করোনায় আমরা যেন মানবিক হই

করোনায় আমরা যেন মানবিক হই

করোনা প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর থেকে গোটা দুনিয়ায় নানা রকম ঘটনা প্রত্যক্ষ করছি। করোনা মানুষের মধ্যে হিংসা, দ্বেষ ও আভিজাত্য দূরে সরিয়ে মানবিক হওয়ার বার্তা নিয়ে এসেছে। হিংসায় উন্মত্ত পৃথিবীকে নির্মল শান্তির আহ্বানের পথে নেবে করোনা। এই দুঃসময় এমন আশার বার্তা নিয়ে দূরে থেকেও অনেকে আত্মার আত্মীয় হচ্ছেন। করোনা রোগীর সেবা, মৃত ব্যক্তির জানাজা, করব দেওয়া এবং দাহ করেও অনেকে অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন। আমাদের পুলিশ যে কোন সময়ের চেয়ে মানবিক হয়ে করোনা মোকাবেলায় সহযোগী হয়ে ২৪ ঘন্টা কাজ করছেন। আছেন ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, জেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনীসহ অনেকে। সবার আহ্বান একটাই করোনায় সবাই যেন মানবিক আচরণ করে। কিন্তু অনেক সময়ই আমাদের অমানবিক আচরণ দেখতে হচ্ছে।

আমরা দেখছি, করোনার সময় নিজের সন্তান বাব-মাকে রাস্তায় ফেলে দিয়েছে। করোনা হয়েছে শুনে খাবার বন্ধ করে দিয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে করোনা হওয়ার কারণে চিকিৎসা করানো হচ্ছে না। অন্যদিকে হাসপাতালে জনবল সংকট প্রকট আকার ধারণ করছে। করোনা রোগীর কাছে না গিয়ে কেবল মৌখিক চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ফলে প্রতিদিন করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। সময় মতো অক্সিজেন, কিংবা আইসিইউ সেবা দিতে না পারার কারণেও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। বরিশালে গত শনিবার সকাল থেকে রোববার সকাল পর্যন্ত ৮জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। সারা দেশে করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিয়ে নানা রকম অভিযোগ শোনা যাচ্ছে। করোনা ওয়ার্ডে রোগীর সঙ্গে মানবিক আচরণের পরিবর্তে অমানবিক আচরণ করা হচ্ছে।

আমরা জানি, করোনায় চিকিৎসক, নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। তারা অনেক ঝুঁকি নিয়েই কাজ করেন। বেশকিছু চিকিৎসক আছেন যারা করোনাকে অনেকটা পাত্তা না দিয়েই রোগীর পাশে থাকছেন। তবে সেই সংখ্যাটা নেহায়তই কম। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যাক্তার রোগীর কাছে যাচ্ছেন না। নার্স কিংবা স্বাস্থ্যকর্মীর মাধ্যমে সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। ফলে সময় মতো অক্সিজেন কিং আইসিইউ সেবা পাচ্ছে না রোগীরা। কেবল অক্সিজেন এবং আইসিইউ সেবা না পাওয়ার কারণে প্রতিদিন মারা যাচ্ছে রোগী। 

এমনও অভিযোগ রয়েছে করোনা ওয়ার্ডে ওয়ার্ড বয় কিংবা স্বাস্থ্যকর্মীদের অর্থের যোগান না দিয়ে অক্সিজেন মেলে না। অন্যদিকে রোগীদের সরিয়ে দিতে পানির লাইন বন্ধ করে দেওয়া, বেসিন কিংবা কমোড নষ্ট করে রাখা হয়েছে। যার ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। করোনা ওয়ার্ডে রোগীরা ভয়ে ও আতংকে মারা যাচ্ছেন। এমন অমানবিক আচরণ কেন হবে। অবশ্যই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। কারা এমন অমানবিক আচরণ করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। একই সঙ্গে চিকিৎসকরা যেন ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রি পড়ে অন্তত রোগীর জন্য আর একটু ঝুঁকি নিয়ে মানবিক হন।
 
নারায়নগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর মাকসুদুল আলম খোন্দকার খোরশেদ নিজস্ব উদ্যোগে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া লাশ দাফন করে পৃথিবীতে অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন। কেবল কি দাফন করা। না। সনাতন ধর্মের অনেকের লাশ দাহ করেও দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। চরম দুঃসময়ে যখন স্বজনরা লাশ ফেলে পালাচ্ছিল তখন একের পর এক লাশ দাফন করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন খোরশেদ। নিজের স্ত্রী সন্তানদের দূরে সরিয়ে দিয়ে মানব সেবায় ব্রতি হয়েছেন তিনি। মানুষের পাশে থেকে তিনি সবকিছু ছাড়িয়ে উর্ধ্বে উঠে গেছেন। আমরা হয়তো খোরশেদের মতো হতে পারবো না। কিন্তু করোনার সময় কি আর একটু মানবিক আচরণ করতে পারবো না? অবশ্যই পারবো। 

করোনার সময় আরো বেশি মানবিক হয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াই। সামাজিক দূরত্বের নামে মানুষ থেকে বিচ্ছিন্ন হবার সুযোগ নাই। শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই আমাদের মানুষের পাশে সহযোগী হতে হবে। সেইজন্যই আমাদের করোনা সময়ে আরও একটু মানবিক দওয়া দরকার।

আসুন, ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশ, প্রশাসন, গণমাধ্যমসহ সাধারণ নাগরিকরা এই দুঃসময়ে আরো একটু মানবিক আচরণ করি। সমন্বিতভাবে করোনা মোকাবেলায় কাজ করে এই মহামারী থেকে নিজে, পরিবার, দেশ এবং পৃথিবীকে রক্ষা করি।