এই সম্প্রীতি বজায় থাকুক

বরিশালে তারুণ্য নির্ভর যুবকদের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয়েছে মহালয়ার মিলনমেলা। এই আয়োজনের সঙ্গে কেবল সনাতন ধর্মের যুবকরা ছিলেন এমনটা নয়। ছিলেন এবং আছেন অন্য ধর্মের সদস্যরা। ধর্ম-বর্ণ এবং গোত্র বিবেচনায় নয়, সম্প্রীতির দৃঢ়তায় একসঙ্গে কাজ করেছে সবাই। সব ধর্মের মিলন ঘটেছে মহালয়ার অনুষ্ঠানমালায়। এই সম্প্রীতির বন্ধন যেন অটুট থাকে। কোন সংকীর্ণ চিন্তা এবং ধর্ম দিয়ে যেন এই সম্প্রীতি নষ্ট না হয়। সবাই মিলে সোনার বাংলায় যেন এই সম্প্রীতি বজায় থাকে।
গতকাল শনিবার ভোরের আলো বিচ্ছুরণ ঘটার আগে নগরীর স্বরোডের শ্রীশ্রী রাধাগোবিন্দ নিবাস প্রঙ্গনসহ আশপাশের এলাকা রঙিন হয়ে ওঠে মানুষের সড়ব উপস্থিতিতে। না এটা কোন রঙের খেলা নয়। সনাতন ধর্মের বিশেষ অনুষ্ঠান হলেও অন্য ধর্মের মানুষ এসে যোগ দিয়েছে বর্ণিল সাজে। সেই বর্ণিল পোষাক উৎসবে নতুন মাত্রা এনে দিয়েছে। দেবি বন্দনার আহ্বানের সঙ্গে একাকার হয়ে নৃত্য এবং সঙ্গীত পরিবেশন করেছে সব ধর্মের মানুষ। এটা নিঃসন্দেহে সম্প্রীতির মেলবন্ধন। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশের এমনই রূপবৈচিত্র্য হবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কখনো কখনো ধর্মের নামে এবং স্থূল চিন্তার কারণে আমাদের এই সম্প্রীতির গায়ে কালো ক্ষত সৃষ্টি হয়। সৃষ্টি হয় বললে ভুল হবে, সৃষ্টি করা হয়। সেই তিলক কোন কিছু দিয়ে মোছানো সম্ভব হয় না।
আমাদের লাল-সবুজের পতাকা কেবল কোন একটি ধর্মের মানুষের অর্জন নয়। ৫৬ হাজার বর্গমাইলের এই মানচিত্রের সঙ্গে মিশে আছে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, জৈনসহ সকল ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর কষ্ট, শ্রম, ঘাম আর রক্ত। তাই লাল-সবুজের পতাকা একক কারো নয়, এটা আমাদের অর্জন। এতবড় অর্জনকে যেন কোনভাবেই ধর্ম দিয়ে ভাগ করা না হয়।
আমরা বলতে চাই, ধর্ম থাকতেই হবে। কারণ ধর্ম মানুষকে পরিশিলীত করে। ধর্মের অনুশাসন মানুষকে সত্যিকার মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে সহযোগিতা দেয়। প্রত্যেক মানুষ তার অন্তরে ধর্মকে লালন করুক। কিন্তু কোনভাবেই যেন সেই ধর্ম অন্য ধর্মের মানুষকে ছোট না করে। আঘাত না করে, কষ্ট না দেয়। অন্তরের ভেতর যে ধর্মের বীজ বপন করা আছে এক মুহূর্তে সেটার পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। তাই যার যার ধর্ম পালনের স্বাধীনতা থাকা দরকার। একই সঙ্গে এক ধর্মের আয়োজনে অন্য ধর্মের মানুষের সহযোগিতাও প্রয়োজন। সব ধর্মের মানুষ সহযোগী হয়ে পাশে থাকলে অনেক অসম্ভবকে সম্ভব করা যায়। যার প্রমাণ আমাদের বাংলা ভাষা, স্বাধীনতা, আমাদের মুক্তিযুদ্ধসহ সকল বড় বড় অর্জন। আগে আমদের মানুষ হিসেবে বেড়ে ওঠার সুযোগ করে দিতে হবে। নিকটতম প্রতিবেশীকে একান্ত আপন হিসেবে দেখতে হবে। এর পর যদি প্রয়োজন পড়ে তখন যেন ধর্মের হিসাব করা হয়।
আমরা বলতে চাই, ‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার’ এবং ‘ধর্ম যার যার, রাস্ট্র সবার’ এই মূলমন্ত্র কেবল কথায় নয়, অন্তর দিয়ে বিশ্বাস করতে হবে। বরিশালের যুবকরা মহালয়ার মতো একটি আযোজন করে যে নিদর্শন স্থাপন করেছে, সেটা যেন সব আয়োজনে থাকে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বন্ধন এভাবে দৃঢ় হলে কোন অশুভ শক্তি আমাদের বন্ধন ছিন্ন করতে পারবে না। আমাদের ভেতরে এই সম্প্রীতি বজায় থাকুক এটাই প্রত্যাশা।