সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করছি। আমি আপনাদের প্রতিনিধি হিসেবে আপনাদের ট্যাক্সের টাকা সঠিকভাবে ব্যয় হচ্ছে কি না সেটা দেখার চেষ্টা করছি। গত তিন বছর সময় লেগেছে সেখান থেকে একটা জায়গায় আনতে। নগরবাসীর ট্যাক্সে সিটি করপোরেশন চলে। তাদের ট্যাক্সে আমাদের ফুটানী। যারা সিটিতে কাজ করছেন তাদের সেটা বুঝতে হবে।

মেয়র বলেন, নগরবাসীর চাওয়া খুব বেশি কিছু নয়, সেটা আমি জানি। তাদের চাওয়া মশার উপদ্রব কমানো, রাস্তাঘাট ঠিক করা, পানির সমস্যা দূর করা। কিছুদিন আগের মশার উপদ্রব ছিল। মাত্র দুইটা ফগার মেশিন দিয়ে মশা নিধন করা অসম্ভব। তাই নগরবসীর দুর্ভোগ কমাতে ১০টা নতুন মেশিন কেনা হয়েছে। এখন মশার উপদ্রব কমেছে। সিটি করপোরেশনের নিজস্ব তহবিল থেকে সড়ক মেরামতসহ যাবতীয় কাজ করার চেষ্টা হচ্ছে।

মুজিব জন্মশতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উৎসব উদযাপন পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ দুলালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পরিষদের সদস্য সচিব দেবাশীষ চক্রবর্তী।