কাজী রোজী ও কাওসার আহমেদ চৌধুরী স্মরণে গীতিকবি সংঘের শোকসভা

কাজী রোজী ও কাওসার আহমেদ চৌধুরী স্মরণে গীতিকবি সংঘের শোকসভা

স্বল্প-সময়ের ব্যবধানে চলে গেছেন বাংলা গানের দুই খ্যাতিমান গীতিকবি এবং গীতিকবি সংঘের আজীবন সদস্য কাজী রোজী ও কাওসার আহমেদ চৌধুরী।

তাদের বিশেষভাবে স্মরণ করেছে গীতিকবি সংঘ, বাংলাদেশ। শনিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় ভার্চুয়াল শোকসভার আয়োজন করা হয়। এতে তাদের সম্পর্কের স্মৃতিচারণ করেন সংঘের সদস্যরা।


এতে উপস্থিত ছিলেন কাওসার আহমেদ চৌধুরীর ছেলে সাফি আহমেদ চৌধুরী প্রতীক।

সভাপতির বক্তব্যে শহীদ মাহমুদ জঙ্গী বলেন, ‘স্বল্প সময়ের মধ্যে দুজন প্রখ্যাত গীতিকবিকে নিয়ে কথা বলতে হবে, এটা আমাদের চিন্তাতেও ছিল না। দুজনই আমাদের সম্মানিত আজীবন সদস্য ছিলেন। উনাদের কাছ থেকে শিখেছি, তারাই ছিলেন আমাদের গান লেখার অনুপ্রেরণা। শ্রদ্ধাভরে তাদের ও তাদের কর্ম স্মরণ করছি।’

সংঘের সাংগঠনিক সম্পাদক জুলফিকার রাসেল ছিলেন সঞ্চালনার দায়িত্বে। তিনিও প্রয়াত দুজনকে স্মরণ করনে। বলেন, ‘শ্রদ্ধেয় কাজী রোজীর সঙ্গে আমার অতটা মেশার সুযোগ হয়নি; যতটা কাওসার আহমেদ চৌধুরীর সঙ্গে হয়েছে। বলা যায়, তিনি আমার দুঃখ-কষ্টকালের উপদেষ্টা হিসেবে পাশে থেকেছেন। আমাকে গাইডলাইন দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। ২৫ বছর বা তারও আগের কথা এটা। আমার খুব বাজে সময় যাচ্ছিলো। তিনি শুধু গানের জন্য নয়, মানসিকভাবে আমাকে তখন সমর্থন দিয়েছেন। প্রতিদিন সন্ধ্যায় তার বাসায় যেতাম। তিনি আমাকে নিয়ে দুটো ইতিবাচক কথা বলবেন, এটুকু শোনার জন্যই যেতাম। আমার মানসিক জোর বাড়ানোর জন্য যেতাম। আমি বিশ্বাস করি, আমার প্রতি তার ভালোবাসা যেমন কমেনি তেমনি তার প্রতি আমার শ্রদ্ধা, সম্মান ও ভালোবাসা একই আছে। থাকবে।’

সাধারণ সম্পাদক আসিফ ইকবাল বলেন, ‘কাজী রোজী আমাদের গীতিকবি সংঘের আজীবন সদস্য। এই সম্মাননা যখন তিনি গ্রহণ করেন, তার যে উদ্দীপনা, উৎসাহ, আবেগ- এটা আমাদের স্পর্শ করেছিল।’

তিনি জানান, তার আসিফ ইকবাল হয়ে ওঠার পেছনে কাওসার আহমেদ চৌধুরীর অনন্য ভূমিকা আছে। 

কাজী রোজী ও কাওসার আহমেদ চৌধুরীকে স্মরণ করলো গীতিকবি সংঘ
অন্যদিকে, অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বরেণ্য কণ্ঠশিল্পী কুমার বিশ্বজিৎ। যিনি কাওসার আহমেদ চৌধুরীর লেখা অনবদ্য গান ‘যেখানে সীমান্ত তোমার’-এ কণ্ঠ দিয়েছেন। যা কয়েক দশক পরে এখনও সমান জনপ্রিয়।

বিশ্বজিতের ভাষ্য, ‘‘তার সঙ্গে তো অনেক স্মৃতি। ‘যেখানে সীমান্ত তোমার’র মতো একটি গান পাওয়া স্রষ্টার তরফ থেকে উপহার। বাংলা আধুনিকভাবে যে ধরনের কাব্য, অন্ত্যমিল কাওসার আহমেদ চৌধুরী দিয়ে গেছেন, তা অতুলনীয়। তিনি আমাদের অনেকখানি এগিয়ে দিয়েছেন। সমৃদ্ধ করেছেন। একজন শিল্পী ও শ্রোতা হিসেবে তার ঋণ শোধ করার নয়। আমি চিন্তিত, এই শূন্যতা আর পূরণ হওয়া নিয়ে।’’ 

