জন্মের দায়

ইট রড সিমেন্টের সমন্বয়ে প্রকৌশলী
নির্মাণ করেন বাড়ি। তার নির্মাণশৈলি
ঠিক করেন আর্কিটেক্ট। চিত্রশিল্পি
ইজেল ক্যানভাসে মনের রং ছিটিয়ে আঁকতে পারেন
ছবি। কবি অসস্র শব্দ গুছিয়ে আবলিলায়
লিখতে পারেন কবিতা।
কালের ঘটমান ঘটনা প্রবাহ গুছিয়ে
ইতিহাসবিদ লেখেন ইতিহাস।
রক্ত, গুলি, বিদ্রোহ, বিপ্লব সম্ভ্রম নারীর
দেশত্যাগী মানুষের নগ্ন পা, গেরিলা যুদ্ধে
ঢেলে দেওয়া প্রাণ, পোড়া বাড়ির ধোয়া
আর গন্ধ পঁচা লাশ জন্ম দেয় দেশ।
তাহলে এই দেশ স্রষ্টার নাম দেব কি?
প্রকৌশলী
আর্কিটেক্ট
শিল্পী
কবি
ঐতিহাসিক?
কি নাম তার!
এর কোন সহজ উত্তর নেই আমার কাছে।
তবে জানি
অনুমান করি
বিশ্বাস করতে বাধ্য হই- তিনি মানুষ।
বাঙালির হাজার বছরের উত্তোরাধীকারের
রক্তের ধারা বেয়ে হেটে হেটে আসা
এক শ্রেষ্ঠ বাঙালি মানুষ।
আমি এই দেশ নির্মাতার বাড়ি গিয়েছিলাম
অনেক অনেক দিন আগে। সে বলা যায়
এক বিরান বাড়ি।
এইখানে। হ্যা, ঠিক এইখানে
এই গহীন বিরান অঞ্চলে তাঁকে
গুলির আঘাতে হত্যা করে শুইয়ে দেওয়া হয়েছিলো।
আজকের মত এতটা ঝাঁ চকচকে
রাস্তা সেদিন ছিলো না।
ছিলো না এতো ইমারত, ছিলো না
সবুজ পাতাবাহার ছেটে বানানো নৌকা
জাম গাছের পাশে।
তার বাড়ির পথের ঢুকবার বাঁকেই
এক বেতস ঝারে দেখলাম, এক শিকারী
হাওয়াই বন্দুক হাতে বারবার
ছুঁড়ছে গুলি এক পাখির দিকে।
লক্ষ স্থির ছিলো না তার মোটেই; তাই সঙ্গী হলাম
ঐ শিকারীর সাথে। ছুড়লাম গুলি স্থির লক্ষ্যে,
প্রথম গুলিতেই লুটিয়ে পড়ল পাখি মাটিতে।
ফকিরের কেরামতি দেখার মতোই আমার সাথীদের অবস্থা।
একটা সাফল্যের অনুরনণ টের পেলাম
সমস্ত শরীর জুড়ে। এক হত্যা সে যে এতোটাই ভাবের জন্ম দেয়
শিকারী না হয়েও সেটা দারুন টের পেলাম।
তারপর এই দেশ কারিগরের বাড়ির পাশে
খোলা আকাশের নিচে
সবুজ ঘাসে ঢাকা কবরটা দেখে দেখে ভাবছিলাম
কী হতো পথের বাঁকে
গুলিটা না ছুঁড়লে?
গানের পাখিটা তো বেঁচে থাকতো পৃথিবীজুড়ে
গাইতো গান অবিরাম, আমাদেরই ঘরে।
তবে কেন মারলাম, কেন?
কেন দায় অনুভব করলাম না স্বাধীন জন্মের?