বাংলাদেশের অন্যতম কবি, মুক্তমনা লেখক, ইতিবৃত্তের সম্পাদক হেনরী স্বপনকে মামলা হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে গ্রেপ্তার নাটকে ক্ষুব্ধ হয়েছে সাংবাদিক সমাজ, কবি ও কবির ভক্ত লেখকরা। এই নাটকের মূল অভিনেতা ছিল কোতলায়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরুল ইসলাম। তাঁর অতি আাগ্রহেই কবিকে কারাগারে যেতে হয়েছে এমন অভিমত সাংবাদিকদের।
কবি হেনরী স্বপনকে গ্রেপ্তারের পর ক্ষোভে ফেটে পড়েন সাংবাদিকরা। সন্ধ্যায় সাংবাদিকরা বিক্ষোভ মিছিল করেছে। সেই মিছিলে অংশ নিয়েছে সাংবাদিক ছাড়াও বরিশালের কবি, সাংস্কৃতিক ব্যক্তি ও বিভিন্ন পেশার মানুষ। ক্ষুব্ধ গণমাধ্যম কর্মীরা গতকাল বুধবারের পুলিশ কমিশনারের মতবিনিময় সভা বর্জনের ঘোষণা দেন। গতকাল ঢকায় শাহবাগে প্রতিবাদ সমাবেশ ও কবির মুক্তি চেয়ে মানববন্ধন করেছে মুক্তমনা মানুষরা।
হেনরী স্বপনকে গ্রেপ্তার এবং পুলিশ কমিশনারের মতবিনিময় সভায় যোগ না দেওয়ার ঘোষণার মধ্য দিয়ে পুলিশ আর গণমাধ্যমকর্মীরা দুই মেরুতে অবস্থা নেয়। সেই অবস্থান থেকে গণমাধ্যম এবং মহানগর পুলিশের মধ্যে দূরত্ব বাড়াতে দেননি বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। তিনি দ্রুত উদ্যোগ নিয়ে কবি হেনরী স্বপনকে গ্রেপ্তারের কারণ অনুসন্ধানসহ মামলার বিষয়ে খোঁজখবর নেন। একই সঙ্গে দুই পক্ষের মধ্যে সেতুবন্ধ রচনা করতে উদ্যোগী ভূমিকা পালন করেন। এই উদ্যোগের জন্য মেয়র সাদিক আবদুল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতেই হয়।
অন্যদিকে তাঁর উদ্যোগে সাড়া দিয়ে মহানগর পুলিশ কমিশনার শাহাবুদ্দিন খান সাংবাদিকদের ক্ষোভকে বাড়তে না দিয়ে তিনি তাঁর মতবিনিময় সভা পিছিয়ে দিয়েছেন। ইচ্ছে করলেই তিনি ওই মতবিনিময় সভা করতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। তাঁর এই দূরদর্শী চিন্তার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তাঁকে ধন্যবাদ জানানো উচিত। ধন্যবাদ মাননীয় পুলিশ কমিশনার।
গণমাধ্যমকর্মী এবং পুলিশ যে একজন অন্যজনের পরিপূরক তার প্রমাণ দিলেন পুলিশ কমিশনার। আর এই উদ্যোগের অনুঘটক হচ্ছেন মাননীয় মেয়র। আমরা মেয়র ও পুলিশ কমিশনারকে কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ দিয়ে খাটো করতে চাই না। আমরা চাই তারা সব সময় নগরবাসীকে সঙ্গে নিয়েই যেন সামনে চলেন। তারা সামনে থাকলে গণমাধ্যম তাঁদের অবস্থানে থেকে সকল শুভ কাজে অনুপ্রেরণা যোগাবে।
মাননীয় মেয়র এবং পুলিশ কমিশনার, আমরা বলতে চাই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে গণমাধ্যমের যৌক্তিক শঙ্কাই কিন্তু হেনরী স্বপনকে গ্রেপ্তার। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ফাঁক গলে গণমাধ্যম কর্মীরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। সেই শঙ্কা দূর করতে না পারলে আগামীতে অন্য কোন লেখা নিয়ে অন্য কোন গণমাধ্যমকর্মীর ওপর একই খড়গ নেমে আসবে। গণমাধ্যমের দাবি এই আইন বাতিল করা হোক। তা না হলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যাপবহার ঠেকানো কঠিন হবে। এব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
মাননীয় মেয়র ও পুলিশ কমিনা মহোদয়, কবি হেনরী স্বপন যে স্ট্যাটাস দিয়েছিল সেটা কি মিথ্যা ছিল? যেদিন শ্রীলংকায় চার্চসহ বিভিন্ন স্থানে সিরিজ জঙ্গী হামলা হয়েছিল। যে হামলায় অনেক প্রাণহানি ঘটেছিল। বহু মানুষ পঙ্গু হয়েছে। সেটা জানার পরও একজন ফাদার এধরণের অনুষ্ঠান করতে পারেন কি না সেই পশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। একজন সচেতন মানুষ হিসেবে সেই কথা বলার অধিকার আমার থাকবে না কেন? যদি সেই অধিকার না থাকে তাহলে বর্তমান সরকারের জঙ্গী বিরোধী উদ্যোগ সফল হবে কিভাবে? কবি হেনরী স্বপন সেদিনের বাস্তব চিত্র মানুষের কাছে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন মাত্র। সেই কারণে ওই চার্চের ফাদার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের হাতিয়ার ব্যবহার করলেন। আর আমাদের বিচক্ষণ পুলিশের এক কর্মকর্তা দ্রুত গ্রেপ্তার করলেন হেনরী স্বপনকে। যে প্রক্রিয়ায় হেনরী স্বপনকে গ্রেপ্তার এবং কারাগারে পাঠানো হয়েছে, সেটা কোনভাবেই স্বাভাবিক বিষয় মনে হয়নি।
একজন নিভৃতচারী কবিকে মামলা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গ্রেপ্তার করতে পুলিশের তৎপরতা এবং দ্রুত আদালতে প্রেরণ করে কারাগারে পাঠানোর এই কৃতিত্ব দেখিয়েছেন আমাদের ওসি নুরুল ইসলাম। পুলিশ কমিশনারের কাছে দাবি জানাতে চাই, একজন বিচক্ষণ কর্মকর্তা কেন গণমাধ্যমকে এড়িয়ে এমন নাটকের অবতারণা করলেন?
ওই দিন দুপুর থেকে কেন কবি হেনরী স্বপনের ব্যাপারে সন্ধান জানতে শতবার ওসি নুরুল ইসলামকে মুঠোফোনে কল দিয়েও পাওয়া যায়নি? কেন তিনি গণমাধ্যমের ফোন এড়িয়ে গেছেন? হেনরীকে গ্রেপ্তারে এতো আগ্রহ কেন ওসি নুরুল ইসলামের? হেনরী স্বপন কি এমন অপরাধ করেছেন, এত দ্রুত তাকে গেপ্তারে নেমেছিলেন ওসি নুরুল ইসলাম? সেটা খতিয়ে দেখা হোক।
আমরা চাই, পুলিশ ও গণমাধ্যমের সম্পর্ক উন্নয়ন ঘটাতে। নিঃসন্দেহে মহানগর পলিশের কমিশনারেরও একই ইচ্ছা। গণমাধ্যমের সঙ্গে পুলিশের দূরত্ব কমাতে তাঁর উদ্যোগ প্রশংসার দাবি রাখে। এই সুন্দর উদ্যোগ যেন কোন একজন কর্মকর্তার জন্য নষ্ট হয়ে না যায়। আমরা বিশ^াস করি মহানগর পুলিশের কর্তা এব্যাপারে উদ্যোগী ভূমিকা নেবেন।
তারপরও বলতে হয় কবি হেনরী স্বপনকে গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে বিক্ষুব্ধ গণমাধ্যমকর্মীদের আস্থার যায়গায় নিয়ে যাবার জন্য মেয়র সেরনিয়াবত সাদিক আবদুল্লাহ এবং মহানগর পুলিশ কমিশনার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তাঁদের এই দৃষ্টান্ত আমাদের অনেকদিন স্মরণে থাকবে। আমরা চাই, তাদের সুন্দর উদ্যোগের মাধ্যমের নিঃশর্তভাবে মুক্ত হবেন কবি হেনরী স্বপন। আর যারা কবি হেনরী স্বপনকে হয়রানী, হত্যার হুমকী দিয়ে শঙ্কার মধ্যে ফেলেছেন তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেবেন।