গণপরিবহণের স্বেচ্ছাচারিতা বন্ধ করুন

গণপরিবহনের স্বেচ্ছাচারিতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। কথায় কথায় যাত্রীদের শারীরিক নির্যাতন করা এখন নিত্যদিনের ঘটনা। গণপরিবহনে শ্রমিকদের সঙ্গে ভাড়া নিয়ে কথা বলতে গেলেও হয়রানীর শিকার হতে হয়। এসব ঘটনায় ব্যবস্থা গ্রহণ না করার কারণে বেপরোয়া হয়ে উঠছে তারা। সব শেষ ঢাকায় চলন্ত গাড়ি থেকে এক নারী বাকপ্রতিবন্ধীকে ফেলে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। নির্মমভাবে গাড়ি থেকে ফেলে দিয়ে চালক গাড়ি চালিয়ে চয়ে যায়। মর্মান্তিক ওই ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে সারা দেশ। নিন্দার ঝড় ওঠে। বারবার কেন এমন ঘটনা ঘটছে। গণ পরিহনের এমন স্বেচ্ছাচারিতার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া দরকার। এব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কঠোর ব্যবস্থা নেবে এমনটাই প্রত্যাশা সাধারণ যাত্রীদের।
আমরা লক্ষ্য করছি, সারা দেশে গণপরিবহনে শিক্ষার্থী লাঞ্ছিতের ঘটনা বাড়ছে। অতিরিক্ত ভাড়া আদায় কিংবা ভাড়া বেশি নেওয়ার প্রতিবাদ করলেই পরিবহন শ্রমিকরা শিক্ষার্থীদের ওপর চরাও হয়। যা কোনভাবেই কাম্য নয়। ভাড়া কম কিংবা ভাড়া না থাকলে চরম নির্যাতনের শিকার হতে হয় শিক্ষার্থীদের। কখনো কখনো শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নেমে এরন প্রতিবাদ জানাতে পারে। কিন্তু সাধারণ যাত্রীরা যে প্রতিনিয়ত গণপরিবহণে নির্যাতনের শিকার হয় সেব্যাপারে তেমন কোন প্রতিবাদ হতে দেখা যায় না। কিংবা একজন যাত্রীর পক্ষে তেমন একটা সরব হয় না। তাই হামেসাই নির্যাতনের শিকার হচ্ছে সাধারণ যাত্রীসহ শিক্ষার্থীরা। সরকারের পক্ষ থেকে কঠোরভাবে গণপরিবহনের তদারকি থাকা জরুরী।
বরিশাল বিশ^বিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীর সঙ্গে বরিশালের রূপাতলী এলাকায় ভাড়া নিয়ে বাকবিত-া হয়। এর এক পর্যায়ে পরিবহণ শ্রমিক ছুরিকাঘাত করে আহত করে এক শিক্ষার্থীকে। এই সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে বিশ^বিদ্যালয়ের সাধারণ ছাত্ররা সড়ক অবরোধ করে। পরবর্তীতে প্রশাসন হামলাকারী ওই শ্রমিককে গ্রেপ্তার করায় অবরোধ তুলে নেয় শিক্ষার্থীরা। কিন্তু ঢাকায় বাকপ্রতিবন্ধী যাত্রীকে যেভাবে বাস থেকে ফেলে দেওয়া হয়েছে তার প্রতিকার কি দিয়ে হবে। কেবল ভাড়া কম থাকার কারণে কোন একজন মানুষ অন্য একজন মানুষকে চলন্ত বাস থেকে রাস্তায় ফেলে দিতে পারে এটা না দেখলে কেউ বিশ^াস করবে না। মানুষ কতটা অমানুষ হলেণ এমন জঘন্য কাজ করতে পারে।
আমরা জানি না সেদিন ওই গাড়িতে থাকা যাত্রীরা এর প্রতিবাদ করেছিল কি না। উচিত ছিল ওই সময়ই গাড়ির চালক. চালকের সহকারীসহ সবাইকে পুলিশে দেওয়া সেটা হয়নি। পরবর্তীতে ওই নারীকে ফেলে দেওয়া ও আহাজারীর ভিডিওচিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক নিন্দার ঝড় ওঠে। এক পর্যায় পুলিশ ওই বাসের চালক, চালকের সহকারী এবং বাসটিকে আটক করেছে। এব্যাপারে গতকাল সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে নির্দেশনা দিয়েছেন।
আমরা চাই, চলন্ত বাস থেকে যে বাকপ্রতিবন্ধী নারীকে ফেলে দেওয়া হয়েছে তার পক্ষে সরকার দাঁড়াবে। একই সঙ্গে দোষীদে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে ইতিবাচক পদক্ষেপ নেবে। এছাড়া গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরাতে বিআরটিআই এবং প্রশাসন কঠোর ব্যবস্থা নেবে। আগামীতে গণপরিবহনে যাতে যাত্রী হয়রানী না হয় সেব্যাপারে নজরদারী করবে।