জমি দখলে বাধা দেওয়ায় ব্রিটিশ নাগরিকের ওপর হামলা

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার ধরখার ইউনিয়নের তন্তর গ্রামে প্রস্তাবিত একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জমি দখলে বাধা দেওয়ায় স্থানীয় একদল দখলদার একই গ্রামের বাসিন্দা ব্রিটিশ নাগরিক আল মামুন ভূঁইয়ার ওপর হামলা করে প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছেন।
এ ঘটনায় তন্তর গ্রামের মৃত আব্দুল কুদ্দুছ ভূঁইয়ার ছেলে আল মামুন ভূঁইয়া বাদী হয়ে আখাউড়া থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযোগে আশেক ভূঁইয়া, মাসুদ দীপু, আব্দুল্লাহ সরকার, আকরাম ও মাহবুবসহ মোট ১২ জনকে আসামি করা হয়েছে।
গ্রামবাসীরা জানান, চলতি বছরে স্থাপিত স্কুলটির প্রস্তাবিত নাম তন্তর আবদুল কুদ্দুছ ভূঁইয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়। প্রয়াত আবদুল কুদ্দুছ ভূঁইয়া ওই স্কুলটির প্রতিষ্ঠাতা।
থানায় দায়ের করা অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, গত শুক্রবার সকালে স্কুলের জমিতে এবং সন্ধ্যায় তন্তর বাজার খন্দকার মার্কেটের সামনে স্কুলের জন্য জমি দানকারী আল মামুন ভূইয়ার ওপর হামলা করে প্রাণনাশের হুমকি দেন আশেক ভূঁইয়ার নেতৃত্বে ১০/১২ জন।
আল মামুন ভূঁইয়া জানান, ওই গ্রামে সরকারি কোনো প্রাইমারি স্কুল না থাকায় গ্রামের লোকজনের চাহিদা ও পরামর্শ অনুযায়ী তার বাবার ওয়ারিশ সূত্রে পাওয়া তন্তর মৌজার ২০৮ দাগে ৪০ শতক জমি দান করে দিয়েছেন তিনি। আব্দুল্লাহ সরকারের নেতৃত্বে একদল লোক ওই জমির পশ্চিম পাশ দিয়ে প্রায় ১০ ফুট জমি দখল করে রাস্তা নির্মাণের চেষ্টা করেন। এতে তিনি সরাসরি বাধা দিলে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা করতে তেড়ে আসেন এবং তাকে হত্যার হুমকি দেন। স্কুলটা সুষ্ঠুভাবে হওয়ার জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকসহ স্থানীয় প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেন এ যুক্তরাজ্য প্রবাসী।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় আট নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ইয়াছিন ভূঁইয়া বলেন, আমার গ্রামের দীর্ঘদিনের একটা দাবি ছিল, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য। আমাদের গ্রাম থেকে ভাটামাথা ও ছতুরা প্রাইমারী স্কুলের দূরত্ব এক কিলোমিটারের ওপরে। এতো দূরে গিয়ে ছোট ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া করতে অনেক কষ্ট হয়। বিদ্যালয়ের কাজ এখন প্রক্রিয়াধীন আছে। স্কুলের জমির ওপর দিয়ে কিছু লোক জোর করে রাস্তা নিতে চাচ্ছেন। জানতে পেরেছি, নাছির, আশেক, তফাজ্জলসহ আরও কয়েকজনের কারণে স্কুলের কাজটা বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। অনেক বছর পর গ্রামে স্কুলটা হচ্ছে। এ কাজে যেন কেউ হস্তক্ষেপ করতে না পারে, সেজন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য আনিসুল হককে অবগত করা হয়েছে। আশা করি, তিনি এ ব্যাপারে গ্রামবাসীকে সহযোগিতা করবেন।
এদিকে প্রস্তাবিত ওই স্কুলের জমি দখল করে রাস্তা নির্মাণের অভিযোগ অস্বীকার করে আব্দুল্লাহ সরকার বলেন, স্কুলের জায়গায় অন্য কারও জমি নাই। রাস্তা নিয়ে আল মামুনের সঙ্গে কোনো সংঘর্ষ হয়নি। ঘরের পেছনে আমার জায়গা আছে। আমার রাস্তা লাগলে আমার জায়গায় রাস্তা তৈরি করব। এখানে আগে রাস্তা ছিল। গ্রামবাসীর স্বার্থে যদি রাস্তার দরকার হয়, রাস্তা করা হবে।
এসব বিষয়ে বক্তব্য জানতে অন্যান্য অভিযুক্তদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
ধরখার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আরিফুল হক বাছির বলেন, গত এক মাস আগে স্কুলের জন্য জায়গাটা দান করে দিয়েছেন যুক্তরাজ্য প্রবাসী মামুন। একটি কুচক্রী মহল স্কুলের জমির ওপর দিয়ে রাস্তা নিতে চাচ্ছিল বলে শুনেছি। ইচ্ছে করলেই জোর করে রাস্তা নেওয়ার কোনো সুযোগ নাই। কোনোভাবেই স্কুলের জায়গার ওপর দিয়ে রাস্তা নিতে পারবে না, গ্রামবাসী সেটা দেবে না। কীভাবে কাজ করলে দ্রুত স্কুলটা হয়ে যাবে, তার জন্য যোগাযোগ করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে আখাউড়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মাসুদুল ইসলাম বলেন, দুই পক্ষের দু’টি অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে ধরখার ফাঁড়ির পুলিশকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সত্যতা যাচাই শেষে আমরা বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেব।