ঢাকা বিশ্বদ্যালয়ের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ দূর করতেই হবে

ঢাকা বিশ্বদ্যালয়ের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ দূর করতেই হবে

আর মাত্র কটা দিন। তারপরই শুরু হবে মেডিকেল কলেজ, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়, বুয়েটসহ বিভিন্ন বিশ^বিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা। সারা দেশে শিক্ষার্থীরা ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছে। ভর্তিইচ্ছু শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকার শীর্ষে রয়েছে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়। এ ছাড়া বুয়েট ও মেডিকেলে ভর্তির জন্যও পছন্দের তালিকায় অন্যত শীর্ষে অবস্থান করছে। এসব প্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য তীব্র প্রতিযোগিতা চলে। সেই প্রতিযোগিতায় সেরাদের সেরা শিক্ষার্থীরা পেয়ে থাকেন পছন্দের বিশ্বদ্যালয় এবং মেডিকেল কলেজ। কিন্তু ঢাকা বিশ্বদ্যালয়ের মতো সেরা বিশ্বদ্যালয়ে পরীক্ষা ছাড়া শিক্ষার্থী ভর্তির অভিযোগ ওঠায় শিক্ষার্থীদের উদ্বেগে ফেলেছে। তারা প্রতিযোগিতা করেও মেধা অনুযায়ী ভর্তির সুযোগ পাবে কি না সেই সংশয় দেখা দিয়েছে।

বেশ কিছু বছর ধরে ভর্তি পরীক্ষাসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে আসছে। প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের বেশকিছু সদস্যর বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। যা অব্যাহতভাবে চলছে। বিশেষ করে মেডিকেল কলেজ ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে অভিযোগ একটু বেশিই শোনা যায়। তবে ঢাকা বিশ্বদ্যালয়সহ অন্যান্য পাবলিক বিশ^বিদ্যালয়ের প্রশ্নপত্র ফাঁস হচ্ছে এমন অভিযোগ প্রায়শই শোনা যায়। যদিও বিশ^বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এসবকে গুজব বলে উড়িয়ে দিচ্ছেন।

সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা ছাড়া শিক্ষার্থী ভর্তি করার অভিযোগ ওঠায় বড় ধরণের শংকায় ফেলেছে আমাদের। বিশেষ করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের। আমরা বলতে চাই, ঢাকা বিশ্বদ্যালয়ের মতো মর্যাদাসম্পন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি পরীক্ষা ছাড়া ভর্তি হয়ে থাকলে সেটা উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কালিমা লেপনের মতো ঘটনা। ভর্তি পরীক্ষা ছাড়া ভর্তি হয়ে কেউ কেউ বিশ্বদ্যালয়ের ছাত্রসংসদে (ডাকসু) প্রতিনিধিত্ব করছে এমন ঘটনা ঘটলেও সেটা আমাদের লজ্জায় ফেলবে। একই সঙ্গে এই অভিযোগের সঙ্গে ঢাকা বিশ্বদ্যালয়ের উপাচার্যসহ একাধিক শিক্ষকের সম্পৃক্ততার অভিযোগও উঠেছে। এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে শিক্ষাবিদসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) উদ্বেগ প্রকাশ করে অভিযোগ আমলে নিয়ে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে।

ঢাকা বিশ্বদ্যালয়ে পরীক্ষা ছাড়া ছাত্র ভর্তির অভিযোগের ফলে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের ভর্তি প্রক্রিয়া নিয়ে আস্থার সংকট আরো ঘনীভূত হয়েছে। এটা মোকাবিলার জন্য দ্রুত এবং বাস্তবমূখী পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে যাদের বিশ্বদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ দেওয়া হয়েছে তাদের অনেকে ডাকসু নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন বলে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। ওই অভিযোগ সঠিক হলে তা হবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতারণার শামিল। উত্থাপিত অভিযোগ বাংলাদেশে উচ্চ শিক্ষার ভবিষ্যৎ তথা মেধাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার সকল প্রত্যাশার জন্য অশনি সংকেত।

টিআইবির মতো আমরা মনে করি, বিশ্বদ্যালয়ের শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করা যেমন ঢাকা বিশ্বদ্যালয়ের মত প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা ও সুনাম অক্ষুণ্ন রাখার জন্য অপরিহার্য। তেমনি নিয়মনীতি অনুসরণ করে সমান প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র নিশ্চিত করে স্বচ্ছতা ও শুদ্ধাচার চর্চার মাধ্যমে ভর্তি প্রত্যাশী সকল শিক্ষার্থীদের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠার বাস্তব দৃষ্টান্ত স্থাপন করাও কর্তৃপক্ষের গুরু দায়িত্ব। এক্ষেত্রে কোন প্রকার ব্যত্যয় বিশ্বদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নিকট গ্রহণযোগ্য হবে না।

আমরা চাই, বিশ^বিদ্যালয়ে ছাত্রত্বের অবস্থাকে রাজনৈতিক বা অন্যকোন সুবিধা অর্জনের মাধ্যম হিসেবে পরিণত করার যে কোন প্রয়াসকে কর্তৃপক্ষ প্রতিহত করবে। অন্যথায় গুণগত শিক্ষার প্রসারের মাধ্যমে যুগোপযোগী বৈশ্বিক প্রেক্ষিতে যোগ্য মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে ওঠার জন্য যুব সমাজের যে স্বপ্ন তা ধূলিস্যাৎ হবে। রাজনৈতিক বিবেচনায় বা অন্য কোন সাময়িক সুবিধান্বেষী চক্রান্তের কাছে জিম্মি হয়ে থাকলে, ঢাকা  বিশ্বদ্যালয় কর্তৃপক্ষকেই এ ধরণের আত্মঘাতী অবস্থান প্রতিরোধে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। ঢাকা  বিশ্বদ্যালয়ের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে, সেই অভিযোগ নিরসনে ঢাকা বিশ্বদ্যালয় কর্তৃপক্ষকেই ভূমিকা রাখতে হবে। যাতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা আস্থা ফিরে পায় এবং ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি নষ্ট না হয় সেই গুরুদায়িত্ব নিয়ে প্রামাণ করতে হবে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় তাঁর সুনাম ক্ষুন্ন হতে দেয়নি।