দুস্থ ও পথশিশুদের পাশে খাবার নিয়ে গণমাধ্যমকর্মীরা

বরিশালে ছিন্নমূল পথশিশু এবং অসহায়দের খাবার নিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছে গণমাধ্যমকর্মীরা। প্রতিদিন তারা নগরের নৌবন্দরে থাকা দেড়শতাধিক ছিন্নমুল শিশুসহ অসহায় মানুষদের জন্য রান্না করা খাবার নিয়ে হাজির হচ্ছেন। প্রতিদিন রাত নয়টায় নৌবন্দরে খাবার নিতে উপস্থিত হয় ওইসব শিশুরা। এ ছাড়া নগরের বিভিন্ন ওয়ার্ডের দৈনিক মজুরী ভিত্তিক শ্রমিকদের সন্ধান করে বাড়িতে বাড়িতে চাল, ডাল, আলু, তেল পিঁয়াজ পৌঁছে দিচ্ছেন।
এই মুহূর্তে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে সুরক্ষার জন্য ঘরে আশ্রয় নিয়েছেন সব মানুষ। সরকারি সিদ্ধান্তে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে দোকানপাট। কাজ নাথাকায় বেকার হয়ে পড়েছেন সাধারণ দিনমজুর এবং নিম্ন আয়ের মানুষ। হতদরিদ্র এবং কর্মহীন এইসব মানুষের মাঝে ত্রাণ সামগ্রি বিতরণ করছে সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা। তাদের দেওয়া খাদ্যসামগ্রি পেয়ে উপকৃত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। তবে পরিচয়হিন ভবঘুরে ছিন্নমূল পথশিশুরা অনেক ক্ষেত্রেই এই সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এই শিশু এবং ভভঘুরেরা সাধারণত দোকানপাট, লঞ্চ-স্টীমারের উচ্ছিষ্ট খাবার খেয়ে জীবন ধারণ করতো। কিন্তু দোকান, খাবার হোটেল বন্ধ, লঞ্চ-স্টীমার বন্ধ হওয় যাওয়ায় এরা খাদ্য সংকটে পরে। এদের পাশে দঁড়াতে প্রতিদিন রান্না করা খাবার নিয়ে হাজির হচ্ছেন বরিশালের গণমাধ্যমকর্মীরা।
বরিশাল শহীদ আবদুর রব সেরনিয়বাত প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসেনের উদ্যোগের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটিসহ বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমের উদ্যোক্তা ও কর্মীরা। তারা প্রতি রাতেই দেড় থেকে দুইশত শিশুর মুখে অন্য তুলে দিচ্ছেন। কেবল সামাজিক দায়বোধ থেকে এই উদ্যোগ শুরু হয়েছে। গত ২৬ মার্চ রাত থেকে রান্না করা ভাত, তরকারি এবং খিচুরি প্যাকেট করে তা পৌছে দেওয়া হচ্ছে শিশু অসহায়দের হাতে।
এই উদ্যোগকে স্বগত জানিয়ে শুরু থেকেই স্বেচ্ছাশ্রমে খাবার বিতরণে অংশ নেন যমুনা টেলিভিশনের স্টাফ রিপোর্টার কাওসার হোসেন, বরিশাল প্রেসক্লাবের পাঠাগার সম্পাদক রুবেল খান, রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বাপ্পি মজুমদার, বাংলানিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম এর স্টাফ রিপোর্টার মুশফিক সৌরভ, সকালের সময়’র বরিশাল ব্যুরো প্রধান সৈয়দ মেহেদী, বরিশাল নিউজ এডিটরস্ কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক রিপন হাওলাদার, দৈনিক যুগান্তর বরিশাল অফিসের স্টাফ রিপোর্টার তন্ময় তপু, আঞ্চলিক দৈনিকের স্টাফ রিপোর্টার শাকিল মাহমুদ ও ফটো সাংবাদিক আদনানসহ অনেকে।
তবে এই কাজে আর্থিক সহযোগিতা নিয়ে পাশে আছেন রয়েল সিটি হাসপাতালের চেয়ারম্যান কাজী আফরোজা। একই সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন বরিশালের অধিকাংশ পেশাদার সাংবাদিকরা। যার মধ্যে রয়েছে দেশ রূপান্তরের বরিশাল প্রতিনিধি সাইফুর রহমান মিরণ, দৈনিক কালের কন্ঠের স্টাফ রিপোর্টার মঈনুল ইসলাম সবুজ। তারা এখন নিজ উদ্যোগে উপস্থিত থেকে পথশিশুসহ অন্যান্য মানুষের হাতে খাবার তুলে দিচ্ছেন। তাদের সুরক্ষিত করতে করছেন হাত ধোয়া এবং স্যানিটেশনের ব্যবস্থা। শুধু স্বেচ্ছাশ্রমই নয়, ওদের খাবারের ব্যবস্থা করতে সাধ্যমত আর্থিক সহায়তাও করছেন সাংবাদিকরা।
এব্যাপারে বরিশাল প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসেন বলেন, অনেকের সাদ আছে কিন্তু সাধ্য নেই। আবার অনেকের সাধ্য আছে সাদ নেই। আমি চেষ্টা করেছি চলমান এই সংকটের মধ্যে ওদের পাশে দাঁড়ানোর। একে একে এই কার্যক্রমকে স্বাগত জানিয়ে অনেকেই আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। এজন্য আমি তাদের সকলের প্রতি কৃতজ্ঞ। কেননা কোন লাভের কথা না ভেবে বরং নিজেদের জীবন ঝুঁকি নিয়ে এগিয়ে এসেছেন।
তিনি বলেন, ‘আমার ইচ্ছা রয়েছে চলমান পরিস্থিতিতে এই কার্যক্রমকে আরো সম্প্রসারণ করার। রাতের পাশাপাশি দুপুরের খাবারটা দিতে পারলে ভালো হতো। তবে এটা আমার একার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। এজন্য সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। সাংবাদিকরা যে যার অবস্থান থেকে এগিয়ে আসলে এ কার্যক্রম আমাদের জন্য আরো সহজ হতো। শুধু সাংবাদিক নয়, এর বাইরে কেউ চাইলে সহযোগিতার হাত বাড়াতে পারেন। অন্তত মানবিক দৃষ্টিকোন থেকে হলেও চলমান সংকটে পথশিশুদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।