জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি, লঞ্চে সুদিন কবে ফিরবে

গত ২৬ জুন যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে পদ্মা সেতু। তার পর থেকেই ঢাকা বরিশাল নৌ পথে যাত্রী কমতে থাকে। এতে লঞ্চে শিল্পে নেমে আসে দুর্দিন। এর পরে গত ২৬ জুলাই পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই যাত্রী সংকটের কারণে দিনের বেলায় চলাচলরত বিলাসবহুল গ্রীন লাইন-৩ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
ঢাকা-বরিশাল নৌ পথে এতো সংকটের মধ্যে আবার নতুন সংকট হয়ে দাঁড়িয়েছে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি। ফলে চিন্তায় পরেছে লঞ্চ মালিকরা। ইতিমধ্যে ডিজেলের দাম বৃদ্ধি অন্যদিকে পদ্মা সেতু হওয়ার পর যাত্রী কমে যাওয়ায় এ দুই কারণ দেখিয়ে লঞ্চের ভাড়া দ্বিগুণ করার প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ লঞ্চ মালিক সমিতি। তবে তারা কি ঘুরে আবার আগরে মত ঘুড়ে দাড়াঁতে পারবে সেই প্রশ্নই এখন সবার মাঝে ঘুরপাক খাচ্ছে। তবে সাধারণ যাত্রীদের দাবী, ভাড়া কমিয়ে যাত্রী সেবার মান ভালো দিলে কিছু যাত্রী লঞ্চে চলাচল করবে।
লঞ্চমালিক সূত্রে জানাযায়, ২০২১ সালের ৮ নভেম্বর যাত্রীবাহী লঞ্চের নতুন ভাড়া সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। প্রতি কিলোমিটার দূরত্বের জন্য ৬০ পয়সা বৃদ্ধি করা হয়। আগে ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া ছিল ১ টাকা ৭০ পয়সা। ১০০ কিলোমিটারের পর প্রতি কিলোমিটারে ১ টাকা ৪০ পয়সার ভাড়া বৃদ্ধি করে ২ টাকা করা হয়েছে। তা বৃদ্ধি করে ২ টাকা ৩০ পয়সা করা হয়েছে। তবে এটি বাড়িয়ে লঞ্চ মালিকরা ৪ টাকা ৬০ পয়সা রাখার প্রস্তাব দিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ’কে।
এদিকে পদ্মা সেতু চালুর পরে লঞ্চে যাত্রী কম হওয়ায় ভাড়া কমানো হয়। সিঙ্গেল কেবিনের পূর্বে ভাড়া ১ হাজার ৪’শ টাকার স্থানে বর্তমানে নেওয়া হচ্ছে ১ হাজার ২’শ টাকা। ডাবল কেবিনের পূর্বের ভাড়া ছিলো ২ হাজার ৫’শ টাকা, সেখানে বর্তমানে ২ হাজার ২’শ টাকা নেওয়া হচ্ছে। এসি কেবিনে পূর্বের ভাড়া ২ হাজার ৫’শ টাকা, বর্তমানে ২ হাজার ২’শ টাকা। সোফার পূর্বের ভাড়া ৭০০ টাকা, বর্তমানে নেয়া হচ্ছে ৫০০ টাকা। ভিআইপি কেবিন ৮ হাজার টাকা পর্যন্ত নেয়া হচ্ছে।
সরকার নির্ধারিত ডেক ভাড়া এখন ৩৫২ টাকা, সেখানে নেওয়া হতো ৩৫০ টাকা। তবে বর্তমানে ১৫০ টাকা থেকে ২০০ টাকায় যাত্রী তুলতে দেখা যায়।
লঞ্চের একাধিক ম্যানেররর দাবি, জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি, অন্যদিকে যাত্রী কম থাকায় লঞ্চের ভাড়া না বাড়ালে আর্থিকভাবে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
লঞ্চের স্টাফ মো. শাকিল বলেন, ‘প্রতিদিন ঢাকা-বরিশাল অসি-যাই কিন্তু আগের মতো যাত্রীর চাপ নেই। ডেকে কিছু যাত্রী হলেও ভাড়া কম। অন্যদিকে লঞ্চের কেভিন থাকে ফাঁকা। তার মধ্যে আবার তেলের দাম বেড়েছে। এখন আমরা শঙ্কায় আছি। কারণ লঞ্চ না চললে আমাদরে চাকরির কি হবে?’
লঞ্চ ঘাটের হকার মো. শহিদুল বলেন, ‘মোরা ঘাটে প্রায় ৫০ জনের বেশি হকার আছি এখন ২০০ টাকা নিয়াও ঘরে যাইতে পরি না। আগে ৬০০ থেকে ১ হাজার টাকা পাইতাম। এহন মোরা বিপদে আছি। যাত্রী নাই ঘাটে।’
এদিকে সমিতির সভাপতি মাহবুব উদ্দিন আহমেদ জানান, পদ্মা সেতু চালুর পর যাত্রী কমে যাওয়া এবং জ্বালানি তেলসহ আনুষঙ্গিক ব্যয় বেড়ে যাওয়ার কারনে শতভাগ বাড়ানোর জন্য বিআইডব্লিউটিএ বরাবর চিঠি দেওয়া হয়েছে। সোমবার (৮ আগস্ট) দুপুরে এ বিষয়ে বৈঠক হওয়া কথা রয়েছে।
এদিকে বরিশাল বাস টার্মিনালে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ‘তেলের দাম বৃদ্ধির পরেও ঢাকা-বরিশাল যাত্রী সেবা অবাহ্যত আছে। ঢাকা-বরিশাল দুই পারেই যাত্রীদের চাপ রয়েছে বলে জানান একাধিক বাস কাউন্টার ম্যানেজারা।
উল্লেখ্য, ৫ আগস্ট রাত ১০টায় জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় এক প্রজ্ঞাপন জারি করে দেশে ভোক্তা পর্যায়ে লিটারপ্রতি ডিজেল ১১৪ টাকা, কেরোসিন ১১৪, অকটেন ১৩৫ ও পেট্রলের দাম ১৩০ টাকা নির্ধারণ করেছে; যা আগের চেয়ে ডিজেলে লিটারে ৩৪ টাকা, অকটেনে ৪৬ টাকা এবং পেট্রলে ৪৪ টাকা বেশি।