দৃষ্টিভঙ্গীর পরিবর্তন হলে সামনে যাবার পথ আরো সুগম হবে

আমাদের দেশের নারীরা এগিয়ে চলেছে। নারী-পুরুষের মধ্যে সৃষ্ট সকল বাঁধা অতিক্রম করে প্রগতির পথে হাঁটছে তারা। আমাদের নারীরা লাল-সবুজের পতাকা নিয়ে এভারেস্ট জয় করেছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমাদের নারীরা দেশের হয়ে ভূমিকা রাখছে। পরিবার, সমাজ, শিক্ষা-সংস্কৃতি, রাজনীতি, পররাস্ট্রনীতি এবং প্রশাসনের সব ক্ষেত্রে সমান অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে পারলে আমাদের নারীরা এক একনজন বাংলাদেশ হয়ে উঠবে। এজন্য আমাদের সহযোগী হয়ে তাদের পাশে থাকতে হবে। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গীর পরিবর্তন হলে সামনে যাবার পথ আরো সুগম হবে। সকল প্রকার বৈষ্যম দূর করতে পারলে নারীরা বাংলাদেশকে এগিয়ে নেবেই।
কবি রবিউল হুসাইন তাঁর একটি কবিতায় লিখেন, ‘মানুষেরা নাকি এক সেকে-ে চার ফুট হাঁটতে পারে সাধারণত’। ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি তাঁর কবিতায় লিখেছেন, ‘বারো কোটি মানুষ আমরা, আমরা সবাই একসঙ্গে হাঁটলে মোট আটচল্লিশ কোটি ফুট, অর্থাৎ ষোল কোটি গজ, তার মানে, এক সেকেন্ডে প্রায় নব্বই হাজার নয়শ দশ মাইল এগিয়ে যেতে পারি’। কবি তাঁর এগিয়ে চলার পথে কেবল পুরুষকে বলেননি। নারী-পুরুষ সমানতালে এক সেকে- হাঁটার কথা বলেছেন তিনি। নারীকে বাদ দিয়ে হাঁটলে সামনে যাবার একই পথ হাঁটতে দ্বিগুন সময় লাগতো।
বাংলাদেশ বিনির্মাণের কয়েক বছর পর আমাদের স্রোতের বিপরীতে চলতে হয়েছে। অনেক দিন আমরা সামনে না গিয়ে একই আবর্তে ঘুরেছি। তখন আমাদের নারী শিক্ষাকে পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। নারীদের প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অংশ নিতে অনেকটা প্রতিবন্ধকতা ছিল। সেই প্রতিরোধের দেয়াল চূর্ণ হয়েছে বলা যাবে না। তবে যে কোন সময়ের চেয়ে সেই দেয়ালের উচ্চতা কমেছে। ইচ্ছে করলে ওই দেয়াল টপকানো যায় এবং যাচ্ছে। তার প্রমাণ আমাদের নারীরা। প্রগতির পথে দেশ চলার সঙ্গে সঙ্গে নারীরা শিক্ষা, সংস্কৃতি, রাজনীতিতে সার্বিকভাবে ভূমিকার রাখার সুযোগ পাচ্ছে। পৃথিবীর ইতিহাসে বাংলাদেশের নারীদের অবস্থান এখন আস্থার স্থানে।
এক সময় ছিল তুমি নারী। তুমি হবে কোমল। তোমার এতো কথা বলার দরকার কি? তুমি অবলাই থাকো। তোমার জন্য বেশি শিক্ষার দরকার নেই। চাল-ডাল আর টাকা-পয়সার হিসাবটুকু জানলেই হবে। নারীর প্রতি এই বৈষম্যর কারণে এখনো নারীরা সব ক্ষেত্রে এগিয়ে যেতে পারছে না। কেউ একটু এগিয়ে যেতে চাইলেই তাকে পেছন থেকে টেনে ধরা হতো। তারপরও থামতে না চাইলে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গী এবং কটুউক্তি দিয়ে থামিয়ে দেওয়া হতো। নারী শিক্ষায় নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গী এবং কালো অধ্যায় না থাকলে আমাদের মেয়েরা, আমাদের নারীরা বাংলাদেশকে আরো সামনে এগিয়ে নিতে পারতো। সম্ভাবানার বাংলাদেশ বিনির্মাণে নারীরা আরও ভূমিকা রাখতে পারতো।
এতো এতো প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও নারীরা ধারাবাহিকভাবে এগিয়ে চলছে। সুযোগ পেলে নারীরা যে এগিয়ে যায় তার প্রমাণ বাংলাদেশ। বাংলাদেশের সকল অর্জনে নারীর ভূমিকা প্রশংসনীয়। বিশেষ করে শিক্ষা ক্ষেত্রে নারীদের এগিয়ে চলা সম্ভাবনার পর সম্ভাবনা জাগাচ্ছে। আমাদের কন্যা কিংবা মেয়ে কিংবা নারীরা এই সম্ভাবনা অব্যাহতভাবে প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে উচ্চ শিক্ষা পর্যন্ত ছুঁয়েছে। তবে নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, ইভটিজিংসহ নানা কারণে নারীরা সামনে যেতে পারছে না। নারীর চলার পথ বন্ধ করতে এখনো অনবরত চেষ্টা চলছে। নেতিবাচক এই চেষ্টা থামাতে না পারলে আমাদের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে। এক্ষেত্রে অবশ্যই আমাদের দৃষ্টিভঙ্গীর পরির্তন ঘটিয়ে নারীর সহযোগী হতে হবে।
মেয়েদের যদি নিরাপত্তার নিয়ে ভাবতে না হতো, যদি তেঁতুল হুজুরদের নেতিবাচক বক্তব্য শুনতে না হতো, অকালে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে না হতো, মেয়েরা যদি মুক্ত মনে চলতে পারতো তাহলে অর্জনের ঝুলি অন্যরকম হতো। তারা বাংলাদেশটাই বদলে দিতে পারতো। আমরা চাই, পরিবার, সমাজ এবং রাস্ট্রের সব ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হোক, মেয়েদের নারী বলে অবহেলা করা বন্ধ হোক, নিরাপত্তার অজুহাতে বাল্যবিবাহ বন্ধ হোক। একই সঙ্গে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গীর পরিবর্তন ঘটুক। নারী-পুরুষের একসঙ্গে চলার গতি আরো বাড়–ক। এক সেকে-ে আমরা নব্বই হাজার নয়শ দশ মাইল নয়, লাখ লাখ মাইল সামনে যাবো। আর সেটা সম্ভব করতে পুরুষদের সঙ্গে আমাদের নারীরা সমানভাবে পা ফেলবে। নারীকে নারী নয়, মানুষ হিসেবে দেখতে হবে।