চীনা রাষ্ট্রদূতকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করল যুক্তরাজ্য সংসদ

চীনা রাষ্ট্রদূতকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করল যুক্তরাজ্য সংসদ

যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূতকে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে তিনি আর যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে প্রবেশ করতে পারবেন না এবং সেখানে কোনো আলোচনায় অংশগ্রহণ করতে বা কথা বলতে পারবেন না।

গতকাল মঙ্গলবার এই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। খবর: আল জাজিরা।

চীনের জিনজিয়াং প্রদেশের পশ্চিমাঞ্চলের সংখ্যালঘু উইঘুর মুসলিমদের ওপর চীনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে কথা বলার পর বেইজিং গত মার্চে যুক্তরাজ্যের কয়েকজন সংসদ সদস্যদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। তার পাল্টা হিসেবেই যুক্তরাজ্য পার্লামেন্ট গতকাল মঙ্গলবার চীনের রাষ্ট্রদূতের বিরুদ্ধে এই পদক্ষেপ নিয়েছে। এই প্রথমবারের মতো কোনো দেশের রাষ্ট্রদূতের বিরুদ্ধে এমন পদক্ষেপ নিল ব্রিটিশ পার্লামেন্ট।

হাউস অব কমন্সের স্পিকার লিন্ডসে হোয়েল এবং হাউস অফ লর্ডসের স্পিকার জন ম্যাকফাল বলেন, সংসদের কোনো অনুষ্ঠানে ঝেং জেগুয়াংয়ের কথা বলা ‘উপযুক্ত’ হবে না। কারণ চীনও আমাদের সংসদ সদস্যদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।

হোয়েল বলেন, ‘আমাদের দেশ ও সংসদ সদস্যদের মধ্যে স্থায়ী সম্পর্ক স্থাপনের জন্য আমি নিয়মিত বিশ্বজুড়ে রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে বৈঠক করি। কিন্তু আমি মনে করি না যে চীনের রাষ্ট্রদূতের জন্য কমন্স এস্টেটে এবং আমাদের কর্মস্থলে দেখা করা ঠিক হবে, যখন তার দেশ আমাদের কিছু সদস্যের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে’।

লন্ডনভিত্তিক টাইমস পত্রিকা এই নিষেধাজ্ঞাকে ‘অভূতপূর্ব হস্তক্ষেপ’ বলে বর্ণনা করেছে, যার বিরুদ্ধে চীন তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে।

চীনা দূতাবাস থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ব্যক্তিগত রাজনৈতিক লাভের উদ্দেশ্যে চীন ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে স্বাভাবিক বিনিময় এবং সহযোগিতার ক্ষেত্রে বাধা দেওয়ার জন্য যুক্তরাজ্য পার্লামেন্টের কিছু ব্যক্তির নিন্দনীয় এবং কাপুরুষোচিত পদক্ষেপ উভয় দেশের জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে এবং স্বার্থের জন্য ক্ষতিকর’।

উইঘুর মুসলিমদের প্রতি আচরণের বিষয়ে ‘মিথ্যা ও ভুল তথ্য’ প্রচার করার জন্য চীন মার্চ মাসে নয়জন ব্রিটিশ রাজনীতিবিদ, আইনজীবী এবং একজন শিক্ষাবিদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল।

উইঘুরদের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান চালানোর অভিযোগে চীনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্রিটেন, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং কানাডা ‘সমন্বিত পদক্ষেপ’ নেওয়ার পর চীন এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। যে ব্রিটিশ সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে চীন নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল তারা চীনে ব্রিটিশ বিনিয়োগ সীমিত করার প্রচারাভিযানে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। চীনে ব্রিটিশ বিনিয়োগ বন্ধ করার জন্য তারা যুক্তরাজ্যের বাণিজ্য আইন সংশোধনের উদ্দেশ্যে ‘গণহত্যা সংশোধনী’ শিরোনামে একটি সংশোধনী প্রস্তাবও সংসদে উত্থাপন করেছেন।

চীন যাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল তাদের মধ্যে রয়েছেন, প্রাক্তন কনজারভেটিভ পার্টির নেতা আইয়ান ডানকান স্মিথ, পার্লামেন্টের ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির চেয়ারম্যান টম তুগেনদাত এবং সংসদের উচ্চকক্ষের মানবাধিকার আইনজীবী হেলেনা কেনেডি।

সম্প্রতি হংকংয়ের ঘটনা এবং চীনের বাণিজ্য নীতি সহ বিভিন্ন ইস্যুতে লন্ডন এবং বেইজিংয়ের মধ্যে ক্ষুব্ধ বাক্য বিনিময় হচ্ছে।

মানবাধিকার কর্মী এবং জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কমপক্ষে দশ লাখ মুসলমানকে জিনজিয়াংয়ের ক্যাম্পে আটক করে রেখেছে চীন সরকার।

তবে চীন এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং বলেছে যে, ওই শিবিরগুলি মূলত পেশাগত দক্ষতা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং চরমপন্থার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য তৈরি করা হয়েছে।