টিকা সংগ্রহ করুন, মেগা প্রজেক্ট স্থগিত করেন

মেগা প্রজেক্ট স্থগিত করে সকল উৎস থেকে টিকা সংগ্রহ করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শনিবার বিএনপি চেয়ারপার্সনের গুলশান রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্তের কথা জানাতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ আহ্বান জানান।
ফখরুল বলেন, টিকা সংগ্রহে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং সমগ্র জনগোষ্ঠীকে টিকা প্রদানের জন্য প্রয়োজনে মেগা প্রজেক্ট স্থগিত করে হলেও সম্ভাব্য সকল উৎস থেকে টিকা সংগ্রহ করতে হবে। আন্তর্জাতিক মান অক্ষুণ্ণ রেখে দেশে টিকা উৎপাদনের ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নিতে হবে।
তিনি আরো বলেন, ডেল্টা করোনা ভাইরাসের মারাত্মক সংক্রমণ বৃদ্ধি অব্যাহত থাকা সত্যেও বিশেষজ্ঞদের মতামতকে উপেক্ষা করে লকডাউন শিথিল এবং ২ দিন পরেই ১৯ তারিখ হতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ব্যতীত সব কিছু খুলে দেয়ার সিদ্ধান্তে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। কারণ এই সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী। করোনা সংক্রমণের এবং মৃত্যুর সংখ্যা হ্রাস না পাওয়ার পরেও এই সিদ্ধান্ত জনবহুল এই দেশে সংক্রমণ বৃদ্ধির আরো বেশি আশংকা দেখা দিয়েছে।
টিকা সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বিতরণের সরকার কোনো বিজ্ঞান সম্মত, বাস্তব সম্মত ব্যবস্থাপনা তৈরি করতে পারেনি অভিযোগ করে তিনি বলেন, দুর্নীতির আশ্রয় গ্রহণ করে অন্যান্য উৎস থেকে টিকা প্রাপ্তির সম্ভাবনা বিনষ্ট করেছে। বিএনপি মনে করে, টিকা নিয়ে বিএনপি কোনো রাজনীতি করছে না। অপরাজনীতি করছে আওয়ামী লীগ সরকার। মিথ্যা ও ভুল তথ্য দিয়ে একদিকে জনগণকে প্রতারণা করছে, অন্যদিকে জনগণকে চরম দুর্ভোগ ও ভোগান্তির মধ্যে ফেলেছে।
‘সরকারের হিসাবেই দেখা যাচ্ছে ২ ডোজ টিকা পেয়েছে মাত্র ৫২ লাখ মানুষ। প্রথম ডোজ পেয়েছে ১ কোটি ৫৩ লক্ষ। অথচ জনসংখ্যা প্রায় ১৮ কোটি। আজ পর্যন্ত সরকার সুনির্দিষ্ট কোনো রোড ম্যাপ দিতে ব্যর্থ হয়েছে। টিকা নিয়ে এই প্রতারণা অপরাধের সামিল। জনগণের জীবন বিপন্ন করার সকল দায় এই সরকারকেই বহন করতে হবে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, খুলনার রূপসায় মন্দির, দোকান ও হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িতে হামলা, সাম্প্রতিক সময়ে মৌলভীবাজার কুলাউড়ায় খাসিয়াদের উপর হামলা, পটুয়াখালীর রাখাইন গ্রামে উচ্ছেদের হুমকির তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। এই সকল সাম্প্রদায়িক ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও ব্যবস্থা গ্রহণে সরকারের নির্লিপ্ততার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। অবিলম্বে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।
মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট ছাপানো বন্ধ করায় উদ্বেগ প্রকাশ করে ফখরুল বলেন, সরকারের এই সিদ্ধান্তের ফলে বিদেশে কর্মরত এবং দেশে ফেরত আসা প্রবাসীরা চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। ইতিমধ্যে অনেক প্রবাসী চাকুরী হারিয়েছে, অনেকে বিদেশে বিব্রতকর অবস্থার সম্মুখীন হয়েছে। একদিকে কর্মচ্যুতির কারণে রেমিট্যান্স হ্রাস পাওয়ার আশংকা অন্যদিকে পাসপোর্ট না পাওয়াতে ব্যবসা বাণিজ্য এবং আন্তর্জাতিক কর্মকাণ্ডে অচলাবস্থা সৃষ্টি হওয়ার আশংকা তৈরি হয়েছে। অবিলম্বে পাসপোর্ট প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানাচ্ছি।
ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, সরকার ও সিটি কর্পোরেশনগুলোর ব্যর্থতার কারণে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ক্রমশ ভয়াবহ আকার নিচ্ছে। সিটি কর্পোরেশনগুলো এডিস মশা নিধনের বাস্তব সম্মত কোন উদ্যোগ নিতে ব্যর্থ হয়েছে। জনগণকে সম্পৃক্ত করে এডিস মশা নিধনের কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।
ফখরুল বলেন, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে জড়িত করবার হীন প্রচেষ্টার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে ইতিহাসকে বিকৃত ও নিকৃষ্ট মিথ্যাচার করে জনগণকে বিভ্রান্ত করবার অপচেষ্টা চালাচ্ছে সরকার। এই ধরনের অপপ্রচার প্রকৃত সত্যকে আড়াল করবার একটা অপচেষ্টা মাত্র। এই ধরনের নিকৃষ্ট মিথ্যাচার থেকে বিরত থাকবার আহ্বান জানাচ্ছি।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানেরর সভাপতিত্বে বৈঠকে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বেগম সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু উপস্থিত ছিলেন।