তদন্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অন্যের ভিসেরা রিপোর্টে অভিযুক্ত করার অভিযোগ

স্বামীকে ফাঁসানোর জন্য স্ত্রীর ভিসেরা রিপোর্ট না দিয়ে অন্যের ভিসেরা রিপোর্ট দিয়ে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিলের অভিযোগ উঠেছে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
সোমবার বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন করে ওই অভিযোগ করেছেন ঝালকাঠি জেলার কাঠালিয়া উপজেলার বলতলা এলাকার বাসিন্দা বশিরুজ্জামান রাজু।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বশিরুজ্জামান বলেন, ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারি রাতে তার স্ত্রী দুলালী খাতুন স্বামীর বসতঘরে হঠাৎ অসুস্থ হলে তাকে ভান্ডারিয়া থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাবার পর কর্মরত চিকিৎসক মৃত বলে ঘোষণা করেন। এরপর দুলালীর মৃতদেহ ভান্ডারিয়া থানার অর্ন্তভুক্ত তার বাবার বাড়ি ‘চরআইল গ্রামে নেয়া হয়। খবর শুনে তার ভাই-বোনেরা তাদের নিজ বাড়িতে আসে। তারা লাশের ময়নাতদন্ত করবে এমন প্রশ্ন তুললে ভান্ডারিয়া থানা পুলিশ দুলালীর মৃতদেহের প্রাথমিক সুরতহাল রিপোর্ট কার্যক্রম সম্পন্ন করেন এবং ময়নাতদন্তের অনুকূলে ভান্ডারিয়া থানার এসআই দেলোয়ার হোসেন একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। ২৯ জানুয়ারী বিকেলে ভান্ডারিয়া থানা পুলিশ দুলালীর স্বামী রাজুকে তার শ্বশুর বাড়ি থেকে আটক করে কাঠালিয়া থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন।
রাজু জানান, ৩০ জানুয়ারি তার শহিদুল ইসলামের স্ত্রীর বড় ভাই নজরুল ইসলাম তাকে সমঝোতার প্রস্তাব দেয়। যেখানে তিনি ৩০ লাখ টাকা দিলে কোন মামলা হবে না বলে জানায়। কিন্তু তাতে রাজি না হওয়ায় ৩০ জানুয়ারি শ্যালক শহিদুল কাঠালিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যেখানে স্ত্রী দুলালী বেগমকে শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন করার কথা উল্লেখ করা হয়। আর নির্যাতন সইতে না পেরে দুলালী কীটনাশক সেবন করার কথাও বলা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে রাজু অভিযোগ করেন সেই রাতে কাঠালিয়া থানার তৎকালীন ওসি তাকে বেধরক মারধর করে এবং ক্রসফায়ারের হুমকি দেয়। আর পরের দিন ওই মামলায় রাজুকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে প্রেরণ করা হয়। ওই মামলায় ৪ মাস আমি জেল হাজতে ছিলেন। হাজতে থাকাবস্থায় মৃত দুলালীর বোন নাসরিন বেগম বাদি হয়ে একই ঘটনার অনুকূলে আদালতে আরো দুটি হত্যার অভিযোগে মামলা দায়ের করেন। যে সকল মামলায় তদন্তকারী কর্মকর্তা হলেন ঝালকাঠির কাঠালিয়া থানার এসআই মো. মাহমমুদুর রহমান।
তিনি বলেন, ২০১৯ সালের ২১ আগস্ট ঢাকার মহাখালি থেকে পিরোজপুর জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ে দুলালী খাতুনের ভিসেরা রিপোর্ট আসে। যার নং ২৫৫৭৩বি। এরপর ভান্ডারিয়া থানার এসআই দেলোয়ার হোসেন তার দায়েরকৃত সাধারণ ডায়রীর অনুকূলে পিরোজপুর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একই সালের ২৫ আগস্ট মৃত দুলালী খাতুনের ভিসেরা রিপোর্টসহ চুড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। যে ভিসেরা রিপোর্টে দুলালীর মৃতদেহে বিষের কোন আলামত পাওয়া যায়নি। দুলালীর মৃত্যুর কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়, নি¤œ রক্ত চাপের কারণে মৃত্যু হয়েছে।
তবে দুলালীর ২৫৫৭৩বি নম্বরের ভিসেরা রিপোর্টের স্থানে পিরোজপুর সদর থানায় ১৪ জুন দায়েরকৃত মামলার ভিকটিম সুমনা খাতুন (১৫) এর ভিসেরা রিপোর্ট (নং ২৯২৯৪বি) দিয়ে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন রাজুর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত তিনটি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কাঠালিয়া থানার এসআই মো. মাহমমুদুর রহমান। দুই ভিসেরা রিপোর্টে দুই রকম তথ্য। হত্যা মামলার স্পর্শকাতর স্থানে অর্থাৎ অন্যের ভিসেরা রিপোর্ট দিয়ে আদালতে জালিয়াতিপূর্বক পরপর তিনটি মামলার চার্জশিটে একই ভিসেরা রিপোর্ট প্রেরণ করে এসআই মো. মাহমমুদুর রহমান।
তিনি বলেন, দুলালীর বোন নাসরিন বেগম বাদী হয়ে যে দুটি মামলা দায়ের করেছেন তার মধ্যে একটি বর্তমানে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) তদন্ত করছে।
রাজু জানায় তার স্ত্রী মৃত দুলালী শারিরীকভাবে আগে থেকেই অসুস্থ ছিলেন, ২০১৮ সালে তার হৃদরোগ ধরা পড়লে তার চিকিৎসাও চলছিলো। কিন্তু তার মৃত্যুর পর ভাই শহিদুল ও বোন নাছরিন তিনটি মামলা দায়ের করেছেন। যার এক একটি মামলায় একেক ধরণের অভিযোগ তোলা হয়েছে। দুলালীর বোনরে দুটি দায়েরকৃত মামলার একটিতে শ্বাসরোধ এবং অপরটিতে বিষ দিয়ে দুলালীকে হত্যা করা হয় বলে উল্লেখ করা হয়। জেলে থাকা ও জামিনে মুক্ত হওয়ার পর তিনি ও তার বাবা ৩০ লাখ টাকায় বিষয়টি রফাদফা করারও প্রস্তাব পান। যেখানে টাকা পেলে মামলা বাদিরা উঠিয়ে নেবেন বলেও তাকে জানানো হয়। কিন্তু তিনি তাতে রাজী নন।
তিনি বলেন, দুলালী খাতুনের ভিসেরা রিপোর্ট নং ২৫৫৭৩বি হলেও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা একই ঘটনার অনুকূলে দায়েরকৃত পৃথক তিনটি মামলায় দুলালীর স্থানে সুমনা খাতুনের ভিসেরা রিপোর্ট নং ২৯২৯৪বি দিয়ে স্ত্রী হত্যায় অভিযুক্ত বশিরউজ্জামান রাজুকে দোষী সাব্যস্ত করে জালিয়াতিপূর্বক আদালতে চার্জশিট প্রেরণ করেছে ঝালকাঠির কাঠালিয়া থানার এসআই মো. মাহমমুদুর রহমান। এ ঘটনায় রাজু সুষ্ঠু ও ন্যায় বিচার দাবি করেছে। সাথে সাথে প্রকৃত রহস্য উদঘাটন ও অন্যায়ভাবে তাকে যারা ফাঁসাচ্ছে তাদের বিচারও দাবি করেন।
বিষয়টি ভুল হয়েছে জানিয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ঝালকাঠির কাঠালিয়া থানার এসআই মো. মাহমমুদুর রহমান বলেন, দুটি পাতা একসঙ্গে আসায় ভূলবসত এটি হয়েছে। যা সংশোধন করা হবে। আর ভূল হতেই পারে সংশোধন করা হবে। তারিখের দিন ভূল সংশোধনের আবেদন করা হবে। তবে ভূল ভিসেরা রিপোর্টে রাজুকে অভিযুক্ত করে অভিযোগ পত্র দাখিলের বিষয়ে তিনি বলেন, সেটিও সংশোধন করা হবে।
কাঠালিয়া থানর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পুলক চন্দ্র রায় বলেন, মামলা ও অভিযোগপত্র দাখিলের পুরো ঘটনা আমার যোগদানের আগে। আমি চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে এ থানায় যোগদান করেছি। তাই এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে বিস্তারিত বলা সম্ভব হবে। তবে এক সপ্তাহ আগে আদালত তদন্তকারী কর্মকর্তাকে শোকজ করছে। আর আমরাও বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।