২০১৯-২০ অর্থ বছরের বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী বাজেট নিয়ে আত্মতুষ্টির কথা বলেছেন। আবার বাজেট জনবান্ধব হয়নি, প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে না। বাজেট হতাশাজনক, ভোট ডাকাতির বাজেট। বাজেট ঘোষণার পরপরই সিপিডি, বাম গণতান্ত্রিক জোট, ঐক্যফ্রন্টসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা এরকম নানা বিব্রিতি ও মন্তব্য কছেছেন। আমরা বলতে চাই বাজেটে নানা ধরণের অসঙ্গতি থাকতে পারে। তারপরও বাজেট সামনে যাওয়ার আশা জাগায়। আমরা সেই আশার স্বপ্নের সঠিক বাস্তবায়ন দেখতে চাই।
আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতিটি বাজেটই রেকর্ড ভেঙেছে। এবার তৃতীয় মেয়াদের প্রথম বাজেটেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটেই তার প্রমাণ। এবার ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। আগের বাজেটের আকার ছিল চার লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা। সে হিসেবে ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাজেটের আকার বেড়েছে ৫৮ হাজার ৬১৭ কোটি টাকা।
সম্ভাব্য বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ ধরা হয়েছে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা। যা চলতি অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে ২০ হাজার ৬৫৭ কোটি টাকা বেশি। বাজেটের এই ঘাটতি পূরণে অভ্যন্তরীণ উৎসের ঋণই মূল ভরসা। এ ঋণ ব্যাংকিং খাত ও সঞ্চয়পত্র থেকে নেওয়া হবে। এছাড়া নতুন বাজেটে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা (জিডিপির ১৩.১ শতাংশ)। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) খাতে ১ লাখ ৯৮ হাজার ৩০০ কোটি টাকা (জিডিপি’র ৬ দশমিক ৮ শতাংশ) ধরা হয়েছে।
বাজেট ঘোষণার পর সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য মন্তব্য করেছে, ‘বাজেট উপস্থাপনায় নিঃসন্দেহে নতুনত্ব ছিল। আমরা সেটাকে স্বীকার করি, সেটাকে সাধুবাদ জানাই। কিন্তু প্রস্তাবনার ভিতরে সেই নতুনত্বের কতখানি উপস্থাপন হয়েছে সেটাই এখন দেখার বিষয়। রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ২২ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে নিয়ে এসেছেন। কিন্তু প্রকৃত অর্থে এটা ৮৫ হাজার কোটি টাকা কম হবে বলে আমাদের বিবেচনায় আছে।’
নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহামন মান্না বাজেটকে হতাশার বজেট বলেছেন। তিনি মন্তব্য করেছেন, ‘বাজেটে শিক্ষা-স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ কম, সামাজিক নিরাপত্তা নেই, বয়স্কদের জন্য কিছু নেই। বড় ধরণের ঘাটতির বাজেট। সবচেয়ে বড় কথা রাজস্ব আয় করা নিয়ে বড় ধরনের হুমকি রয়েছে।’
বাম গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট বিবৃতিতে বলেছেন, ‘শিক্ষা খাতে ১৬.৫% বরাদ্দ দেখানো হলেও বাস্তবে এটা সাধারণ শিক্ষা, কারিগরি শিক্ষা, মাদরাসা শিক্ষা, ক্যাডেট কলেজ, সামরিক শিক্ষা এবং ২৮ মন্ত্রণালয়ের ট্রেনিংকে যুক্ত করে দেখানো হয়েছে। এতে বরাদ্দ কিছুটা বাড়ানো হয়েছে বলে যে দাবি করা হচ্ছে তা শুভঙ্করের ফাঁকি। কৃষি খাতের যে বরাদ্দ তাও কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ, ভূমি, বন ও পরিবশে, পানিসম্পদ এ ৫ মন্ত্রণালয়ের যৌথ বরাদ্দ। তাই এই বাজেট ভোট ডাকাতির বাজেট।’
আমরা এই বাজেট আমাদের আগামীর পথে আরো একধাপ এগিয়ে নেওয়ার বাজেট বলে মনে করতে চাই। কৃষি নির্ভর বাংলদেশ এখনো কৃষির ওপরই মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। যদিও আমরা অন্যান্য ক্ষেত্রেও এগিয়ে চলেছি। কিন্তু আমদের বাজেট এখনো কৃষিকে সেভাবে ছুঁয়ে যেতে পারেনি। কৃষি খাতের যে বরাদ্দ সেটা কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ, ভূমি, বন ও পরিবশে, পানিসম্পদ এই ৫ মন্ত্রণালয়ের যৌথ বরাদ্দ। যা কৃষি ক্ষেত্রে এক ধরণের ফাঁকি দেওয়ার মতো অবস্থা। বাজেট বিশ্লেষণ শেষে কৃষি ক্ষেত্রে আরো গুরুত্ব দেওয়া হবে সেই প্রত্যাশা করছি।
কেবল কৃষির কথা বললে ভুল হবে। একই সঙ্গে আমাদের বাজেটে শিক্ষা, সংস্কৃতি ক্ষেত্রেও সেভাবে বরাদ্দ থাকছে না। যদিও শিক্ষা ক্ষেত্রে কিছুটা বাড়ানোর দাবি করা হয়েছে। তবে সেটা ধনীদের জন্যই মনে হচ্ছে। সাধাণ পর্যায়ে এই বাজেট শিক্ষা ক্ষেত্রে সেরকম প্রভাব ফেলবেনা বলেই মনে হচ্ছে। সেই দিকে আরো বিশেষভাবে নজর দেওয়ার হোক সেটা আশা করি।
বাজেট নিয়ে বিতর্ক থাকা উচিত। বিতর্ক শেষে বিশ্লেষণ করে কৃষি, শিক্ষা, সংস্কৃতিসহ বিশেষ বিশেষ দিকে গুরুত্ব দিয়ে যেন বাজেট অনুমোদন করা হয়। সব বিতর্কের উর্ধ্বে উঠে বাজেট জনবান্ধব হোক সেটাই প্রত্যাশা করছি।