ধর্ষণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে দায়িত্বশীল ভূমিকা নিন

‘ম তোর বদনখানি মলিন হলে, আমি নয়ন জলে ভাসি’। নির্মম ও পাষবিক ধর্ষণের ঘটনায় আজ দেশ মায়ের মুখ মলিন হয়ে আছে। এ কোন দেশে বাস করছি আমরা। রাত পোহালেই শুনতে হচ্ছে ধর্ষণ আর পাষবিক নির্যাতনের ঘটনা। পরাধীন বাংলাদেশে সংঘটিত ধর্ষণও হার মানাচ্ছে। তখন ধর্ষক ছিল বিদেশী জানোয়ার। আজ স্বাধীন দেশে এ কোন জানোয়ারের পাল্লায় পড়লাম আমরা। এ যেন সেই সংলাপ ‘স্বাধীন দ্যাশের স্বাধীন ওয়ারিশ, নিজের জমিতে হইলাম বেওয়ারিশ’। বেওয়ারিশের মতো রাস্তাঘাটে কেবল ধর্ষণ আর নারী নির্যাতনের ঘটনায় উদ্বিগ্ন জাতি। ধর্ষণের ঘটনায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ায় চরম অবস্থা ধারণ করছে। বিচারহীনতার সংস্কৃতি এবং রাজনৈতি পরিচয় ধর্ষণের মাত্রা বাড়িয়ে তুলছে। এই ভয়াবহ অবস্থার জন্য দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের নেতিবাচক বক্তব্যও অনেকাংশে দায়ি।
আমরা লক্ষ্য করি ধর্ষণের ঘটনায় বারবার নারীর দিকেই আঙুল তোলা হয়। নারী কেন বাইরে থাকে, নারীর পোশাক কেন এমন, কেন অমন ইত্যাদি। কিন্তু এই ধরণের বক্তব্য কোনভাবে ধর্ষণের দায় এড়াতে পারে না। নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়ার কারণে ঘটছে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের মতো ঘটনা। নিরাপত্তা না পাওয়ার শঙ্কা এবং হুমকীর কারণে ধর্ষণের শিকার অনেক নারী আইনের কাছে যেতেও সাহস করে না। ধর্ষকের প্রভাবশালী এবং রাজনৈতিক পরিচয় আরও ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হয়।
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন এবং ধর্ষণকারীরা প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক পরিচয়ধারী। দীর্ঘ এক মাসেরও বেশি সময় ধরে ওই নারীকে নির্যাতন ও ধর্ষণ করেও ক্ষন্ত হয়নি দুবৃত্তরা। নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে হেয়প্রতিপন্ন করেছে। সিলেটে এমসি কলেজের ছাত্রলীগ নামধারীরা প্রকাশ্যে স্বামীকে বেঁধে রেখে দলবেধে ধর্ষণ করেছে। উপজাতি নারীকে ধর্ষণ ঘটনার সঙ্গে যুক্তরাও প্রভাবশালী। সারা দেশে ধর্ষণের বেশিরভাগ ঘটনা বিচারের আওতায় আসছে না। যে ঘটনাগুলো বিচারের আলো দেখছে, সেগুলোও আইনের ফাঁক গলে ধর্ষকরা বেরিয়ে যাচ্ছে। পুনরায় তারা ধর্ষণে মেতে উঠছে। এখান থেকে মুক্তির পথ খুঁজতে হবে। সেজন্য সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের দায়িত্বশীল বক্তব্য ও ভূমিকা থাকতে হবে। ধর্ষণের ঘটনায় নারীর দিকে আঙল তোলা বন্ধ করতে হবে। তা না হলে এই মরনব্যাধী থেকে পরিত্রাণ পাওয়া কঠিন।
আমাদের দায়িত্বশীল স্বরাস্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। যেখানে সারা দেশে নারীর নিরাপত্তা দেওয়ার কথা বলবেন তিনি। তা না করে তিনি এমন এক বক্তব্য দিলেন যা অনেকাংশে ধর্ষকদের উৎসাহিত করার সামিল। পৃথিবীর কোন দেশে ধর্ষণ আছে বা নাই, সেটা বাংলাদেশের মানুষের জানার দরকার নেই। আমাদের জানা দরকার আমার দেশের নারীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে কি না। তাদের নিরাপত্ত নিশ্চিত হয়েছে কিনা। সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। স্বরাস্ট্রমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পর মাঠ পর্যায়ের সরকরি দলের নেতারাও সুযোগ পেয়েছেন নারীর দিকে আঙুল তুলবার।
বরিশালে নারী নির্যাতন ও ধর্ষণ বিরোধী একটি সমাবেশে রাজনৈতিক পরিচয়ধারী এক নেতা বলে বসলেন ‘রাত তিনটায় নারীরা কেন বাইরে থাকবে? নারীদের বক্তব্য শালিন না হলে তাদেরও বিচার করতে হবে’। এমন বক্তব্য শুনে হতবাক হয়েছেন সমাবেশে আসা ব্যক্তিরা। তারা এর প্রতিবাদ করেছেন। তারা বলেছেন, ‘নারী কখন বাইরে যাবে, কি পোশাক পড়বে সেদিকে আঙুল না তুলে নারীর নিরাপত্তায় নজর দিন। যে নারীকে বাড়িতে বিবস্ত্র করে নির্যাতন করা হলো, ধর্ষণ করা হলো তার নিরাপত্তা কোথায়? যারা ধর্ষণের বিচার চাইতে এসে নারীকে প্রশ্ন করেন, তাদের কারণেই ধর্ষকরা প্রশ্রয় পায়। এই ধরণের বক্তব্য বন্ধ করতে হবে।’
বাংলাদেশের মোট জনগোষ্ঠীর অর্ধেক নারী। তাদের বাড়িতে রেখে সামগ্রিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাই নারীর দোষ না খুঁজে দোষী ধর্ষকদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। ধর্ষণের ঘটনায় শাস্তি মৃত্যুদন্ড করতে হবে এবং তা বাস্তবায়নে উদ্যোগ নিতে হবে। যাতে ধর্ষণের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে।