করোনায় মৃত ও আক্রান্তের সংখ্যা সরকারি হিসাবের ‘৪০ গুন’বেশি

করোনায় মৃত ও আক্রান্তের সংখ্যা সরকারি হিসাবের ‘৪০ গুন’বেশি

করোনায় মৃত ও আক্রান্তের সংখ্যা সরকারি হিসাবের চেয়ে ‘৪০ গুণ’ বেশি বলে দাবি করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

‘জনস্বাস্থ্য বিশেজ্ঞদের’ উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেছেন, ‘করোনায় আক্রান্ত হয়ে সরকারি হিসাবে এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৩৪৯ জনের, আক্রান্ত ২৩ হাজার ৮৭০ জন। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, এ সংখ্যা আরো ৪০ গুন বেশি হবে। গণমাধ্যমের তথ্য মতে করোনা উপসর্গে এ পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করেছে প্রায় ১১০০ জন।’

মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আয়োজিত ‘জাতীয় করোনা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সেলের’ সংবাদ সম্মেলনে  বিএনপির মহাসচিব এসব তথ্য তুলে ধরেন। 

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘প্রায় সোয়া দুই মাস আগে বাংলাদেশে করোনা রোগী শনাক্তের পর সরকারের সমন্বয়হীনতা ও উদাসিনতায় এখন প্রতিদিনই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা।’

মির্জা ফখরুল জানান, করোনায় এ পর্যন্ত ৭৮০ চিকিৎসক, ৬০০ নার্স ও ৫৫০ স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে পাঁচজন মৃত্যুবরণ করেছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার  ২ শ’র অধিক, অন্যান্য বাহিনীর আরো ছয়শতাধিক সদস্য আক্রান্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন প্রায় ১৫ জন। তিনি জানান, গণমাধ্যমকর্মী আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ১৩৫ জন। তিনজন মৃত্যুবরণ করেছেন। প্রশাসনেরও বেশ কিছু সদস্য আক্রান্ত হয়েছেন, মৃত্যুবরণ করেছেন। 

করোনায় মৃত্যুবরণকারীদের প্রতি গভীর শোক ও তাদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন বিএনপির মহাসচিব।

বিএনপি মহাসচিব অভিযোগ করেন, মানুষের জীবন বাঁচাতে ব্যর্থ হচ্ছে সরকার। যখন চীনে করোনা মহামারি শুরু হলো তখন সরকার যথাযথ পদক্ষেপ নেয়নি। তখন তারা অন্য একটি অনুষ্ঠান নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। প্রথম থেকে তারা যথাযথ পদক্ষেপ নিলে  আজ  লাশের সারি দীর্ঘ হতো না। জনগণের কাছে তাদের জবাবদিহিতা না থাকার কারণে সরকার এমন আচরণ করেছে। মানুষকে বাঁচাতে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সরকার ঘোষিত ৪২টি টেস্ট সেন্টারের বেশ কয়েকটি সেন্টার কার্যকর নয়। যেসব সেন্টারে টেস্ট হচ্ছে তাও অপর্যাপ্ত। মানুষ লাইন ধরে ফিরে যাচ্ছেন টেস্ট না করে। আপনারা গণমাধ্যমে দেখেছেন বিএসএমএমইউ হাসপাতালের সামনের সড়কে কী লম্বা লাইন। আগের রাতে লাইন ধরে অসুস্থ রোগীরা কীভাবে শুয়ে আছেন, বসে আছেন। তারপরও টেস্টের সিরিয়াল পাচ্ছেন না। অন্যান্য হাসপাতালগুলোতেও একই অবস্থা।’

তিনি বলেন,  ‘যে পরিমাণ টেস্ট হচ্ছে তাও আবার এখন পর্যন্ত দিনে ১০ হাজারে ওঠেনি। এর মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা ১৬ শতাংশ উঠেছে। যদি বেশি টেস্ট হতো তাহলে আক্রান্তের সংখ্যা আরো অনেক বেশি বেড়ে যেত। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা বারবার বলেছে— টেস্ট টেস্ট টেস্ট। টেস্টের কোনো বিকল্প নেই। যত বেশি টেস্ট করা হবে, তত বেশি সংক্রমিত জনগোষ্ঠীকে বাঁচানো সম্ভব হবে।’

