কর্মমূখি শিক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ-ইউসেপ বাংলাদেশ আলোচনা সভায় বক্তারা

কর্মমূখি শিক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ-ইউসেপ বাংলাদেশ আলোচনা সভায় বক্তারা

ইউসেপ বাংলাদেশ বরিশাল শাখার আয়োজনে অনুষ্ঠিত শোভন কর্মদিবসের আলোচনায় বক্তারা কর্মমূখি শিক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। ‘আন্তর্জাতিক শোভন কর্মদিবস (ডিসেন্ট ইমপ্লয়মেন্ট ডে) উপলক্ষে ওই আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। 

বক্তারা বলেন, কর্মস্থল হতে হবে কর্মীর জন্য আদর্শস্থান। কাজের নিশ্চয়তার সঙ্গে সঙ্গে কর্মীর বেতন-কাঠামোর নিশ্চয়তা থকাতে হবে। কর্মক্ষেত্রে কর্মীরা সুরক্ষার সঙ্গে নিরাপদ থকাতে পারে সেই ব্যবস্থা করা অত্যন্ত জরুরী। আর এই কাজের নিশ্চয়তার জন্য অবশ্যই কর্মমূখি শিক্ষার প্রতি জোর দিতে হবে। তা না হলে বেকারের সংখ্যা বাড়তেই থাকবে। একই সঙ্গে নারী পুরুষের মধ্যে বেতন বৈষম্য কমিয়ে পরিবারের স্বাচ্ছন্দ ফেরাতেও উদ্যোগ নিতে হবে।

বরিশালে ‘আন্তর্জাতিক শোভন কর্মদিবস (ডিসেন্ট ইমপ্লয়মেন্ট ডে) উপলক্ষে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন বক্তারা।

বৃহষ্পতিবার সকাল ১০টায় নগরীর কাশিপুরে ইউসেপ বাংলাদেশ-এর বরিশাল টেকনিক্যাল স্কুলের সভা কক্ষে ওই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে প্রতি বছর ২৬ লাখ শিক্ষিত জনগোষ্ঠী চাকুরীরর বাজারে প্রবেশ করছে। এদের মধ্যে অনেকেই দক্ষ জনসম্পদ হিসেবে গড়ে ওঠেনি। তাই বাড়ছে বেকারত্ব এবং হতাশা। এই অবস্থা দূর করতে হলে অবশ্যই কর্মমূখি শিক্ষার প্রতি নজর দিতে হবে। আমদের শিক্ষার্থীদের কারিগরি এবং বৃত্তিমূলক শিক্ষায় যাতে এগিয়ে আসে সেজন্য কাজ করতে হবে। লাখ লাখ বেকারের বোঝা কমাতে কর্মমূখি শিক্ষার কোন বিকল্প নেই।ভ কর্মমূখি শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টিরও উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

ইউসেপ খুলনা অঞ্চলের রিজিওনাল ম্যানেজার মোহাম্মদ কামরুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বরিশাল জেলার যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আবদুল কাদের। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দৈনিক ভোরের আলোর সম্পাদক সাইফুর রহমান মিরণ। সভার পূর্বে সকালে শিক্ষার্থী সমাবেশে (অ্যাসেম্বলী) প্রশিক্ষাণার্থীদের শোভন কার্যক্রম সম্পর্কে বিস্তারিত অবহিত করা হয়।
সভায় বক্তারা বলেন, জাতিসংঘ ২০১৫ সালে বিশ্বব্যাপী গৃহীত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) ১৭টি লক্ষ্যের মধ্যে ৮ নম্বর লক্ষ্যে নির্দিষ্টভাবে সবার জন্য শোভনকাজ নিশ্চিত করার কথা উল্লেখ করে। তাই এটি শ্রমিকের কল্যাণে সর্বজন স্বীকৃত একটি আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য মানদন্ড। এ ছাড়াও শোভন কর্মে দক্ষতা উন্নয়ন, নায্য মজুরি, কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা, পরিবারের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, শিশু ও বাধ্যতামূলক শ্রম নিরসন, তথ্যপ্রযুক্তির (আইটি) উন্নতি বিবেচনায় নেওয়া, নারী-পুরুষের বৈষম্য কমানো, স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের সুযোগ, শ্রম অভিবাসনে শ্রমিকের অধিকার রক্ষা নিশ্চিত করার প্রতি গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানান।

বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক উন্নতি করেছে। আয় বেড়েছে, দারিদ্র্য কমেছে, সামাজিক সুরক্ষার আওতা স¤প্রসারিত হয়েছে। তাথাপিও বহু চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ২৬ লাখ মানুষ শ্রমবাজারে প্রবেশ করে। এর মধ্যে শতকরা ৮০ ভাগ এর অধিক কর্মসংস্থানের সুযোগ সাধারণত অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে (ইনফরমাল সেক্টর) সৃষ্টি হয়ে থাকে। এই বিশাল জনশক্তির অধিকাংশই প্রয়োজনীয় দক্ষতা ছাড়া ওই খাতভিত্তিক কাজে নিয়োজিত হয়। তাই এই যুব সমাজ যদি শোভন কাজের পরিবেশ না পায় তাহলে তাদের মধ্যে কর্মবিমূখতা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হতে পারে।

আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারক আমাদের সংবিধান শ্রমিক কৃষক মেহনতি মানুষের মুক্তি ও শ্রমের মর্যাদা নিশ্চিত করাকে রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব নীতি হিসেবে নিশ্চিত করেছে।

সভায় আরো বক্তব্য রাখেন ইউসেপ বরিশালের নিয়োগকর্তা কমিটির সভাপতি ও নারী উদ্যোক্তা নাজমুন নাহার রিনা, মো. আক্কাস আলী খান, ইউসেপ বরিশাল টেকনিক্যাল স্কুলের হেড অব টেকনিক্যাল মো. শাহ আলম ও অন্যান্য কর্মীবৃন্দ।

১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত ইউসেপ বাংলাদেশ দক্ষতা জনশক্তি গঠনের পাশাপাশি তাদের শোভন কর্মসংস্থানে সহযোগিতা করে আসছে। সভায় উপস্থিত কারখানা মালিক ও প্রতিনিধিবৃন্দের স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানে শোভন কর্মপরিবেশ সৃষ্টির আহ্বান জানানো হয়। অনুষ্ঠান শেষে অতিথিবৃন্দ ইউসেপের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিদর্শন করেন।