খান আতাউর রহমানের ২৩তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

প্রখ্যাত গীতিকার, সুরকার, সংগীত পরিচালক, চলচ্চিত্র প্রযোজক-পরিচালক ও অভিনেতা খান আতাউর রহমানের ২৩তম মৃত্যুবার্ষিকী মঙ্গলবার (১ ডিসেম্বর)। ১৯৯৭ সালের এ দিনে পৃথিবী নিভে যায় বৈচিত্রময় গুণের অধিকারী এই তারকার জীবনের আলো।
১৯২৮ সালের ১১ ডিসেম্বর মানিকগঞ্জ জেলার সিঙ্গাইর উপজেলার রামকান্তপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তার একক কোন পরিচয় নেই। তিনি ছিলেন একাধারে গায়ক, সুরকার, অভিনেতা, চলচ্চিত্র নির্মাতা, সঙ্গীত পরিচালক, গীতিকার, প্রযোজক, সংলাপ রচয়িতা, কাহিনীকার। তবে এতসব পরিচয়ের মধ্যে আলাদা করে উজ্জ্বল হয়ে আছে একজন চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্বের পরিচয়।
শিল্পের সবচেয়ে শক্তিশালী মাধ্যম বলে পরিচিত চলচ্চিত্রে যত রকমের গুণ দরকার, সবই ছিল তার মধ্যে। একজন কমপ্লিট চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব খান আতা সব প্রজন্মের জন্যই আইকন।
চলচ্চিত্রের জন্যই ঘর ছেড়েছেন, সুন্দর-সুনিশ্চিত ভবিষ্যৎ থাকা সত্ত্বেও পা বাড়িয়েছেন অচেনা পথে। ঢাকা মেডিকেল এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দুই প্রতিষ্ঠানেই ভর্তি হয়েছিলেন।
কিন্তু পড়া থেকে তাকে বেশি টেনেছে চলচ্চিত্র। তাই ঘর ছেড়ে পাড়ি দিয়েছিলেন ভারতে (১৯৪৯)। ঘুরে বেড়িয়েছেন মুম্বাইয়ের রাস্তায়, রাত কেটেছে ফুটপাতে। সেখানে কাজ করলেন এক ক্যামেরাম্যানের সহকারী হিসেবে। তারপর পাকিস্তান, যুক্তরাজ্য, নেদারল্যান্ডের নানান শহরে ঘুরে বেড়িয়েছেন। লন্ডনে কাজ করেছেন শিল্পী এসএম সুলতানের সাথে।
১৯৫৭ সালে ফিরে আসেন ঢাকায়। কাজ শুরু করেন পাকিস্তান অবজারভারে। চলচ্চিত্রের সাথে খান আতা যুক্ত হন জং কারদার পরিচালিত ‘জাগো হুয়া সাভেরা’ দিয়ে। এরপরের বছর অভিনয় করেন ‘এ দেশ তোমার আমার’ ছবিতে। এই সিনেমাটিতে অভিনয়ের পাশাপাশি সঙ্গীত পরিচালক, গীতিকার ও সুরকার হিসেবেও অভিষেক হয় তার। এরপর অভিনয় ক্যারিয়ারে একে একে অভিনয় করেন ‘কখনো আসনি’, ‘কাঁচের দেয়াল’, ‘সোনার ফুল, ‘সূর্যস্নান’, ‘নবাব সিরাজউদ্দৌলা’, ‘জোয়ার ভাটা’, ‘আপন পর’, ‘ত্রিরত্ন’, ‘সুজন সখী’, ‘মাটির মায়া’ প্রভৃতি ছবিতে।
জীবন থেকে নেয়া চলচ্চিত্রের ‘এ খাঁচা ভাঙবো আমি কেমন করে’ কিংবা ‘এ কি সোনার আলোয়’, ‘এক নদী রক্ত’ পেরিয়ে’র মত জনপ্রিয় গানগুলো খান আতা’র লেখা। প্রায় পাঁচ শ’র গান লিখেছেন তিনি।
খান আতা পরিচালনা শুরু করেন ১৯৬৩ সালে ‘অনেক দিনের চেনা’ সিনেমা দিয়ে। তার পরিচালিত চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘রাজা সন্ন্যাসী’, ‘আবার তোরা মানুষ হ’, ‘দিন যায় কথা থাকে’, ‘আরশি নগর’ প্রভৃতি।
১৯৯৭ সালে সর্বশেষ তিনি ‘এখনো অনেক রাত’ ছবিটি নির্মাণ করেন। একই বছর ১২ই ডিসেম্বর ছবিটি মুক্তির দিনও ধার্য করেছিলেন। কিন্তু তার আগেই মৃত্যুবরণ করেন।
১৯২৮ থেকে ১৯৯৭ সাল- ৬৯ বছর পৃথিবীতে বেঁচেছিলেন খান আতাউর রহমান। তবে কর্ম গুণে এদেশের চলচ্চিত্র ও সঙ্গীতাঙ্গনে বেঁচে থাকবেন যুগের পর যুগ...অসীম সময়।
ভোরের আলো/ভিঅ/০১/১২/২০২০