দক্ষিণ রাজনীতির বটবৃক্ষ

দক্ষিণ রাজনীতির বটবৃক্ষ

আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ। দেশের অনন্য এক রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান। ছাত্র রাজনীতি, মুক্তিযুদ্ধসহ সামাজিক সংকটে সাধারণ মানুষের কাছের মানুষ আবুল হাসানত আবদুল্লাহ। দক্ষিণাঞ্চলের বেশিরভাগ মানুষের কাছে হাসানাত ভাই হিসেবে পরিচিত এই মানুষটি। রাজনীতির মাঠে নেতা-কর্মীদের প্রতি পরম স্নেহের এক অভিভাবকের নাম আবুল হাসানাত। দক্ষিণ জনপদের রাজনৈতিক অভিভাবকের নামও আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ। রাজনীতির বাঁকে বাঁকে নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে চলতে হয়েছে তাঁকে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ছাড়াও অনেক দুঃসহ স্মৃতি বয়ে নিয়ে চলতে হচ্ছে তাঁকে। তারপরও নেতাকর্মী এবং সাধারণ মানুষের সুখ-দুঃকের সাথী হয়েই আছেন নিরন্তরভাবে।

আলহাজ¦ আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর ১০ ডিসেম্বর আজ জন্মদিন।তার জন্মদিনে দৈনিক ভোরের আলোর বিশেষ আয়োজনে আমাদের অন্তরের শ্রদ্ধা ভালোবাসা শুভেচ্ছা জানাই।

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের রাজনীতি দিয়ে রাজনীতির হাতেখড়ি হওয়া আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ ১৯৪৪ সালের ১০ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। বরেণ্য রাজনীতিক বঙ্গবন্ধু সরকারের কৃষি মন্ত্রী শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাতের সুযোগ্য সন্তান। ছাত্রাবস্থায় জেলা ছাত্রলীগের দায়িত্বশীল পদে থেকে ছাত্রদের অধিকার আদায়ে কাজ করেছেন। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে ডাক আসলে দেশমাতৃকার শৃঙ্খল মুক্ত করতে ঝাঁপিয়ে পড়েন মুক্তি সংগ্রামে। মাত্র ২৭ বছর বয়সে আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ মুক্তিযুদ্ধে মুজিব বাহিনীর বরিশাল অঞ্চলের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মুজিব বাহিনীর প্রধান হিসেবে পুরো দক্ষিণাঞ্চলের মুক্তি সংগ্রামের সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত থেকেছেন। মুক্তি সংগ্রামে নিবেদিত প্রাণ হয়ে দক্ষিণাঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধাদের উজ্জীবীত করেছেন। 

একাত্তরের দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ ছাত্রত্ব ছেড়ে যুক্ত হন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে। জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন তিনি। পরে দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব বর্তায় তাঁর ওপর। দীর্ঘদিন তিনি সেই পদে থেকে পুরো দক্ষিণাঞ্চলে আওয়ামী রাজনীতির প্রসার ঘটিয়েছেন। এরপর আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। আজো বরিশালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব তাঁর ওপর ভরোসা করে এগিয়ে চলেছে। দক্ষিণাঞ্চলের আওয়ামী রাজনীতির নেতা-কর্মীরা তাঁকে দলের অনন্য অভিভাবক হিসেবে জানে এবং মানে। বর্তমানে তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে চলেছেন।

১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ সাধারণ মানুষের একজন হয়ে কাজ শুরু করেন। ১৯৭৩ সালে তিনি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৭৪ সালে প্রথম বরিশাল পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ। অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, যখন রাজনীতির মাঠে বিকশিত হচ্ছিলেন তখনই তাঁকে প্রত্যক্ষ করতে হয় ইতিহাসের নির্মম ঘটনা। ৭৫-এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তাঁর পরিবারের সদস্যদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। সেদিন আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ তখনকার কৃষিমন্ত্রী শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাতের সরকারি বাসভবনে ছিলেন। সেখানেও ঘাতকরা নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ চালায়। সেদিন তাঁর চোখের সামনে বাবা শহীদ আবদুর রব সেনিয়াবাতসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে তাঁর শিশু পুত্র সুকান্ত বাবুকেও হত্যা করা হয়। সেদিন আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ অলৌকিক কারণে প্রাণে বোঁচে যান। ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশে একান্ত আপনজনদের নির্মমভাবে খুন হতে দেখে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে যান হাসানাত আবদুল্লাহ। ৭১-এর ১৫ আগস্টের দুঃসহ স্মৃতি বুকে নিয়ে আজো বয়ে চলেছেন তিনি। কেবল দেশীয় ঘাতক মোশতাক গংদের কারণে দীর্ঘদিন দেশের বাইরে কাটাতে হয়েছে। ১৯৭৯ সালে স্বদেশে ফিরে আবারো ছিন্নবিচ্ছিন্ন দলকে সংগঠিত করতে প্রবীণ নেতাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে শুরু করেন। এরপর স্বৈরাচারী এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ভূমকা রাখেন। বরিশালে এরশাদ বিরোধী সর্বদলীয় এক্য গঠন এবং গণতন্ত্র মুক্তির পথে সব দলের নেতাদের সঙ্গে একজোট হয়ে কাজ করেছেন। যার মাধ্যদিয়ে ৯০-এর গণ আন্দোলন এবং স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের পতন ঘটে। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাননি আবুল হাসানত আবদুল্লাহ।

১৯৯১ সালের ৩ দলের রূপরেখার নির্বাচনে বরিশালের গৌরনদী-আগৈলঝারা আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ। ১৯৯৬ সালেও বরিশাল-১ (গৌরনদী-আগৈলঝারা) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এই সংসদেই আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ জাতীয় সংসদের চীফ হুইপ ছিলেন। ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর সরকারের পক্ষে তৎকালিন চিফ হুইপ আলহাজ্ব আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ এর সঙ্গে শান্তিচুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমা। ওই চুক্তি স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে অবসান ঘটে শান্তিবাহিনীর দীর্ঘ প্রায় দুই দশকের সংগ্রামের। স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে শান্তিবাহিনীর সশস্ত্র আন্দোলনকারী সদস্যরা। শান্তিচুক্তির ফলে প্রাথমিকভাবে শান্তি বাহিনীর সদস্যরা অস্ত্র জমা দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে ও অশান্ত পাহাড়ে শান্তি ফিরে পায়। সরকার তাদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে। তাই পার্বত্য শান্তি চুক্তির রূপকারও বলা হয় আবুল হাসানাত আবদুল্লাহকে। বর্তমানে আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন ও পরীক্ষণ কমিটির আহ্বায়ক (মন্ত্রী) দায়িত্ব পালন করছেন। বর্তমানেও তিনি একই আসন থেকে সংসদ সদস্য হিসেবে প্রতিনিধিত্ব করছেন। দক্ষিণ জনপদের রাজনীতির অভিভাবক আলহাজ¦ আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর আজ জন্মদিন। তাঁর জন্মদিনে আমাদের অন্তরের শ্রদ্ধা ভালোবাসা।