এইচ বি রিতার গুচ্ছ কবিতা

দেহান্তকাল
আমার দেহান্তকালে,
কাকে দিয়ে যাব মনের এই ক্ষুদ্র জমিন
ভিটে মাটি, কাঁসার বাসন, ভাঙা চায়ের কাপ
মধ্যরাতে কান্নায় জেগে উঠা বালুচর
তেরটি বছর ধরে হিজিবিজি আঁকা নিষিদ্ধ;
গোপন ডায়েরী
বাঁশের কঞ্চিতে জমানো গুটি কয়েক আধুলি,
ভাঁজে ভাঁজে ক্ষয়ে যাওয়া পুরোনো একুশটি চিঠি..
কাকে দিয়ে যাবো এই চোখের বিশাল জলরাশি
নীলে নীলে বেদনার ভারে নুইয়ে পরা আকাশ
কে নেবে আমার আলসে সকাল, বিষন্ণ দুপুর
ছন্নছাড়া সাদামাটা বিকেল?
কাকে দিয়ে যাবো আমার বৃষ্টির রাত,
মেঘলা হাওয়া
একাকী প্রহর, পথের ধুলো
কে নেবে আমার ভাঙা সংসার
মাটির তলে সযত্নে বেড়ে উঠা শিকড় বাকড়
সঞ্চিত ভালবাসায় ত্যাগের বিনিময়ে কিছু প্রাপ্তি
অসময়ের উষ্ণ চাওয়া, ক্লান্তির ছাপ
প্রেম জাগানিয়া উত্তাপে বিষাদের জ্বালা
কে নেবে এতসব?
কে নিবে সবুজের উপর মুখ থুবড়ে পরে থাকা,
মৃত ঘাসফড়িংটির দায়ভার
স্বপ্নের ধূসরতায় বিবর্ণ প্রজাপতি
মৃত হরিণীর মত শান্ত মৃয়মান চোখ দুটি!
কাকে দিয়ে যাবো এতসব?
আমার দেহান্তকালে; কে নেবে এতসব?
এক পশলা বৃষ্টি
গোঁজামিল দিয়ে এলোপাথাড়ি চলছে সংসার
সব আছে! কিছুই নেই
থেমে যাওয়া নিঃশ্বাস বিচলতায় গতি
বাড়ে-কমে
সম্মোহন কাটিয়ে শীতল গঙ্গাস্রোতে,
ঢল নামে।
নির্জীব দিগন্ত রেখায় একটি পাখির উড়াউড়ি
তুমি আমার-আমি তোমার
ভাবনার ছেদ কাটিয়ে এক পশলা বৃষ্টি,
সবুজের গায়ে
গোঁজামিলে চলে শিশিরের কান্না তখনো,
নিজ দায়ে।
সরল পথে হোঁচট খেয়ে জীবন থেমে নেই
চলছে অবিরত! স্বস্তি নেই
মুখ থুবড়ে পরা বিষাদ জেগে উঠে ভোরে
গোঁজামিলে আরেকটি সমঝোতা তৈরী হয়,
তোমায় নিয়ে।
বললে ভালবাসি
বললে, ভালবাসি। ভালবাসি।
বললাম, মিথ্যে বলার কৌশল রপ্ত করেছো বেশ
তুমি বললে,
সত্যি সত্যি তিন সত্যি!
মুখখানা আবারো পরখ করে নিলাম
নাহ! ছিটেফোঁটা খুঁত নেই কোথাও
একেবারে স্বচ্ছ কোয়ার্টজ্ এর মত।
অবশেষে,
ভাবনায় পরে গেলাম
ফিবোনাচ্চি সিকোয়েন্স ধরতে না পারা মানুষ
কি করে বুঝে স্বচ্ছ-দক্ষতার ব্যবধান?
আবেগ-অনুভূতির কোন প্রস্থান নেই
স্থায়ীত্ব নেই
অনেকটা চলন্ত গাড়ির মত,
পা চাপলেই যাত্রী নিতে থেমে যায়
আবার ফেলেও যায়
উদ্দেশ্য ব্যবসা; সেবা নয়।
দিব্য সৌন্দর্যের দর্পণ স্বরুপ প্রেমকে দেখা রুমি
পরিবর্তনের গুপ্তশক্তিতে প্রেমকে নিশ্চয়ই
ঈশ্বরের সাথে সংযোগ করেছেন, মনুষ্যকুলে নয়
ভাবনায় পরে গেলাম আবারো
কবিরাও কি তবে ভুল করেন?