এসডিজি গ্লোবাল ফেস্ট , টেকসই উন্নয়নে তরুনরাই ভূমিকা রাখছে

এসডিজি গ্লোবাল ফেস্ট , টেকসই উন্নয়নে তরুনরাই ভূমিকা রাখছে
বিশ্বের সকল তরুণদের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (সাসটেইনেবল ডেবেলপমেন্ট গোল) এসডিজি বিষয়ে সচেতনটা জারুরী। কয়েকবছর আগে আমরা এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা বাংলাদেশ সফলতার অর্জন করছে। সেখানে বলা হয়েছে তরুণদের উদ্দীপনা ছিল বলেই এ অর্জন সম্ভব হয়েছে। বাংলাদেশের সকল তরুণদের সঠিক অংশগ্রহণের মাধ্যমেই আমরা এসডিজি লক্ষমাত্রা ২০৩০ বাস্তবায়ন করতে পারবো। এই বারের এসডিজি ফেস্টে স্বেচ্ছাসেবক হয়ে অংশগ্রহণ করে আমার এই বিশ্বাস জন্মেছে। এবারের এসডিজি গ্লোবাল ফেস্টে সারা বিশ্ব থেকে প্রায় ৭০০০ হাজার আবেদন জমা পরেছিলো। সেখান থেকে মোট ১২০ জন স্বেচ্ছাসেবীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। গত ২ মে থেকে ৪ মে আয়োজিত এ বছরের অনুষ্ঠানে ১৫০ টির অধিক দেশ থেকে দেড় হাজারের বেশি স্বেচ্ছাসেবকসহ উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেছে। সারা বিশ্বের উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ, পরিবর্তনকারী এবং সৃষ্টিশীলেরা জার্মানীর বন শহরে একত্রিত হয়েছিলো এসডিজির কার্যক্রমকে প্রভাবিত করতে। নতুন আইডিয়া যাচাই ও ত্বরান্বিত করতে। সেই সঙ্গে এসডিজি কার্যক্রমের জোটকে আরো শক্তিশালী করতে। সেখানে এমন একটি পরিবেশ তৈরি হয়েছিলো যাতে দৃষ্টিভঙ্গী এবং রুচি ভাগ করে নেওয়া যায়। যেন নতুন ধারণাকে ত্বরান্বিত করা যায় এবং যেখানে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা ও গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণের জন্য এসডিজি হয়ে ওঠে গুরুত্ববহ। প্রথমদিন উদ্বোধনী আয়োজনে মডারেটরের হাস্য-কৌতুকপূর্ণ উপস্থাপনা সকলকে সহজ করে ফেলেছিল। আয়োজনের প্রধান কর্তাবৃন্দ ছাড়া কারো জন্যই বিশেষ কোন স্থান বরাদ্দ ছিল না। আন্তরিকতার সঙ্গে তথ্য-প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার উজ্জীবিত রেখেছে প্রত্যেক অংশগ্রহণকারীকে। প্রধান বৃহৎ হলটিতে বৈশ্বিক সম্প্রদায় একত্রিত হয়ে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নে অ্যাডভোকেসির প্রয়োজনীয়তা, নাগরিক সম্পৃক্ততা, আচরণের পরিবর্তন এবং রাজনৈতিক ইচ্ছাশক্তির উপর গুরুত্ব দিয়েছেন। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাকে ত্বরান্বিত করতে এবং সেটার পুনরাবৃত্তির জন্য ছিল সকলের প্রতিশ্রুতি। জার্মানী রাস্ট্রের সংসদ সচিব মারিয়া ফ্লাক্সবার্থ কথা বলেছেন এসডিজির এজেন্ডা ২০৩০ বাস্তবায়নের জন্য নতুন রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতির প্রয়োজনীয়তা নিয়ে। তিনি বলেন, ‘এটা একটা দুর্দান্ত সময়। পৃথিবী জুড়ে বহুপাক্ষিকতা চাপের মুখে রয়েছে।’ জার্মান ফেডারেল ফরেন অফিস-এর মানবাধিকার পরিচালক তানিয়া ফ্রেইন ভন উসলার একমত পোষণ করেন এবং বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের মুখে আন্তর্জাতিক সমন্বয় এবং আশাদীপ্ত আন্ত:রাষ্ট্র সমন্বয়ের প্রয়োজনিয়তাকে তুলে ধরে সকলকে বাস্তবায়নের পথে একত্রে হাঁটার আহ্বান জানান। সৃষ্টিশীল, কর্মী, যুব নেতৃত্ব এবং ব্যবসায়ী ও সরকার বিশেষজ্ঞদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘আপনার এজেন্ডা হোক ২০৩০ এর জন্য এক সহজাত শক্তি।’ এক অংশে বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন সংগঠন বা উদ্যোক্তার সামাজিক উদ্ভাবনের প্রদর্শন করা হয়, যেগুলো নিজ নিজ দেশে এখনো চলমান এবং অন্যরা চাইলেও তা ব্যবহার করতে পারে। এর প্রত্যেকটিই টেকসই উন্নয়নের কোন না কোন লক্ষ্য সম্পর্কিত। এ সকল উদ্ভাবনে যার যার দেশের মানুষের সহযোগিতা এবং সমর্থনের গল্প শোনালেন সবাই মুখে এবং জায়ান্ট স্ক্রীনে। উদ্ভাবনী প্রকল্পগুলোর মাঝে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- একটি সৃষ্টিশীল এবং অংশগ্রহণমূলক শিল্পকে ব্যবহার করে মালাওই এর যৌন এবং প্রজনন স্বাস্থ্য এবং এইচআইভিকে প্রতিহত করতে কাজ করা; লেবাননের কুখ্যাত ধর্ষণ-বিবাহ আইন রদ করতে একটি প্রতিবাদ যেভাবে জাতীয় প্রচারণা হয়; যৌন নির্যাতনের বিরুদ্ধে ইন্ডিয়ার মুম্বাই এ একটি ক্রাউডম্যাপ; এসডিজি বিষয়ে তথ্য প্রচারের অভিনব ভাবনা। বৃহত্তর পরিসর এবং ছোট ছোট সমাবেশে উদ্ভাবনী আইডিয়া শেয়ারিং-এর সুযোগ করে দেয়া ছিলো এই আয়োজনের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য। ‘আমাদের প্রয়োজন অংশীদারিত্ব- পাবলিক এবং প্রাইভেট, প্রফিট এবং নন-প্রফিটের জন্য আমাদের দরকার সরকারী এবং স্বায়ত্বশাসিত সংগঠন। এসডিজিকে জাতীয়করণ করতে আপনাদের স্থানীয় সংবিধানে এই এজেন্ডা নিতে হবে। একই সঙ্গে এটাকে রূপান্তরিত করতে হবে জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনায়। পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজন গুরুত্বারোপ ও সংকল্প।’ বলছিলেন ইউএন ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের ইউরোপের রিজিওনাল ব্যুরোর সহকারী সাধারণ সম্পাদক ও পরিচালক মির্জানা স্পলজারিক এগার। মাল্টি-স্টেকহোল্ডারদের অন্তর্দৃষ্টি নিয়ে বলা কথায় লিডাররা গুরুত্ব দেয় অ্যাডভোকেসি এবং নাগরিক সম্পৃক্তায়। টেকসই এবং নাগরিক ক্রিয়াকে সম্পর্কযুক্ত করে আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংস্থার সাবেক ডিরেক্টর জেনারেল জুয়ান সোমাভিয়া বলেন, ‘জনগণের সম্পৃক্ততা ছাড়া এসডিজির বাস্তবায়ন সম্পূর্ণ অসম্ভব।’ অন্যান্য বক্তাদের কথায়ও ছিল একই সুর। ‘আমরা হলাম পরিবর্তনের বাহক এবং আমরা যদি সেটা বিশ্বাস না করি, তাহলে আমাদের জীবনে কিছুই ঘটবে না।’ বলেন ম্যাক্সিকান কংগ্রেস ওমেন এবং ইন্টার-পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের সভাপতি গ্যাব্রিয়েলা কুয়েভাস ব্যারন। সে তার বক্তব্য অব্যহত রাখে এই বলে যে, এই পরিবর্তন শুরু হয় সরকারের সাথে, হাতে হাতে কাজ করে, হৃদয় থেকে হৃদয়ে, সেইসকল মানুষদের সাথে যাদের তারা উপস্থাপন করে। ‘আমরা যদি সত্যিই এই এগারো বছরে পৃথিবীকে বদলাতে চাই, এটা অসম্ভব মনে হবে। কিন্তু অবশ্যই এটা সম্ভব এবং সেজন্যই আমরা এখানে।’ এজেন্ডা ২০৩০ এর স্পেন সরকারের হাই কমিশনার ক্রিস্টিনা গ্যালাচ নেতৃত্বকে তিনটি মূল শব্দের একটি হিসেবে চিহ্নিত করেন। তিনি তার আলোচনায় তুলে ধরেন কিভাবে স্প্যানিশ সরকার এই এজেন্ডাকে একটি কাঠামো হিসেবে ব্যবহার করেছে রাজনৈতিক কর্মকান্ডে ‘উচ্চ নেতৃত্ব প্রয়োজন’ কিন্তু সেই সাথে প্রতিষ্ঠান, এবং পৃষ্ঠপোষকতারও দরকার রয়েছে। তিনি পরামর্শ দেন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা, যুব সংস্থা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং শিল্পীদের সাথে সংযুক্তি গড়ে তোলার। তিনি মনে করেন, ‘নাগরিক সমাজ হলো চাবিকাঠি।’ হ্যাশট্যাগ আমাদের গল্প-এর সহ উদ্যোক্তা এবং কর্মী ইউসুফ ওমার যুবদের তাদের উদ্ভাবনগুলোকে ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে অনলাইনে ছড়িয়ে দিতে আাহ্বান জানান। পরিবর্তনশীল, প্রভাবপূর্ণ এবং উদ্ভাবনী প্রক্রিয়ায় টেকসই উন্নয়ন আন্দোলনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে- এরকম বিভিন্ন চলমান উদ্ভাবনীকে পদক প্রদানের মাধ্যমে স্বীকৃতি দেওয়া হয় শেষ দিনে। বাংলাদেশের পক্ষথেকে আরো দুই জন পর্যবেক্ষক হিসাবে অংশগ্রহণ করেছেন। তারা হচ্ছেন ডেমোক্রেসি ওয়াচ-এর রিজোনাল ম্যানেজার দিপু হাফিজুর রহমান, হিউম্যানসেফ-এর চেয়ারম্যান এম এ মুকিত। লেখক: সজীব খন্দকার, বাংলাদেশ ইয়ুথ চেঞ্জমেকার আহবায়ক ও প্রতিষ্ঠাতা এবং জার্মানি ইউনিসেফ এর একজন তরুণ স্বেচ্ছাসেবী।