কুয়াকাটাসহ উপকূলীয় অঞ্চল পানিতে ভাসছে : ঝুঁকিতে নিজামপুর বেড়ীবাঁধ

কুয়াকাটাসহ উপকূলীয় অঞ্চল পানিতে ভাসছে : ঝুঁকিতে নিজামপুর বেড়ীবাঁধ

কুয়াকাটাসহ উপকূলীয় এলাকা বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে ভাসছে। সাগর ও নদীর পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়ে কলাপাড়া উপজেলার লালুয়া ইউনিয়নের অন্তত:১৩ গ্রাম তলিয়ে গেছে। বৃষ্টি ও জোয়ারের পনিতে ডুবে থাকে এ অঞ্চলের অসহায় মানুষের বেঁচে থাকার শেষ আশ্রয়টুকু। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে প্রতিদিনই দুই বার পানি প্রবেশ করে তলিয়ে গেছে ফসলি জমিসহ মাছের ঘের। বন্ধ হয়ে গেছে কৃষকদের চাষাবাদ। ফলে মানবেতর জীবনযাপন করছে এলাকার মানুষ। ওইসব গ্রামে অধিকাংশ মানুষ এখন অনেকটাই জোয়ার-ভাটার উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন। এদিকে মহিপুর ইউনিয়নের নিজামপুর পয়েন্টের  বেড়ী বাঁধটি এখন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। জোয়ারের পানির চাপে যে কোন সময় বাঁধটি ছুটে পাঁচ গ্রাম প্লাবিত হতে পাড়ে এমন শঙ্কার কথা জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

এমনকি মহিপুর ইউনিয়নের নিজামপুর এ বাঁধটি ঝুঁকিপূর্ন থাকায় জোয়ারের পানির চাঁপে যে কোন সময় বাঁধটি ছুটে কমরপুর, সুধিরপুর, পুরান মহিপুর, ইউসুবপুর ও নিজামপুর গ্রাম প্লাবিত হওয়ার আশংকা রয়েছে। এছাড়া দেবপুর বাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হচ্ছে। 

নিজামপুর গ্রামের বাসিন্দা মোঃ নুরজামান হাওলাদার বলেন, ২০০৭ সালে ঘুর্ণিঝড় সিডরের আঘাতে ভেঙে যায় নিজামপুর ও সুধিরপুরের বেড়িবাঁধ। এরপর কয়েক দফা পানিউন্নয়ন বোর্ড অপরিকল্পিত ভাবে বর্ষা মৌসুমে নির্মাণ কাজ করলেও  তা টেকসই না হওয়ায় এ বাঁধটি ফের ভাঙন শুরু হয়েছে।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, অমাবশ্যার প্রভাবে উপজেলার লালুয়া ইউনিয়নের বেড়িবাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে রাবনাবাদ নদীর জোয়ারের পানি প্রবেশ করে প্রামের পর গ্রাম প্লাবিত হচ্ছে। বানভাসী পরিবার গুলোর চোখের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। অস্বাভাবিক ¯্রােতের টানে মানুষ ভেসে বেড়ালেও তাদের আর্তনাদ কেউ শুনছে না। দেখা দিয়েছে চরম খাদ্য সংকট। এছাড়া এক গ্রাম থেকে অপর গ্রামের যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এর পরও ভেঙে যাওয়া বাঁধ সংস্কারে কোনো উদ্যেগ নেয়নি কর্তৃপক্ষ।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক দিন ধরে লালুয়ার চারিপাড়া বেড়িবাঁধের ভেঙে যাওয়া অংশ দিয়ে রাবনাবাদ নদীর জোয়ারের পানি প্রবেশ করে চারিপাড়া,পশরবুনিয়া,ধঞ্জুপাড়া ও নয়াপাড়াসহ ১২/ ১৩ টি গ্রাম প্রতিদিন প্লাবিত হচ্ছে। এর ফলে ওইসব গ্রামের মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ঘর-বাড়ীতে পানি ঢুকে পড়ায় অনেকেই অপেক্ষাকৃত উচুঁস্থানে আশ্রয় নিয়েছে। দেখা দিয়েছে গো-খাদ্যের সংকট। ফলে গরু কিংবা ছাগলের মালিকদের পড়েতে হয়েছে বিপাকে। 

লালুয়া ইউনিয়নের চারিপাড়া গ্রামের পানিবন্ধি মানসুরা বেগম বলেন, ‘জোয়ার ভাটায় পানি উইড্ডা সব ডুইব্বা গ্যাছে। নদীতে পানি বাড়লে আমাগো নাওয়া খাওয়া ঘুম হারাম হইয়া যায়। মোগো বিপদের কোন শেষ থাকে না’। তবে দু’দিন ধরে উনুনে হাড়ি দেয়নি বলে তিনি জানিয়েছেন। 

একই গ্রামের স্বামী পরিত্যাক্তা মরিয়ম বিবি জানান, প্রতিদিন পানি বাড়লে তার ছেলে, ছেলে বৌ ও দুই নাতীকে নিয়ে চকির উপর বসে থাকতে হয়। 

কৃষক ইসাহাক হাওলাদার বলেন, লবন পানিতে ক্ষেত খামার তলিয়ে রয়েছে। চাষাবাদও বন্ধ রয়েছে। পানি বৃদ্ধি পেলে ঘরের ভিতর ঢুকে পড়ে। বিশেষ করে অমাবশ্যা কিংবা পূর্ণিমার জোয়ারের সময়ই এসমস্যা প্রকট আকার ধারণ করে।

লালুয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো.শওকত হোসেন তপন বিশ্বাস বলেন, এ বাঁধের বিষয় নিয়ে একাধিবার সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জানানো হয়েছে। কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বরং অমাবশ্যা কিংবা পূর্ণিমার জোবা হলে এ ইউনিয়নের  ১২/১৩ টি গ্রামের মানুষ সবচেয়ে দূর্ভোগে থাকে। এসব মানুষের দূর্ভোগ লাগবে স্থায়ী বাঁেধর জন্য তিনি প্রধান মন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

এদিকে মহিপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম আকন বলেন, নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার এক বছর না যেতেই নিজামপুর বাঁধের ভাঙন শুরু হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে এ ব্যয়বহুল বেড়িবাঁধটি রক্ষা করা সম্ভব নয়। আমি চেয়ারম্যান হওয়ার পর থেকেই দুই কিলোমিটার বেড়িবাঁধটি পূর্ন নির্মাণের জন্য মন্ত্রী,এমপি ও পনি উন্নয়ন বোর্ডের দপ্তরে দৌড়ঝাপ করতে করতে আমার মেয়াদ প্রায় শেষের পথে। এর পরও কোন সুফল পাইনি। তাই এলাকার জনগনের স্বার্থে মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। 

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী (কলাপাড়া সার্কেল) খান মোহাম্মদ ওয়ালীউজ্জামান বলেন, লালুয়া ও মহিপুরের নিজামপুর বেড়ি বাঁধের প্রকল্প মন্ত্রণালয় পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রনালয় থেকে জরুরী ভিক্তিতে যদি কোন প্রকল্প দেয়া হয় তাহলে কাজ করা সম্ভব বলে তিনি জানিয়েছেন।