চীনের কাছে মাথা নত না করার ঘোষণা তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট

তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েন বলেছেন, তার সরকার চীনের চাপের কাছে মাথা নত করবে না এবং গণতান্ত্রিক জীবনধারা রক্ষার জন্য দ্বীপের প্রতিরক্ষা জোরদার করা হবে।
গতকাল তাইওয়ানকে শান্তিপূর্ণভাবেই ফের চীনের সঙ্গে একত্রিত করার ঘোষণা দিয়েছিলেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং।
তার একদিন পরই আজ রবিবার তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট এই শক্তিশালী পাল্টা উত্তর দিলেন।
চীন তাইওয়ানকে তার নিজের বিচ্ছিন্ন ভূখণ্ড হিসেবে দাবি করে এবং তাইপেই বেইজিংয়ের শাসন মেনে নেওয়ার জন্য ক্রমবর্ধমান সামরিক ও রাজনৈতিক চাপের মুখে পড়ছে।
চলতি মাসের শুরুর দিকে বেশ কয়েক দিন চীন তাইওয়ানের আকাশ সীমায় যুদ্ধবিমান পাঠিয়ে তাইওয়ানের স্নায়ুর চাপ বাড়াচ্ছিল। রেকর্ড সংখ্যক চীনা যুদ্ধবিমান তাইওয়ানের বিমান-প্রতিরক্ষা এলাকার মধ্যে ঢুকে পড়ছিল।
শুধু অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহেই বেইজিং দ্বীপটির কাছাকাছি ১৪৯টি যুদ্ধ বিমান পাঠায়, এবং আন্তর্জাতিক উদ্বেগ ছড়িয়ে দেয়।
কিছু কিছু বিশ্লেষক বলছিলেন, চীনা যুদ্ধবিমানের এই উড্ডয়নগুলোকে তাইওয়ানের প্রেসিডেন্টের প্রতি একটি সতর্কবার্তা হিসেবে দেখা যেতে পারে। রবিবার তাইওয়ানের জাতীয় দিবস পালন করার পটভূমিতেই চীনা যুদ্ধবিমানের এই কর্মকাণ্ডকে দেখা হচ্ছিল।
আজ রবিবার রাজধানী তাইপেইতে প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের বাইরে জাতীয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক সমাবেশে ভাষণ দিতে গিয়ে তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই বলেন, তিনি তাইওয়ান প্রণালি জুড়ে উত্তেজনা কমানোর আশা করেছিলেন।
তিনি বলেন যে, তার সরকার ‘তাড়াহুড়ো করে কাজ করবে না’, কিন্তু এও বলেন যে, ‘এমন কোন বিভ্রান্তি থাকা উচিত নয় যে তাইওয়ানের জনগণ চাপের কাছে নত হবে’।
‘তাইওয়ান জাতীয় প্রতিরক্ষা জোরদার করা অব্যাহত রাখবে এবং আত্মরক্ষার জন্য আমরা আমাদের দৃঢ় সংকল্প প্রদর্শন করবে, যাতে চীন আমাদের জন্য যে পথ বেছে দিতে চায় তাইওয়ানকে যেন কেউ তা মেনে নিতে বাধ্য করতে না পারে’।
‘কারণ চীন যে পথটি নির্ধারণ করেছে তা তাইওয়ানের জন্য কোনো স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক জীবনধারা দেয় না এবং আমাদের ২ কোটি ৩০ লাখ মানুষের সার্বভৌমত্ব কেড়ে নেওয়ার প্রস্তাব করে’।
আনুষ্ঠানিকভাবে চীন প্রজাতন্ত্র নামে পরিচিত, তাইওয়ান একটি গণতান্ত্রিকভাবে শাসিত দ্বীপরাষ্ট্রে, যা চীনের উপকূল থেকে প্রায় ১৬১ কিলোমিটার (১০০ মাইল) দূরে অবস্থিত।