লকডাউন শিথিল করে সরকার দেশকে ‘ভয়ঙ্কর বিপজ্জনক’ অবস্থার দিকে নিয়ে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন ফখরুল। তিনি বলেন, ‘ডিএমপি থেকে ঘোষণা দেওয়া হয় যে, দোকান খুলে দেওয়া হলো, রেস্টুরেন্ট খুলে দেওয়া হলো। এটা সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং এর সঙ্গে। যে কনসেপ্ট যে চিন্তা, সেটার সঙ্গে এই দোকান খুলে দেওয়াটা সাংঘাতিকভাবে একেবারে সাংঘর্ষিক। গতকাল (সোমবার) সংবাদপত্রে এসেছে— পুরনো ঢাকায় কীসের সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং? হাজার-লাখো মানুষ সব রাস্তায় নেমে গেছে। আমাদের তো জানার কথা যে, এটা হবে।’

করোনায় মৃত্যুর দায় সরকারকে নিতে হবে দাবি করে ফখরুল বলেন, ‘এভাবে চলতে থাকলে করোনা মোকাবিলা দূরে থাক, সারাদেশ ভয়াবহ পরিণতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এই মুহূর্তে লকডাউন শিথিল ও যথাযথ তদারকি না করে দিয়ে ভয়ঙ্কর বিপজ্জনক অবস্থায় ফেলে দিয়েছে। দাম্ভিকতা ছাড়া তাদের আর কিছুই নেই। প্রতিটি ক্ষেত্রে অদূরদর্শিতা, সমন্বয়হীনতা, উদাসীনতা ও একগুয়েমি মনোভাব প্রকাশ পেয়েছে।’

বিএনপি মহাসচিব অভিযোগ করেন, যন্ত্রপাতি ক্রয়ের নামে কীভাবে সরকারি টাকা লুট হয়েছে। সরকারি হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ ও ভেন্টিলেটর ব্যবস্থা অপ্রতুল। দেশের ৯০ ভাগ হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেনের ব্যবস্থাও নেই। এমনকি হাসপাতালের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ব্যবস্থাও গড়ে তোলা হয়নি।’

বিরোধী দল ও মতের প্রতি চরম অবজ্ঞার কারণে সরকার সর্বদলীয় উদ্যোগ নেয়নি অভিযোগ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘বিশেষজ্ঞদের ডেকে পরামর্শ নিতে পারত। নেয়নি। চিকিৎসা ক্ষেত্রে টেকনিক্যাল এক্সপার্টদের সম্পৃক্ত না করে দলীয়করণ করা হচ্ছে। আজ  যদি সর্বদলীয় ঐক্য হতো, তাহলে ত্রাণের নামে দেশজুড়ে যে লুটপাট হচ্ছে তা হতো না।’

তিনি বলেন, ‘গণমাধ্যমে দেখলাম, ৫০ লাখ কর্মহীন লোকের মাঝে ১২ শ ৫৭ কোটি টাকা বিতরণ করছে সরকার। মোবাইলে বিকাশের মাধ্যমে, ব্যাংকের মাধ্যমে সে টাকা বিতরণ হবে। সেখানেও নগদ টাকা লুট হচ্ছে। একজনের মোবাইল নম্বরে ৩০৬ জনের নাম। অর্থাৎ ৩০৬ জনের টাকা একজন লুট করবে।’

বিএনপির মহাসচিব জানান, তার দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনায় এখন পর্যন্ত সারাদেশে ৩১ লাখ ২৭ হাজার ৬৯৩ পরিবারের মাঝে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেছে বিএনপি। এই ত্রাণ বিতরণ কর্মসূচি সারাদেশে অব্যাহত আছে। 

তিনি বলেন, ‘ড্যাব ও জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন যৌথভাবে প্রায় ৭৫টি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে ইমারজেন্সি বিভাগে প্রায় ২ হাজার পূর্ণাঙ্গ পিপিই সরবরাহ করেছে। সেই সঙ্গে অনলাইনের মাধ্যমে ড্যাব সদস্যরা দেশের সাধারণ মানুষের চিকিৎসা প্রদান করছেন।’ ফখরুল অভিযোগ করেন, করোনার এই ভয়াবহ দুর্যোগেও সরকারের  নিপীড়ন থেমে নেই।