ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া কবি হেনরী স্বপনকে জামিনে মুক্তি দিয়েছে আদালত। আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত তিনি অন্তবর্তীকালীন জামিন পেয়েছেন হেনরী স্বপন।
গতকাল বৃহষ্পতিবার বেলা সোয়া ১১টায় বরিশাল মেট্রোপলিটন আদালতের বিচারিক হাকিম শামীম আহম্মেদ অন্তবর্তীকালীন জামিন দেন।
গতকাল কবি হেনরী স্বপনের পক্ষে আইনজীবীর মাধ্যমে জামিন আদেন করলে আদালতের বিচারক তার জামিন মঞ্জুর করেন। একই সময় মামলার বাদি ক্যাথলিক চার্চের ফাদার লরেন্স ল্যাকা ডালিয়ে গোমেজ জামিনের পক্ষে লিখিত অনাপত্তিপত্র দাখিল করেন।
গত ১৩ মে মঙ্গলবার দুপুর সোয়া দুইটার দিকে নগরের চৌমাথা এলাকায় কবির বাসভবন থেকে বরিশাল কোতয়ালী মডেল থানা পুলিশ কবি হেনরী স্বপনকে গ্রেপ্তার করে।
ওইদিন বেলা ১১টার দিকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কবি হেনরী স্বপনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন ক্যাথলিক চার্চের ফাদার লরেন্স ল্যাকা ডালিয়ে গোমেজ।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ওই মামলায় ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার বিষয় ও উল্লে¬খ রয়েছে। সাদা পোশাকধারীরা হেনরী স্বপনকে তার বাসা থেকে তুলে নিয়ে আসে। যা সকলের মাঝে আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে।
হেনরী স্বপনকে গ্রেপ্তার নিয়েও লুকোচুরি করেছে পুলিশ। পুলিশ তাদের হেফাজতে হেনরী স্বপনকে রাখার কথা বললেও থানায় গিয়ে দেখা মেলেনি তার। পরে আদালতে তাকে পাঠানো হলেও সেখানে থানা থেকে মামলার কাগজ পাঠানো হয়নি। অপরদিকে কবি হেনরী স্বপন গ্রেপ্তারের পরপরই এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন সাংস্কৃতিক অঙ্গনসহ সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ।
বরিশাল কোতয়ালী মডেল থানা পুলিশ জানিয়েছিল, বরিশাল ক্যাথলিক চার্চের ফাদার লাকা বালিয়েজ গোমেজ কবি হেনরী স্বপনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেছেন। ওই মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পরে তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
হেনরী স্বপন জানিয়েছেন, শ্রীলংকার হামলার ঘটনার পর গোটা দেশ যখন শোকে বিহ্বল, তখন বরিশাল চার্চের এক ফাদার আনন্দ অনুষ্ঠন করছিলেন। এই বিষয় নিয়ে আমি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইচবুকে একটি পোস্ট দেই। একই সঙ্গে পত্রিকায় মন্তব্য প্রতিবেদন লেখি। এতে ক্ষিপ্ত হন চার্চের ফাদারসহ খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের একাংশ। নানাভাবে তারা আমাকে স্বপনকে হুমকী-ধামকি দিতে থকেন। গত ১১ মে আনুমানিক রাত আড়াইটার দিকে তার বাসার জানালায় দাঁড়িয়ে অজ্ঞাত দুই ব্যক্তি অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। পাশাপাশি স্বগোত্রীয় (খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী) লোকদের বিরুদ্ধে লেখালেখি বন্ধের নির্দেশ দেয়। অন্যথায় অঙ্গহানী ও প্রাণনাশের হুমকি দেয় তারা। একই সঙ্গে তাকে বরিশাল ত্যাগেরও হুমকী দেওয়া হয়। এব্যাপারে নিরাপত্তা চেয়ে পত্রিকায় নিবন্ধ প্রকাশ করা হয়েছে। তারপরদিন পুলিশ আমকে গ্রেপ্তার করে।
উল্লেখ্য, গত ২১ এপ্রিল শ্রীলংকায় জঙ্গী হামলার দিন বরিশাল ক্যাথলিক চার্চের ফাদার চর্চে অনুষ্ঠানে মত্ত ছিলেন। কবি হেনরী স্বপন ওই ঘটনার ওপর ভিত্তি করে গত ২৩ এপ্রিল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি স্ট্যাটাস দেন ‘রোম যখন পুড়ছে বিশপ সুব্রত তখন বাঁশি বাজাচ্ছে’ এ ছাড়া একই শিরোনামে আঞ্চলিক দৈনিকে মন্তব্য প্রতিবেদন লেখেন। এরপরই ক্ষুব্ধ হন ফাদারসহ ক্যাথলিক চার্চ অনুসারীদের একাংশ।