গণমূখি শিক্ষার দিকে নজর দিন

গণমূখি শিক্ষার দিকে নজর দিন

আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় ধনী-দরিদ্র, পেশাজীবী, নৃতাত্বিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে বৈষম্য প্রকট। এর মূল কারণ জাতীয় শিক্ষা নীতি বাস্তবায়ন না হওয়া। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক চিন্তায় একটি গণমূখি একিভূত শিক্ষানীতি না থাকায় বহুবিধ ধারায় শিক্ষা চলছে। আমাদের প্রথমিক শিক্ষায় ১১ধরণের শিক্ষা ব্যবস্থা চালু রয়েছে। এজন্য আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা অনেকটা দায়ী। কিল্ডারগার্টেন, ইংলিশ মিডিয়াম, ভার্সনসহ নানা পদ্ধতি। বিজ্ঞান ভিত্তিক একমূখি শিক্ষা ব্যবস্থা চালু হলে সাম্প্রদায়িকতা নির্ভর শিক্ষার আগাছা কমানো সম্ভব। ধর্মীয় শিক্ষাকে মূলধারার শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত করা হলে শিক্ষা নিয়ে সৃষ্ট বৈষম্যের একটা বড় সমস্যা দূর হবে। এর সঙ্গে অন্যান্য মিডিয়াম ও ভাসনগুলোকেও একিভূত করতে পারলে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার গুণগত পরিবর্তন আনা সম্ভব হবে। তাই আমাদের অবশ্যই গণমূখি শিক্ষার দিকে নজর দিতে হবে।

মানসম্মত শিক্ষার জন্য নিরাপদ একিভূত শিখন পরিবেশ সৃষ্টি। সেজন্য অবশ্যই মানসম্মত শিক্ষক নির্বাচন করতে হবে। এসব বৈষম্য দূর করতে কার্যকর উদ্যোগের সঙ্গে শিক্ষাকে জাতীয়করণ করতে হবে। শিক্ষক দিবসে বোধকরি সবার আগে এই দিকটায় আলোকপাত করা দরকার। সেজন্য আর্থিক সক্ষমতা বাড়াতে উদ্যোগ নিতে হবে।

শিক্ষার পূর্ব শর্ত হচ্ছে মানসম্মত শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি। আমাদের সবাইকে নিয়ে আমাদের সামনে যেতে হবে। সবার জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সমতাভিত্তিক মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতকরণ এবং জীবনব্যাপী শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। একমুখি বিজ্ঞান ভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থার প্রবর্তন করে শিক্ষাকে জাতীয়করণ করে শিক্ষা ক্ষেত্রে বৈষম্য কমাতে উদ্যোগ নিতে হবে। সেই সুযোগ সৃষ্টি করতে হলে অবশ্যই মানসম্মত শিক্ষক নির্বাচন করতে হবে। শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের অনুপাত ঠিক করতে হবে। শিক্ষকরা যাতে নিবিড়ভাবে পাঠদান করাতে পারেন সেজন্য সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষকদের সুযোগ সুবিধায় সমন্বয় ঘটাতে হবে। আমাদের মেয়েদের সবার আগে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করে তুলতে হবে। সেই সঙ্গে বাল্য বিবাহের রুট খুঁজে বের করতে হবে।

মানসম্মত প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা অর্জন নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়াও কারিগরি, বৃত্তিমূলক ও বিশ্ববিদ্যালয়সহ উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে সমান সুযোগ নিশ্চিত করা, কর্মসংস্থান, জেন্ডার বৈষম্য দূর করা, মানবাধিকার শিক্ষা, নিরাপদ ও একীভূত শিক্ষণ পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।

সবার আগে শিশু এই নীতিকে সামনে রেখে নগর ও গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর শিক্ষার সমান সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। একই সঙ্গে করোনাকালীন সময়ে শিক্ষা ক্ষেত্রে যে বিপর্য সৃষ্টি হয়েছে, সেই দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। গত ১৭ মাসে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষা থেকে ঝরে পড়া বিপুল সংখ্যক নারী শিশু বাল্য বিবাহের শিকার হয়েছে। তাদের জীবনমান নিশ্চিত করাও চরম ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে। বাল্য বিবাহের এই প্রবণতা ঠেকাতে কার্যকরী উদ্যোগ নিতে ব্যর্থ হলে টেকসই উন্নয়নে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা খুবই কঠিন হবে। এছাড়া অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারী শিশুদের প্রতি বিশেষ নজর না দেলও সমন্বিত শিক্ষা কার্যক্রম ব্যহত হবে। শিক্ষক দিবসে এটাই যেন হয় মূল প্রতিপাদ্য।