কাজী রোজী প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘কাজী রোজীর সঙ্গে আমার পরিচয় যখন ‘সংগীত পরিষদ’ করেছিলাম, তখন। তিনি সন্তানের মতো আদর করতেন আমাকে। তিনি ভালোবেসে আমাকে একটি গীতিকবিতা দিয়েছেন। সেটি এখনও রেখে দিয়েছি। আমি গানটি নিজেই সুর করে গাওয়ার ইচ্ছে আছে।’’ 

সহসভাপতি গোলাম মোর্শেদ সমবেদনা জানান দুজনের পরিবারের সদস্যদের প্রতি। বলেন, ‘কাওসার ভাই এতকিছু জানেন কিন্তু জানতেন না কীভাবে পুরস্কার পেতে হয়, কীভাবে নিজেকে বড়ভাবে দেখাতে হয়।’

স্মৃতিচারণ করেন সহ-সভাপতি লিটন অধিকারী রিন্টুও। বলেন, ‘‘ফিডব্যাকের ‘শতাব্দী; ক্যাসেটের রেকর্ডিং হওয়ার সময়কার একটা কথা বলতে চাই। আহমেদ সাবের, আমি ও কাওসার ভাই বসে ছিলাম। তখন হঠাৎ মাকসুদ ভাই আসেন। বললেন, ‘তিন-চারজন গীতিকবিকে নিয়ে একটা গান লিখতে চাই- এটা আমার অনেকদিনে ইচ্ছে’।
কাওসার ভাই বললেন, ‘দারুণ হবে’। খুব উৎসাহ দিলেন। আমি জুনিয়ার হলেও তারা তাদের সঙ্গে গান লেখাতে আমাকে রাখলো। বিষয়টি আমার মনে দাগ কেটে গেছে। গানটি ছিলো, ‘টেলিফোনে ফিস ফিস’।’’

সর্বশেষ বক্তা হিসেবে কথা বলেন সংগীতশিল্পী নকীব খান। তিনি বলেন, ‘‘দুজনের সঙ্গেই আমার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। কাওসার মামা ডাকতাম তাকে। একটা গানের কথা না বললেই নয়। নাফিস গেয়েছিল ‘এদেশে একটা শহর ছিল’। এটা আমি সুর করেছিলাম। গানটা আমাকে খুব স্মৃতিকাতর করছে। কাওসার আহমেদ চৌধুরীর অনেক গানের সুর করেছিলাম। তার অনেক গান আমার কাছে আছে। সুরও করা হয়েছে। পাবলিশ করা হয়নি। রোজী আপার কয়েকটি গান সুর করেছি। কিন্তু পাবলিশ করা হয়নি। দুজনের জন্যই খুব খারাপ লাগছে। আমার ইচ্ছা অপ্রকাশিত গানগুলো প্রকাশের।’’

সংঘের সহ-সভাপতি সালাউদ্দিন সজল জ্যোতিষ শাস্ত্র বিষয়ে কাওসার আহমেদ চৌধুরীর আগ্রহের কথাও তুলে ধরেন তার বক্তব্যে। 

এদিনের শোকসভায় উপস্থিত ছিলেন কাওসার আহমেদ চৌধুরীর ছেলে সাফি আহমেদ চৌধুরী প্রতীক। সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে  তিনি বলেন, ‘‘বাবা বলতেন, ‘গান লেখা একটা থ্যাংকস-লেস জব। এটা রিয়েলিটি। শুধু বাংলাদেশ নয়, সারাবিশ্বেই।’ আপনারা যেহেতু একটা অর্গানাইজেশন করেছেন, আপনারা যদি এগুলো নিয়ে ও কপিরাইট নিয়ে কাজ করেন তাহলেই এই সংঘের সার্থকতা হবে। আর বাবার প্রতি সম্মান দেখিয়ে এমন আয়োজন করার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ।’’  

অনুষ্ঠানে আরও যুক্ত ছিলেন- বাপ্পী খান, আপন আহসান, তরুণ মুন্সী, শাহান কবন্ধ, মাহমুদ মানজুর, জনি হক, নাসির সৈকত, দেওয়ান ওয়াসিক, তালহা সোহা প্রমুখ।

উল্লেখ্য, ১৯ ফেব্রুয়ারি না ফেরার দেশে পাড়ি জমান কবি, গীতিকবি ও রাজনীতিবিদ কাজী রোজী। তিন দিনের মাথায় ২২ ফেব্রুয়ারি একইভাবে চলে যান কাওসার আহমেদ চৌধুরী।