গণতন্ত্র ও রাজনৈতিক দল

গণতন্ত্র ও রাজনৈতিক দল

পৃথিবীর মোট আয়তনের ২৯ ভাগ স্থল। আর এই স্থলভাগের আয়তন ৫১ কোটি ১ লক্ষ বর্গমাইল। এই সুবিশাল জায়গা জুড়ে রয়েছে ৩৩৩ টি দেশ এদের মধ্যে স্বাধীন দেশ ২৯৫টি। অধিকাংশ স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশে রাষ্ট্র ক্ষমতার পরিবর্তন হয় গণতন্ত্রিক পক্রিয়ায়। খ্রিষ্টপূর্ব পাঁচ শতাব্দীতে সর্বপ্রথম গণতন্ত্র শব্দটি ব্যবহার করা হয়। প্রায় আড়াই হাজার বছর পূর্বে এই গণতন্ত্রিক শাসনব্যবস্থা কেবল গ্রিস ও তার আশেপাশে জায়গা জুড়ে সীমাবদ্ধ ছিলো। সভ্যতার ক্রমবিকাশের ফলে এই গণতন্ত্রিক শাসনব্যবস্থা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।

গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের জন্য ভারতীয় উপমহাদেশের মানুষদের প্রায় দুইশত বছর আন্দোলন সংগ্রাম করতে হয় বিট্রিশদের বিরুদ্ধে। অবশেষে ১৯৪৭ সালের ১৪ ও ১৫ আগস্ট ধর্মের উপর ভিত্তি করে পাকিস্তান ও ভারত রাষ্ট্রের জন্ম হয়। পাকিস্তান  রাষ্ট্রের জন্মের পর পরই পূর্ব পাকিস্তানের জনগণকে আন্দোলন করতে হয় ভাষা, সংস্কৃতি, ন্যায্যতা ও গনতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের জন্য। পাকিস্তান স্বাধীনতা পেলেও বাংলাদেশের ভূখন্ডের জনগণ আসলেই কি স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক অধিকার পেয়েছে? ১৯৭০ এর এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করলেও রাষ্ট্র ক্ষমতায় বসতে পারেনি। এই কারণেই তৎকালীন সময় শুরু হয়েছিলো অসহযোগ আন্দোলন। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ, দুই লক্ষ মা বোনের সম্মান ও ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময় পৃথিবীর বুকে জায়গা করে নিলো বাংলাদেশ। তাহলে আমরা বলতে পারি বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছে গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের জন্য। কিন্তু দুঃখের বিষয় স্বাধীনতার ৪৯ বছর অতিক্রম করলেও বাংলাদেশে কি গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে?

নির্বাচনের কথায় পরে আসা যাক, স্বাধীনতার আগে বা পরে যে রাজনৈতিক দলগুলোর জন্ম হয়েছে তাদের মধ্যেই বা গনণন্ত্র আছে কতটুকু? রাজনৈতিক দলগুলো গণতান্ত্রিক না হয়ে কিভাবে তারা গণতান্ত্রিক সরকার গঠন করবে সেটাও সময়ের প্রশ্ন? রাজনৈতিক দলগুলো সব সময় সাধারণ মানুষদেরকে গণতান্ত্রিক অধিকারের দোহাই দেয় এবং জনগণ দেশের মালিক বলে তাদের সফট কর্ণার ব্যবহার করে। প্রায় প্রত্যেকটি দলেরই নিয়মিত কাউন্সিল নাই। কাউন্সিল হলেও তারা কতটুকু গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অবলম্বন করে সেটাও দেখার বিষয়। কমিটি গঠন প্রক্রিয়াগুলো কতটুকু গণতান্ত্রিক নিয়মে হয়ে থাকে, সেটাও দেখার বিষয়। নিজেদের দলের মধ্যে সামান্যতম গণতন্ত্র চর্চা না করে নিজেদের গণতান্ত্রিক দল বলতে বিন্দু মাত্র লজ্জা পায় না।

আওয়ামী লীগের বয়স প্রায় ৭১ বছর। কাউন্সিল হয়েছে ২১টি। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) বয়স প্রায় ৪২ বছর। কাউন্সিল হয়েছে মাত্র ৬ বার। জাতীয় পার্টির বয়স প্রায় ৩৫ বছর ভাঙ্গা গড়ার মধ্যে কাউন্সিল হয়েছে ৯ বার। শীর্ষ দলগুলোর সভাপতি পদটি একজনে ধরে বসে আছে তিন চার দশক ধরে।

কোন কাউন্সিলের আগে বা পড়ে কোন দলই সারাদেশে কমিটি গঠন করতে পারে নাই। নিজেদের দলের মধ্যে তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত গণতন্ত্র চর্চা না করে তারা কিভাবে দেশের মানুষকে গণতান্ত্রিক অধিকার চর্চা করাবে সেটাও আজ সাধারণ মানুষের কাছে স্পষ্ট। যতদিন  না পর্যন্ত রাজনৈতিক দলগুলোর কমিটি নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় না হবে ততদিন পর্যন্ত দেশে গণতন্ত্র আশা করা আমাবস্যার চাঁদের মত।

নিজেদের দলের মধ্যে নির্বাচনের মাধ্যমে ওর্য়াড, ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা ও কেন্দ্রের কমিটি করতে হবে। নিজেদের মধ্যে জয় পরাজয় মেনে নেওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে এবং নির্বাচনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। তাহলেই দেশের মধ্যে গণতন্ত্র সৃষ্টি হবে। কেবল তাহলেই গণতান্ত্রিক সরকার পাবে দেশের জনগণ। একই সঙ্গে বাংলাদেশ নামক ভূখ- পৃথিবীর বুকে যে কারণে সৃষ্টি হয়েছে সেটার উদ্দেশ্যও পূরণ হবে। দেশের জন্য ও গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের জন্য যারা জীবন দিয়েছে তাদের আত্মাও শান্তি পাবে।