করোনা সচেতনতায় দুর্গাপূজায় সম্মিলন ঘটুক

করোনা গোটা বিশ্বকে নাড়িয়ে দিয়েছে। পৃথিবীকে কঠিন স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ফেলেছে করোনা। বৈশ্যিক মহামারি করোনা বাঙালির উৎসবগুলোও ম্লান করে দিয়েছে। বাংলা নববর্ষ, মুসলিম ধর্মের সর্ববৃহত উৎসব দুই ঈদ পালন হয়েছে করোনা সচেতনার মধ্যে। এরই ধারাবাহিকতায় সনাতন ধর্মেরন প্রধান উৎসব দুর্গা পূজা এসেছে। ধর্মীয় ভাবগাম্ভির্যের মধ্য দিয়ে পালিত হবে দুর্গা উৎসব। আমরা মনে করি দুর্গাপূজা কেবল সনাতন ধর্মের অংশ নয়। গোটা জাতি এই উৎসবের সঙ্গে যুক্ত থাকবে। ‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার’ এই শ্লোগানে পালিত হবে এটা নিশ্চিত করে বলতে পারি। তবে এবার পূজায় করোনা সচেতনতায় সবার সম্মিলন ঘটবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনেই সবাই সনাতন ধর্মের এই উৎসব পালন করুক।
‘অশুভ শক্তির বিনাশ এবং সত্য ও সুন্দরের আরাধনা শারদীয় দুর্গোৎসবের প্রধান বৈশিষ্ট্য। দুর্গাপূজা শুধু হিন্দু সম্প্রদায়ের উৎসবই নয়, এটি আজ পুরো মানব জাতির কল্যাণে সার্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে।’ শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে দেশের হিন্দু ধর্মাবলম্বী সকল নাগরিককে আন্তরিক শুভেচ্ছা। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বাংলাদেশ সত্যিকার সোনার বাংলায় রূপ নেবে এটা আমাদের দৃঢ় বিশ্বস।
‘বাংলাদেশ ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের নিরাপদ আবাসভূমি। দেশের প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যাশা ‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার’- এ মন্ত্রে উজ্জীবীত হয়ে আমরা সবাই এক সঙ্গে উৎসব পালন করব।’ তিনি বলেছেন, ‘সকলে মিলে যুদ্ধ করে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছি। তাই এই দেশ আমাদের সকলের। আমাদের সংবিধানে সকল ধর্ম ও বর্ণের মানুষের সমান অধিকার সুনিশ্চিত করা হয়েছে। বাঙালির হাজার বছরের ঐতিহ্য সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বন্ধন অটুট রেখে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলবো।’ আমরা প্রধানমন্ত্রীর এই বাণীর প্রতি বিশ^াস এবং আস্থা রাখতে চাই।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উচ্চারিত বাণী ‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার’ সেটা তো অনেকাংশে সবার হয়ে উঠতে পারছে না। আমরা লক্ষ্য করছি সরকারি দলের অনেক নেতা ‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার’ এবং ‘ধর্ম যার যার, রাস্ট্র সবার’ এই বাণী রাজনীতির মঞ্চে বলেই দয়িত্ব শেষ করেন। এর বাইরে সরকারি অনেক আমলাদের মুখেও এই বাণী ঘুরেফিরে শোনা যায়। কিন্তু আমরা কি সব ধর্মের মানুষ মিলে উৎসব পালন করতে পারছি?
শিশু থেকে বড় হতে হতে শিখেছি নিজের ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা রাখো। একই সঙ্গে অন্যের ধর্মকে ঘৃণা করো না। ধর্মীয় মূল্যবোধ নিয়ে বেড়ে ওঠো। কিন্তু কোন ধর্মকে খাটো করে নয়। তুমি তোমার ধর্ম পালন করো। অন্যকে তার ধর্ম পালন করতে দাও। বড় হয়ে শিখেছি বাংলাদেশ হচ্ছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। এখানে সব ধর্মের মানুষ একজন অন্যজনের সুখ, দুঃখ, হাসি, কান্নার সঙ্গী। এক ধর্মের মানুষ অন্য ধর্মের মানুষের উৎসব-পার্বনে মিলেমিশে একাকার হয়ে থাকবে। কিন্তু মাঝে মাঝে কিছু ঘটনা আমাদের দীর্ঘদিনের চেনা পরিচিত রূপে কালো তিলক দিয়ে ঢেকে দিতে চায়। সেটা কখনো সাম্প্রদায়িক উস্কানী, ধর্মে ধর্মে বিভেদ সৃষ্টিসহ নানা উদ্যোগ। বাংলাদেশের মানুষ সেগুলো মোকাবেলা করে আবারো সম্প্রীতি অটুট রাখতে চেষ্টা করে চলে। তারপরও কখনো কখনো সরকারের দায়িত্বশীল মন্ত্রণালয় এবং প্রতিষ্ঠানের কর্মকা-ে সম্প্রীতির বাংলাদেশ বিব্রতবোধ করে।
বাংলাদেশে প্রায়শই একটা শ্লোগান জোরেসোরে বলতে শোনা যায়, সেটা হচ্ছে ‘ধর্ম যার যার, রাস্ট্র সবার’ আবার ‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার’। সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী আমলারা কথাগুলো বেশি বেশি বলেন। বাস্তবের সঙ্গে এই কথার মিল খুঁজে পাওয়া অনেক সময়ই কষ্টকর হয়ে পড়ে। অনেক সময় মনে হয় লোক দেখানো বুলি আওরান কর্মকর্তা থেকে শুরু করে রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা। কারণ সব ধর্মের উৎসব সবার জন্য হয়ে ওঠে না। এক ধর্মের উৎসবকে অন্য ধর্মের অনুসারীরা স্বাভাবিকভাবে মেনে নেয় না, নিতে পারে না। তাই উৎসবও সব ধর্মের মানুষের হয়ে ওঠে না। তবে ব্যতিক্রম যে নেই তা কিন্তু নয়। সব ধর্মের কিছু মানুষ আছে যারা ধর্মীয় উৎসবকে সার্বজনীন রূপ দিতে চেষ্টা করেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এর প্রভাব পড়ে না।
যদিও এবারের দুর্গাপূজার প্রেক্ষাপট ভিন্ন। এবছর করোনার সঙ্গে লড়াই করেই শারদীয় দুর্গোৎসব পালন করতে হবে। মন্দিরগুলোতে অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যবস্থা রাখতে হবে। দর্শনার্থীরা যাতে অতিরিক্ত ভীড় না জামায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। করোনা মহামারীর সঙ্গে যুদ্ধ করতে হলে আমাদের সচেতনতা ছাড়া অন্য কোন বিকল্প এখনও নেই। তাই এবারের দুর্গা উৎসব পালন করতে হবে সর্বোচ্চ সতর্কতার মধ্য দিয়ে। করোনা আমাদের ধর্মের বিভেদ ভুলিয়ে দিয়ে এক মোহনায় দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। করোনা থেকে মুক্তির পথ কোন বিশেষ ধর্ম দিয়ে সম্ভব হবে না। সব ধর্মের মেলবন্ধন ঘটিয়ে করোকে পরাজিত করতে হবে।
আসুন শারদীয় দুর্গাপূজা আমাদের যেন সেই মন্ত্রে উজ্জীবীত করে। আমরা সবাই মিলে যেন বিশ্ব ধর্ম,বিশ্ব মানবতার জয়গান গাইতে পারি। তাহলেই বাস্তব রূপ নেবে সম্প্রীতি। তাহলেই ‘ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার’ কিংবা ‘ ধর্ম যার যার, উৎসব সবার’ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে। ‘অশুভ শক্তির বিনাশ এবং সত্য ও সুন্দরের আরাধনা শারদীয় দুর্গোৎসবের প্রধান বৈশিষ্ট্য। দুর্গাপূজা শুধু হিন্দু সম্প্রদায়ের উৎসবই নয়, এটি আজ পুরো মানব জাতির কল্যাণে সার্বজনীন উৎসবে পরিণত হোক। সেই প্রত্যাশা করছি।