গর্বাচেভকে শেষ শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন হাজারো মানুষ

রক্তপাতহীনভাবে স্নায়ু যুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে পশ্চিমা বিশ্বের কাছে দারুণ সমাদৃত সাবেক সোভিয়েত নেতা মিখাইল গর্বাচেভের মরদেহে শেষ শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন হাজারো মানুষ। তার মরদেহ মস্কোর বিখ্যাত হল অব কলামসে রাখা হয়েছে। যদিও সোভিয়েত ইউনিয়েনের পতন ঠেকাতে ব্যর্থ হওয়ায় রাশিয়ার অনেকের কাছেই তিনি খলনায়ক।
মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) মস্কোর একটি হাসপাতালে মারা যান এই নেতা। তার বয়স হয়েছিল ৯১ বছর। তিনি গুরুতর, দীর্ঘস্থায়ী রোগে ভুগছিলেন বলে হাসপাতাল থেকে দেওয়া বিবৃতিতে জানানো হয়েছিল।
মস্কোর কেন্দ্রস্থলে হাউজ অব ইউনিয়নস ভবনের বিখ্যাত বলরুম হল অব কলামসে শনিবার (৩ সেপ্টেম্বর) গর্বাচেভের শেষকৃত্যানুষ্ঠানের আয়োজন হয় বলে জানায় বিবিসি। হাজার হাজার মানুষ কয়েক ঘণ্টা ধরে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে ফুল দিয়ে তার কফিনে শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।
তবে গর্বাচেভের শেষকৃত্যানুষ্ঠান পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় হচ্ছে না। এমনকি, ব্যস্ত কর্মসূচির কথা বলে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও শেষকৃত্যানুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন না। যদিও পুতিন প্রশাসনের প্রটোকল বিভাগ গর্বাচেভের শেষকৃত্যের অনুষ্ঠানটি আয়োজন করেছে এবং তাকে ‘মিলিটারি গার্ড অব অনার’ দেওয়া হয়েছে।
গর্বাচেভকে শ্রদ্ধা জানাতে আসা লিবারাল নেতা গ্রিগরি ইয়াভলিনস্কি বলেন, এইসব মানুষ এখানে গর্বাচেভকে ধন্যবাদ জানাতে এসেছে। বলতে এসেছে, আপনাকে ধন্যবাদ জনাব গর্বাচেভ। আপনি আমাদের একটি সুযোগ দিয়েছিলেন, কিন্তু আমরা সেই সুযোগ হারিয়ে ফেলেছি।
তিন দশক আগে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের মাধ্যমে স্নায়ুযুদ্ধের অবসান আর যুক্তরাষ্ট্রের হাতে বিশ্বের একক কর্তৃত্ব চলে যাওয়ার কালে যে কয়েকটি আলোচিত চরিত্রের ওপর বিশ্বের প্রায় সবার চোখ ছিল, তার অন্যতম মিখাইল গর্বাচেভের জীবনাবসানে পশ্চিমের রাজনৈতিক নেতারা দলে দলে শোক প্রকাশ করছেন। পশ্চিমাদের কাছে তিনি ছিলেন ‘সোভিয়েতের কারাগারে বন্দি কোটি কোটি মানুষের মুক্তিদাতা’, অন্যদিকে রাশিয়ার নবীন-প্রবীণ অনেকের কাছে তিনি খলনায়ক, ‘যিনি রাশিয়ার বৈশ্বিক প্রভাব মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছিলেন’।
সমাজতন্ত্রীদের অনেকের কাছে সোভিয়েতের গোরখোদক হিসেবে পরিচিত গর্বাচেভ কিন্তু উঠে এসেছিলেন এক কৃষক পরিবার থেকে; কৌশল, বুদ্ধিমত্তা আর পরিশ্রম তাকে নিয়ে যায় সোভিয়েত কমিউনিস্ট পার্টির শীর্ষ নেতৃত্বে। সোভিয়েত ইউনিয়নের শেষ এ প্রেসিডেন্ট যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তি করেছিলেন, পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলোর নেতাদের সঙ্গে বাড়িয়েছিলেন ঘনিষ্ঠতা, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী ইউরোপের দ্বিধাবিভক্তি ঘুচিয়ে দিতে এবং জার্মানিকে এক করতে মূল ভূমিকা রেখেছিল।