দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্প অনুমোদন

দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্প অনুমোদন

জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) মাতারবাড়ীতে দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে। এই প্রকল্পে ব্যয় হবে ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি ১৬ লাখ টাকা।

মঙ্গলবার এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেক চেয়ারপারসন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় এসব প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়।

এদিন ‘মাতারবাড়ী পোর্ট ডেভেলপমেন্ট’ প্রকল্পসহ ২৪ হাজার ১১৩ কোটি ২৭ লাখ টাকা ব্যয়ে মোট ৯ প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে একনেক।

বৈঠক শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, বড় আকারের জাহাজ ভেড়ার উপযোগী করে কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ী ও ধলঘাট এলাকায় গভীর সমুদ্রবন্দর স্থাপনের লক্ষ্যে ‘মাতারবাড়ী পোর্ট ডেভেলপমেন্ট’ প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।


তিনি বলেন, এই সমুদ্রবন্দর নির্মিত হলে দেশের কার্গো হ্যান্ডেলিং ক্ষমতা অনেক বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি ভবিষ্যতে এই বন্দর আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চাহিদা মিটানো এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে ত্বরিত বন্দরসেবা প্রদানে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে।

এই প্রকল্পটিকে স্বপ্নের প্রকল্প আখ্যা দিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের মধ্য দিয়ে বৈদেশিক বাণিজ্যে আমাদের অবস্থান আরও শক্তিশালী হবে।

তিনি জানান, প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি ১৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে জাপানের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা) বৈদেশিক ঋণ সহায়তা প্রদান করবে ১২ হাজার ৮৯২ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। এছাড়া বাংলাদেশ সরকারের তহবিল থেকে ২ হাজার ৬৭১ কোটি ১৫ লাখ এবং সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে পাওয়া যাবে ২ হাজার ২১৩ কোটি ২৫ লাখ টাকা।

এমএ মান্নান বলেন, জানুয়ারি ২০২০ হতে ডিসেম্বর ২০২৬ মেয়াদে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগ যৌথভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।

প্রকল্প প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, মাতারবাড়ী সমুদ্রবন্দরে ৩০০ ও ৪৬০ মিটার দৈর্ঘ্যের দু’টি টার্মিনাল থাকবে। এর একটি হবে বহুমুখী টার্মিনাল ও অপরটি কন্টেইনার টার্মিনাল।

এছাড়া বন্দরের সঙ্গে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হবে। একসঙ্গে আট হাজার কন্টেইনারবাহী জাহাজ বন্দরে ভিড়তে পারবে।

এ সময় পরিকল্পনামন্ত্রী বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) হালনাগাদ তথ্য উপস্থাপন করে বলেন, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময়ে ৭৯ হাজার ৭৮৫ কোটি ৮৬ লাখ টাকার এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে, যা মোট এডিপির ৩৭ দশমিক ০৯ শতাংশ।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে জবাবে তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্ব অর্থনীতি চাপের মুখে পড়েছে।বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। তবে, সেই প্রভাবটি ঠিক কী ধরনের হবে, সেটা এখনই আমরা বলতে পারছি না।

একনেকে অনুমোদিত অন্য প্রকল্পসমূহ হলো- লেবুখালী-রামপুর-মির্জাগঞ্জ সংযোগ সড়ক নির্মাণ প্রকল্প। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪১৯ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। কচুয়া-বেতাগী-পটুয়াখালী-লোহালিয়া-কালাইয়া সড়কের ১৭তম কিলোমিটারে পায়রা নদীর সেতু নির্মাণ প্রকল্প। এর বাস্তবায়ন খরচ হবে ১ হাজার ৪২ কোটি ৪৮ লাখ টাকা।

স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সেস ফায়ারিং রেঞ্জের আধুনিকায়ন প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৫১ কোটি ৫৪ লাখ টাকা।

এছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের মৎস্যসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১১৮ কোটি ২৮ লাখ টাকা। বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয় হবে ১৬১ কোটি ৫ লাখ টাকা।

জামালপুর জেলার মাদারগঞ্জ উপজেলাধীন পাকেরদহ ও বালিজুরি এবং বগুড়া জেলার সারিয়াকান্দি উপজেলার জামথল যমুনা নদীর ভাঙন থেকে রক্ষা প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৫৮৪ কোটি ৭২ লাখ টাকা।

জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা কার্যালয়ের ২০তলা ভিত বিশিষ্ট দু’টি বেইজডসহ ১০তলা প্রধান কার্যালয় নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নে খরচ ধরা হয়েছে ১০২ কোটি ৭৫ লাখ টাকা।

ঢাকা স্যানিটেশন ইমপ্রুভমেন্ট প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৮৫৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা।