তালতলীতে ব্রিজ নির্মাণ না করেই টাকা উত্তোলণ করে লোপাট

তালতলীতে ব্রিজ নির্মাণ না করেই টাকা উত্তোলণ করে লোপাট

 

বরগুনার তালতলীতে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) থেকে বরাদ্দের ব্রিজের কাজ না করেই তিন অর্থবছর আগে বিল উত্তোলণ করে লোপাটের ঘটনা ঘটেছে। ওই আয়রণ ব্রিজটি নির্মাণের জন্য বরাদ্দকৃত ৩ লাখ ৯০ হাজার টাকা উত্তোলন করতে সহযোগিতা করেছেন খোদ উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) কার্যালয়ের অসাধু কর্মকর্তারা। দেশের দরিদ্রতম উপজেলা তালতলীতে প্রকল্পের কাজ না করে বিল উত্তোলন করে লোপাট করায় এলাকাবাসীর মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। 

উপজেলা প্রকৌশলী দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থ বছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) আওতায় একটি প্যাকেজে টয়লেটে, টিউবয়েল ও আয়রণ ব্রিজের জন্য ৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। ওই বরাদ্দ থেকে উপজেলার কড়ইবাড়িয়া ইউনিয়নের উত্তর ঝাড়াখালী গ্রামের আমজেদ বয়াতী বাড়ির সামনে একটি আয়রন ব্রিজ নির্মাণ করার জন্য ৩ লাখ ৯০ হাজার টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। বরাদ্দে একই এলাকার একটি পুরোনো আয়রণ ব্রিজের মালামাল সংযুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। ওই সময় নির্মাণ কাজের জন্য দরপত্র আহবান করা হলে বরগুনার এক অজ্ঞাত ঠিকাদার দরপত্রের কার্যাদেশ পায়। সেই ঠিকাদারের কাছ থেকে তালতলী উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মিনহাজুল আবেদীন মিঠু ও তার ব্যবসায়ীক পার্টনার সোহেল কাজটি সম্পন্ন করে দেওয়ার কথা বলে কন্টাকে সেই অজ্ঞাত ঠিকাদারের সাথে চুক্তি করেন। এরপরে নিয়ম অনুসারে তৎকালীন ২০১৯-২০ অর্থ-বছরের (জুন মাস) মধ্যে ওই আয়রণ ব্রিজের নির্মাণ কাজ শেষ করার কথা। কিন্তু ওই নির্মাণ কাজের প্যাকেজে থাকা টয়লেট ও টিউবয়েল নির্মাণ কাজ ঠিকাদার সম্পন্ন করা করলেও অজ্ঞাত কারনে আয়রণ ব্রিজটির নির্মাণ কাজ না করেই ওই সময় জুন মাসের শেষে পুরো প্যাকেজের টাকা উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) অফিসের সঙ্গে যোগসাজস করে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান উত্তোলন করে নেয়। 

কিন্তু প্রশ্ন হলো কাজ সম্পন্ন না করে সরকারি লাখ লাখ টাকা কী ভাবে উত্তোলণ করা হলো? আর কেনই বা কার্যাদেশ পাওয়া ঠিকাদারের নাম ও তার তথ্য উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) দপ্তর গোপন রাখছেন। 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কাগজপত্র অনুযায়ী গত তিন অর্থবছর আগে উপজেলার কড়ইবাড়িয়া ইউনিয়নের উত্তর ঝাড়াখালী এলাকায় আমজেদ বয়াতী বাড়ির সামনে একটি লোহার আয়রন ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে সেখানে গিয়ে ব্রিজের কোনো অস্তিত্ব খুজে পাওয়া যায়নি। অথচ ২০১৯-২০ অর্থবছরে কাজ সমাপ্ত দেখিয়ে প্রকল্পের পুরো টাকা তুলে নিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার। 
কড়ইবাড়িয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ ঝাড়াখালী গ্রামের লিটন হাওলাদার ও নান্নু হাওলাদারসহ গ্রামবাসী অভিযোগ করে বলেন, গত তিন বছর পূর্বে বয়াতী বাড়ির সামনে একটা লোহার আয়রন ব্রিজ হওয়ার কথা ছিলো। ওই সময় ঠিকাদার এসে খালের প্রস্ত মেপে গেলেও আজ পর্যন্ত কোনো ব্রিজ নির্মাণ হয়নি। বর্তমানে আমাদের চলাচলের জন্য ওই স্থানে গ্রামবাসীর উদ্যোগে মাটি দিয়ে একটি বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে আরো বলেন, দেশের সবচেয়ে দরিদ্রতম উপজেলা তালতলী। এখানে উন্নয়নের জন্য সরকারের দেওয়া বরাদ্দের টাকার কাজ না করে লোপাট হয়ে যাচ্ছে। 
সংশ্লিষ্ট ওয়াার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য জালাল গাজী বলেন, অত্র ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম আলতাফ হোসেন আকন বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বরাদ্দের তালিকায় ওই ব্রিজটি দিয়ে যান। তিনি মারা গেছেন গত তিন বছর আগে কিন্তু আজ পর্যন্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ব্রিজটি নির্মাণ করেননি। 

উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মিনহাজুল আবেদিন মিঠু বলেন, আমি ও আমার পার্টনার সোহেল বরগুনার এক ঠিকাদারের কাছ থেকে চুক্তিতে কাজটি ক্রয় করে এনেছি। ওই প্যাকেজের দুটি কাজ সম্পন্ন করা হলেও ব্রিজটির নির্মাণ কাজ করা হয়নি। বৃষ্টি থাকার কারনে আমরা কাজ বরতে পারিনি। সবেমাত্র বৃষ্টি শেষ হয়েছে এখন কাজ শুরু করবো। অফিসে আমার এক লাখ টাকা জামানত রয়েছে। এছাড়াও আমার নামে পে-অর্ডার কেটে অফিসে জমা দিয়েছি। ব্রিজ নির্মাণের কার্যাদেশ পাওয়া মূল ঠিকাদার ও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নাম জানতে চাইলে তিনি তার জবাব এড়িয়ে যান ও এবং তিনি ঠিকাদারের নাম জানেন না বলে জানান।  

ওই বিষয়ে আয়রন ব্রিজ নির্মাণ কাজের তদারকি কর্মকর্তা উপ-সহকারি প্রকৌশলী মুরাদ হোসেন জানান, বরগুনার এক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স দিয়ে তালতলী উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মিনহাজুল আবেদিন মিঠু ওই কাজটি পেয়েছেন। পে-অর্ডার রেখে ঠিকাদারকে সমুদয় বিল উত্তোলনের সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। গত তিন অর্থ বছরে কাজ সম্পন্ন না হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, বর্ষা শেষ হলে কাজ শুরু করা হবে।  

সদ্য বিদায়ী উপজেলা প্রকৌশলী আহম্মদ আলী মুঠোফোনে সমুদয় বিল প্রদানের কথা স্বীকার করে বলেন, কাজের সমপরিমাণ পে-অর্ডার রেখে বিল দেওয়া হয়েছে। আগামী শুকনো মৌসুমে ব্রিজের নির্মাণ কাজ শুরু করা হবে। কাজ না করে পে-অর্ডার রেখে বিল দেওয়া যায় কি না? এবিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কাজ শেষ না হলে সরকারি কোনো আইনে পে-অর্ডার রেখে বিল দেওয়ার কোন বিধান নেই। তাহলে দিলেন কেন? এমন প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে গিয়ে তিনি আরো বলেন, আমরা শুধুমাত্র ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদককে মিঠুকে চিনি। ঠিকাদারের নাম আমাদের জানা নেই।  
তালতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম সাদিক তানভীর মুঠোফোনে বলেন, উপজেলা পরিষদের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) কাজ না করে কিভাবে বিল নেওয়া হয়েছে বিষয়টি খতিয়ে দেখে জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। #


ক্যাপশণঃ উপজেলার কড়ইবাড়িয়া ইউনিয়নের উত্তর ঝাড়াখালী গ্রামের আমজেদ বয়াতী বাড়ির সামনে একটি আয়রণ ব্রিজ নির্মাণ করার কথা থাকলেও সেটি নির্মাণ না হওয়ায় চলাচলের জন্য একই স্থানে গ্রামবাসীরা একটি বাঁধ নির্মাণ করেছেন।