নগরীতে কিশোরী গৃহবধূকে হত্যার অভিযোগ

বরিশাল নগরীতে এক কিশোরী গৃহবধূস্ত্রী নিপা আকতার হত্যার অভিযোগ উঠেছে। নিপার স্বামী ও শ্বশুর বাড়ীর লোকজন আত্মহত্যা বলে দাবি করলেও নিপার পরিবারের দাবি পরিকল্পিতভাবে নিপাকে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় নিপার বাবা আব্দুল্লাহ তালুকদার বাদী হয়ে স্বামী সোহরাব হাওলাদারসহ চারজনকে আসামী করে মামলা দায়ের করেছেন। মামলার অপর আসামীরা হলেন- মিজান হাওলাদার, মোসাম্মৎ হাসিনা বেগম ও মো. হোসেন।
গত ১৬ ডিসেম্বর নগরীর কেডিসি বালুর মাঠ এলাকায় স্বামী সোহরাব হাওলাদারের বাসা থেকে স্ত্রী নিপা আকতারের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত নিপা একই এলাকার আব্দুল্লাহ তালুকদারের মেয়ে এবং আলতাফ মেমোরিয়াল বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী ছিল।
পুলিশ প্রধান আসামী সোহরাব হাওলাদারকে গ্রেপ্তার করলেও বাকী আসামীরা এখনো ধরা ছোয়ার বাইরে রয়েছে। মামলার বাদি অভিযোগ করেছেন পুলিশ আসামীদের সঙ্গে যোগসাজশ করে বিষয়টিকে আত্মহত্যা বলে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আসামীদের তো ধরছেই না উল্টো বাদিকে নানাভাবে হয়রানী করছেন।
মামলার বাদি জানান, আসামী সোহরাব হাওলাদার নেশাগ্রস্ত। তার পূর্বে আরও একটি বিয়ে ছিল। ওই ঘরে দুটি সন্তানও রয়েছে। আমার মেয়ে সোহরাবকে কাকা বলে সম্বোধন করতো। কিন্তু লম্পট সোহরাব আমার নাবালিকা মেয়েকে ফুসলিয়ে তিন মাস পূর্বে গোপনে বিয়ে করে। বিষয়টি জানার পর থেকে আমি আমার মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করি। বিয়ের খবর শোনার পর আমরা মেয়ের সঙ্গে আর যোগাযোগ করিনি। লোক মারফত প্রায়ই শুনতাম নেশা করে আমার মেয়ের উপর নির্যাতন করছে। পরবর্তীতে মেয়েকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করলে সোহরাব ও তার লোকজন আমাকে প্রাননাশের হুমকী দিয়েছে। গত ১৬ ডিসেম্বর আসামীরা আমার মেয়েকে হত্যা করে আত্মহত্যা বলে প্রচারনা চালায়।
এদিকে মামলার এজাহারে যা লেখা হয়েছে তা পুলিশের মনগড়া বলে দাবি করছেন বাদি আব্দুল্লাহ তালুকদার। তার অভিযোগ, তিনি মৌখিকভাবে অভিযোগ দেয়ার পরই থানার লোকজন ড্রাফট করেছে। আমি যেভাবে অভিযোগ করেছি সেভাবে এজাহারে উল্লেখ নেই।
তিনি জানান, ‘ঘটনার দিন দুপুরে হঠাৎ করে খবর পাই আমার মেয়ে নিপা ঘরের আড়ার সাথে ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে। দ্রুত আমি ঘটনাস্থলে গেলে সবাই আমাকে ঘরে ঢুকতে বাধা দেয়। পরে একজন পুলিশ অফিসার আসলে আমি তার সঙ্গে ভিতরে গিয়ে দেখি ঘরের দোতালার পাটাতনের উপর আমার মেয়ের লাশ শোয়ানো অবস্থায় রয়েছে। আমার মেয়ে যদি আত্মহত্যাই করে তাহলেতো তার লাশ ঝুলন্ত অবস্থায় থাকবে। আমার মেয়েকে সোহরাব ও তার পরিবারের লোকজন পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। এ কথাই আমি থানায় গিয়ে বলেছি। আমি কখনো বলিনি যে আমার মেয়ের লাশ আমি ঝুলন্ত অবস্থায় পেয়েছি। স্থানীয় বাসীন্দারাও বলছেন ঘটনার দিন তারা গিয়ে লাশ শোয়ানো অবস্থায় দেখেছেন। বালুরমাঠ বস্তির বাসীন্দা পারভীন বেগম বলেন, ‘আমি খবর শুনে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি নিপাকে পাটাতনের উপর শুইয়ে রাখা হয়েছে। নিজের ইচ্ছায় নিপা মরেনি, ওকে মারা হয়েছে।
মামলার বাদী আব্দুল্লাহ তালুকদার অভিযোগ করে বলেন, পুলিশ মামলার ১নম্বর আসামী সোহরাব হাওলাদারকে গ্রেপ্তার করলেও অন্যান্য আসামীদের ধরছে না। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই রেজাউল করিম উল্টো আমাকে নানাভাবে হয়রানী করছেন। রেজাউল করিমের কাছে গেলে তিনি আমাকে বলেন, ‘উপর মহলের নির্দেশ ছাড়া আসামী ধরা যাবে না। তাছাড়া পোস্টমর্টেম রিপোর্ট হাতে না পেয়ে আসামীদের গ্রেপ্তার করা ঠিক হবে না। আমার প্রশ্ন হলো নামধারীদের আসামীদের ধরতে উপর মহলের নির্দেশ প্রয়োজন হবে কেন। কেনই বা পোস্টমর্টেম রিপোর্ট ছাড়া আসামী ধরা যাবেনা।
এ ব্যাপারে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই রেজাউল করিম বলেন, ‘আমরা আসামীদের ধরার চেষ্টা করছি। তারা গাঢাকা দিয়েছে। আর বাদির যে অভিযোগ তা সত্য নয়। বাদি মূর্খ মানুষতো তাই একেক সময় লোকজন তাকে একেক বুদ্ধি দেয়। মামলার লেখাটা যেভাবে ওইভাবে তাকে কেউ বুঝাতে পারেনি। বিভিন্নভাবে তাকে বুঝানো হয়েছে। এটা হলো মূল সমস্যা। অনেকে তাকে বুঝিয়েছে মামলায় যেভাবে লেখা সেটা নাকি ঠিক হয়নি। আসলে বাদি যেটা বলছে তা সম্পূর্ণ মনগড়া।