কমিউনিস্টরা ১৯৪৯ সালে চীনের ক্ষমতা দখল করার পর তাইওয়ান মূলভূমি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। কমিউনিস্টরা বেইজিংয়ে গণপ্রজাতন্ত্রী চীন প্রতিষ্ঠা করে এবং পরাজিত জাতীয়তাবাদীরা তাইওয়ানে পালিয়ে যায় এবং সেখানে একটি জাতীয় গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করে।
সত্যিকারের স্বাধীনতা থাকা সত্ত্বেও চীন তাইওয়ানকে একটি বিচ্ছিন্ন প্রদেশ হিসেবে দেখে এবং তাইওয়ানকে স্বায়ত্তশাসনের ‘এক দেশ, দুই সিস্টেম’ মডেলের প্রস্তাব দিয়েছে, যেভাবে হংকংয়ের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেছে চীন। কিন্তু তাইওয়ানের সব বড় দলই তা প্রত্যাখ্যান করেছে।
শি জিনপিং চীনের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর তাইওয়ানের সঙ্গে উত্তেজনা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। পাঁচ বছর আগে সাইয়ের নির্বাচনের পর তাইপেইয়ের সঙ্গে চীনের সরকারি যোগাযোগ ছিন্ন করেন শি।
বেইজিং তাইওয়ানের ৬৫ বছর বয়সী প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েনকে একজন বিচ্ছিন্নতাবাদী বলে ডাকে, যিনি তাইওয়ানকে ‘এক চীনের’ অংশ বলে স্বীকার করতে রাজি নন।
সাই রবিবার ‘সমতার’ ভিত্তিতে চীনের সঙ্গে কথা বলার প্রস্তাবের পুনরাবৃত্তি করেছিলেন।
তিনি বলেন, তাইওয়ানের শুভ ইচ্ছার পরিবর্তন হবে না এবং তার সরকার চীনের একতরফা কোনো প্রস্তাব মেনে নেবে না।
সাই সতর্ক করে দিয়েছেন যে, তাইওয়ানের পরিস্থিতি ‘গত ৭২ বছরের যে কোনো সময়ের চেয়ে আরও জটিল এবং তরল’।
তিনি বলেন, তাইওয়ান গণতন্ত্র রক্ষায় সামনের সারিতে দাঁড়িয়ে আছে।
‘আমরা যত বেশি চীন থেকে চাপের মুখোমুখি হব, তত বেশি শক্তি অর্জন করব। তাই আমি আমার সকল সহকর্মী নাগরিকদের মনে করিয়ে দিতে চাই যে, আমাদের পাহারাদারকে হতাশ করার সুযোগ আমাদের নেই’।
সাই একটি সামরিক আধুনিকীকরণ কর্মসূচির তত্ত্বাবধান করছেন দেশের প্রতিরক্ষা এবং প্রতিরোধ ক্ষমতা জোরদার করতে, যার মধ্যে রয়েছে চীনের গভীরে আঘাত করতে সক্ষম নিজস্ব সাবমেরিন এবং দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির কর্মসূচি। যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানকে সামরিক প্রশিক্ষণ ও বিভিন্ন সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে।
বিবসি-আলজাজিরা সহ আন্তর্জাতিক সাংবাদিকেরা সাই এর রবিবারের ভাষণকে চীনের প্রতি স্পষ্ট ‘অবাধ্যতার প্রকাশ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন যে তার ভাষণে ‘এই মুহূর্তে তাইওয়ানের জনগণের দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন ঘটেছে, যেখানে বেশির ভাগ মানুষ মূল ভূখণ্ড চীন থেকে চাপের বিরুদ্ধে সমানভাবে প্রতিরোধী’।
সাই তার বক্তৃতায় হংকংয়ের কথাও বলেছেন। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে হংকংয়ে নতুন নতুন নিরাপত্তা আইন বাস্তবায়নের অধীনে কিছু নাগরিক অধিকার এবং স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছে চীন। তিনি বলেন, এটি তাইওয়ানের জনগণের জন্য তা একটি সতর্ক বার্তা।