জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবেলায় চাই কার্যকর উদ্যোগ

জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবেলায় চাই কার্যকর উদ্যোগ

সারা বিশ্ব জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবেলায় চোচ্চার হচ্ছে। মজার বিষয় হচ্ছে, জলবায়ু পরিবর্তনের এই নেতিবাচক প্রভাব যারা বিশে^র দেশে দেশে ছড়াচ্ছে তারা ঝুঁকিতে পড়ছে না। তারা প্রতি দিন, প্রতি ঘন্টায়, প্রতি মিনিট এবং প্রতি সেকেন্ডে যত পরিমাণ কার্বণ ছড়াচ্ছে ওই কার্বণে সবচেয়ে ক্ষতির মুখে রয়েছে মালদ্বীপ এবং বাংলাদেশ। যদিও প্রাকৃতিক কারণও এর সঙ্গে যুক্ত। যেমন সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা কমে হওয়ায় বাংলাদেশ কিছুটা ঝুঁকিতে পড়েছে। তবে সেটাও ওই উন্নত দেশের যথেচ্ছার কার্বন নিঃস্বরণ। যার ফলে বিশ্বের তামপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে, হিমালয়ের বরফ গলতে শুরু করেছে। আর এসব প্রভাব সমতল ভূমি হিসেবে পরিচিত ব-দ্বীপ খ্যাত বাংলাদেশকে ছুঁয়ে যাচ্ছে। আমরা চাই, এই প্রভাব মোকাবেলায় কার্যক্রর উদ্যোগ। চাই, জলবায়ু অর্থায়নের সর্বাধিক ব্যবহার নিশ্চিত হোক।

২০১০ খ্রিস্টাব্দে আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান জার্মান ওয়াচ-এর প্রকাশিত গ্লোবাল ক্লাইমেট রিস্ক ইনডেক্স (CRI) অনুযায়ী জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে ক্ষতির বিচারে ১০টি দেশ অতি ঝুঁকিতে রয়েছে। শীর্ষ ১০টি ক্ষতিগ্রস্ত দেশের মধ্যে প্রথমেই অবস্থান করছে বাংলাদেশ। ১৯৯০ থেকে ২০০৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ১৯৩টি দেশের ওপর এই সমীক্ষা চালানো হয়। এই প্রতিষ্ঠানের ২০০৭-২০০৮ খ্রিস্টাব্দে দেওয়া  প্রতিবেদনেও বাংলাদেশ সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে চিহ্নিত ছিল। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে সমুদ্রস্তরের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে ক্ষতিগ্রস্ততার বিচারে বিশ্বব্যাপী গবেষকগণ বাংলাদেশকে পোস্টার চাইল্ড (Poster Child) হিসেবে আখ্যা দিয়ে থাকেন।

আমরা জানি, কোন জায়গার গড় জলবায়ুর দীর্ঘমেয়াদী ও অর্থপূর্ণ পরিবর্তনকে জলবায়ু পরিবর্তন (Climate change)  বলা হয়। যার ব্যাপ্তি কয়েক যুগ থেকে কয়েক লক্ষ বছর পর্যন্ত হতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিভিন্ন কারণ রয়েছে। এর মধ্যে জৈব প্রক্রিয়াসমূহ, পৃথিবী কর্তৃক গৃহীত সৌর বিকিরণের পরিবর্তন, ভূত্বক গঠনের পাততত্ত্ব (plate tectonics), আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত উল্লেখযোগ্য। তবে বর্তমানে মানবসৃষ্ট কারণগুলোই বেশি দায়ি বলে বিবেচিত হচ্ছে। এগুলোর মধ্যে অতিমাত্রায় কার্বন নিঃস্বরণ। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের তাপমাত্রা, বায়ুচাপ বেড়ে যাচ্ছে। যা ভয়াবহ আকার ধারণ করে উন্নয়নশীল দেশের ওপর প্রভাব ছড়াচ্ছে।

তবে জলবায়ুর প্রভাব কিংবা অভিযোজন মোকাবেলায় আন্তর্জাতিকভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। যদিও সেটা অতি সামান্য। উন্নত দেশের ওপর কার্বন নিঃস্বণের ক্ষতিপূরণ দাবি করা হচ্ছে। জলবায়ুর ক্ষতি মোকাবেলায় উন্নত দেশসমূহ অর্থায়ন করছে উন্নয়নশীল দেশসমূহে। যার একটা অংশ বাংলাদেশেও আসছে। কিন্তু ওই সহায়তার অর্থ সঠিকভাবে ব্যবহার হচ্ছে না। জলবায়ু অর্থায়নে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নেই এমন অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে। একই সঙ্গে জলবায়ুর ঝুঁকি মোকাবেলায় দেওয়া অর্থ অন্য খাতে ব্যবহারেও অভিযোগ উঠছে। যেমন দেশের গ্রামীণ জনপদে সড়ক নির্মাণে জলবায়ু তহবিল অর্থায়ন দিচ্ছে। এছাড়া সেতু, কালভার্ট, গাছ লাগানো থেকে শুরু করে নানা প্রকল্পে জলবায়ু তহবিল থেকে অর্থায়ন দেওয়া হচ্ছে। ওইসব প্রকল্প সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না সেটা তদারকিও হচ্ছে না।

বাংলাদেশে একাধারে সমুদ্রস্তরের উচ্চতা বৃদ্ধি, লবণাক্ততা সমস্যা, হিমালয়ে বরফ গলার কারণে নদীর দিক পরিবর্তন, বন্যা ইত্যাদি সবগুলো দিক দিয়েই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগের মাত্রাও অনেক অনেক বেশি। বাংলাদেশ, জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে। তাই জলবায়ু প্রভাব মোকাবেলায় আমাদের যৌক্তিকভাবেই প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

আমরা চাই, জলবায়ু অর্থায়নে নেওয়া প্রকল্পগুলোর কাজের ক্ষেত্রে টেকসই, কাঙ্খিত উপকার যাতে আসে সেব্যাপারে নিশ্চয়তা থাকতে হবে। এটা কেবল সরকারি নয়, সরকারি ও বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। জলবায়ু অর্থায়নে নেওয়া সরকারি বেসরকারি সব পতিষ্ঠনকে দায়িত্বশীল ভূমিকা নিতে হবে। কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে নাগরিক সম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে।