কোরবানী হোক আত্মত্যাগের নিদর্শন

কোরবানী মানুষের মনের ভেতরের হিংসাকে নিয়ন্ত্রণ করার অনুপ্রেরণা যোগায়।
মানুষের ভেতরের পশুবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করতে শেখায়। আমরা সবাই যেন পশু কোরবানীর মাধ্যমে নিজের ভেতরের পশুকে নিয়ন্ত্রণ করি। তাহলেই আমাদের পশু কোরবানী সার্থক হবে। নিজেরা যেন নূন্যতম স্বার্থকে ত্যাগ করে মানুষের কল্যাণে দাঁড়াতে পারি। ক্ষমতার দম্ভ আর হিংসা যেন পাথেয় না হয়। ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে আমরা যেন বিশ^মানবতার জয়যাত্রার পথে থাকতে পারি।
ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষে পৃথিবীর সকল মানুষের মঙ্গল কামনা করছি। সেই সঙ্গে নিরন্তর শুভেচ্ছা জানাচ্ছি আমাদের পাঠক, সুভানুধ্যায়ীসহ বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিককে।
মনে হয়েছিল করোনা মহামারী মানুষের মধ্যে কিছুটা হলেও হিংসা দ্বেষ, বিভেদ, অহংকার, দম্ভ, প্রভাব-প্রতিপত্তির ভীত নাড়িয়ে দিয়েছে। মনে হয়েছিল সবার ভেতর মানবতার জাগরণ সৃষ্টি হয়েছে। আমদের সেই চিন্তা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। বাস্তবে ভিন্ন চিত্র প্রত্যক্ষ করেছে দেশের মানুষ। করোনাকে পূজি করে লাগাবহীন দুর্নীতি আমাদের শঙ্কিত করেছে। করোনার সঙ্গে লোভের আগুন ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। এতো এতো মৃত্যুর মিছিলও আমাদের মনুষ্যত্বকে জাগিয়ে তুলতে পারেনি? এখনো কোথাও কোথাও দ্বন্দ্ব, সংঘাত, দুর্নীতি, আর সেবার নামে পুকুর চুরির ঘটনা ঘটছে। তাহলে আমরা কেমন মানব সমাজ? সামনে পরম স্বজনের মৃত্যুও আমাদের শেখাতে পারছে না। এখনো আমরা পদে পদে অমানবিক আচরণ করছি। ঠুনকো আভিজাত্যকে টিকিয়ে রাখতে অন্যের ওপর চড়াও হচ্ছি। করোনার মতো ভয়াবহ দুর্যোগ আমদের শেখাতে পারেনি বলেই মনে হচ্ছে। তাহলে সত্যি-ই কি আমাদের মুক্তি হবে? তারপরও আমরা শান্তি চাই, আমরা মানুষের মঙ্গল চাই, আমরা পৃথিবীকে মানুষের বাসোপযোগী করতে চাই।
ত্যাগের অপার মহিমার নাম হচ্ছে কোরবানী। আল্লাহ তাআলা ইসমাইল (আ:)কে তাঁর প্রিয় জিনিষ কোরবানী দিতে বলেছিলেন। ইসমাইল (আ:) বুঝতে পেরেছিলেন তার প্রিয় জিনিষ হচ্ছে তার প্রাণের ধন, প্রিয় সন্তান। আল্লাহর আদেশে তিনি সেই পুত্র সন্তানকেই কোরবানী করছিলেন। কিন্তু মহান আল্লাহ ইসমাইল (আ:) এর কোরবানী কবুল করে নেন। তবে তার সন্তান নয়, সন্তানের পরিবর্তে পশু কোরবানীর মাধ্যমে। ইসমাইল (আ:) তাঁর ভেতরের পশুকে কোরবানী দিয়ে আল্লাহর কাছে কোরবানী কবুল করান। মানুষের ভেতরের পশুত্বকে নিয়ন্ত্রণের জন্যই কোরবানীকে ফরজ করা হয়েছে। কিন্তু আমরা কি করছি? কোরবানীর নামে প্রতিযোগিতায় নামছি। একধরণের অসুস্থ্য প্রতিযোগিতা। আমাদের ভেতরের অহম দূর করে আমরা কোরবানী দিতে পারছি ক’জন? কোরবানী দিতে গিয়েও যদি হিংসা, দ্বেষ, দম্ভ, ক্ষমতার ব্যবহার হয়, তাহলে সেটা লোক দেখানো কোরবানী ছাড়া অন্য কিছু হতে পারে?
আসুন, এই কোরবানীর মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের রাগ, ক্ষোভ, ক্রোধ, পাপবোধ, অহংকার এবং ক্ষমতাকে একটু নিয়ন্ত্রণ করি। ভেতরের পশুবৃত্তিকে নিবৃত্ত করে মানুষের কল্যাণে নিবেদিত হই।
বিশ্ব মানবতার জয়গানে অহমবোধের কোরবানী করি। আগামী সুন্দর পৃথিবী বিনির্মাণে যে যেখানে আছি, সেখান থেকেই অবদান রাখার চেষ্টা করি।