নতুন ভিসির অপেক্ষায় শাবিপ্রবি, প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ

নতুন ভিসির অপেক্ষায় শাবিপ্রবি, প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ

নতুন উপাচার্যের (ভিসি) জন্য অপেক্ষার প্রহর গুনছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা। শুক্রবার আন্দোলনকারীদের কয়েকজন মুখপাত্র এবং সাধারণ শিক্ষার্থীর সাথে এ বিষয়ে কথা হয় ।

তারা বলছেন, ক্যাম্পাসের একাডেমিক ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রম শুরু হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন সবাই। তবে সেটা নতুন উপাচার্য আসলে তার হাত ধরেই শুরু করতে চান শিক্ষার্থীরা।

এদিকে অনশন থেকে সরে আসলে নতুন উপাচার্য না আসা পর্যন্ত আন্দোলন চলমান থাকবে বলে জানান তারা। অনশন ভাঙার পর ধরনও পাল্টেছে আন্দোলনের।

সরেজমিনে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা আন্দোলনের অংশ হিসেবে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে রং তুলির আঁচড়ের মাধ্যমে করছেন রোড পেইন্টিং। নিয়মিত চলছে প্রতিবাদী কনসার্ট। হচ্ছে মিটিংও। বাদ যাচ্ছে না মিছিল। এভাবে এক অহিংস আন্দোলনের সূতিকাগার হয়ে উঠেছে শাবিপ্রবি।

এর আগে গত বুধবার অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের আশ্বাসে ১৬৩ ঘন্ট পর অনশন ভাঙেন শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার রাত ৪টায় অনশনস্থলে তিনি তার সহধর্মিণী শাবিপ্রবি সাবেক অধ্যাপক ইয়াসমিন হকসহ উপস্থিত হন। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, অনুযোগ প্রায় ২ ঘণ্টা ধরে শোনেন বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক এই অধ্যাপক। এ সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন শিক্ষার্থীরা।

আন্দোলনকারীদের অন্যতম মুখপাত্র উমর ফারুক  বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কার্যক্রম এখন প্রায় স্থবির হয়ে আছে। আমরা একাডেমিক এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড শুরু করতে মুখিয়ে আছি। তবে সেটা নতুন উপাচার্য আসলে তার হাত ধরেই শুরু করব।

তিনি বলেন, শুরু থেকেই অহিংস আন্দোলন করে আসছি আমরা। কোনো ধরনের ভাঙচুর কিংবা আক্রমণ থেকে দূরে থেকেছি। তবে উপাচার্য আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন বানচাল করতে মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছিলেন। ছড়িয়েছেন বিভ্রান্তি। পুলিশ দিয়ে নির্দয়ভাবে পিটিয়েছেন। রক্ত ঝরিয়েছেন আমাদের ভাই-বোনদের। দিয়েছেন মামলা। ভয়ভীতির মাধ্যমে দমিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আমরা দমে যেতে আসিনি। নতুন একটি সকাল নিয়ে আসতে আমাদের এই প্রচেষ্টা।

এদিকে, বর্তমান উপাচার্যকে সরানো এবং নতুন উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে ইতিমধ্যে জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে। কে হচ্ছে পরবর্তী উপাচার্য এবং কবে নাগাদ আসতে পারেন সেই উপাচার্য তা এখন টক অব দ্যা ক্যাম্পাসে পরিণত হয়েছে।

আন্দোলনের আরেক মুখপাত্র সাব্বির আহমেদ চৌধুরী বলেন, ছাত্রদের জীবন বাঁচাতে গিয়ে শিক্ষকের আত্মাহুতি পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল ঘটনা। ড. জোহা নিজ জীবনকে তুচ্ছ করে ছাত্রদের জীবন বাঁচিয়েছেন। অনেক শিক্ষকই ছাত্রদের জন্য উদার, কিন্তু জীবন দিয়ে দেবেন, এমন শিক্ষক কে আছেন জোহা ছাড়া? আমরা ড. শামসুজ্জোহা স্যারের মতো ছাত্রবান্ধব একজন শিক্ষককে ক্যাম্পাসে উপাচার্য হিসেবে দেখতে চাই। যে শিক্ষার্থীদের নিজ সন্তানের মতো আগলে রাখবে। ফরিদ উদ্দিনের মতো শিক্ষার্থীদের বুকে গুলি করার নির্দেশ দেবে না।

তিনি আরও বলেন, দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র ও শিক্ষক রাজনীতির দোলাচলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা অসহায় বোধ করেন। স্বার্থপরতা ও রাজনীতি শিক্ষকদের গ্রাস করছে, শিক্ষা ধীরে ধীরে ব্যবসার পণ্যে পরিণত হচ্ছে।

আহতদের চিকিৎসার ব্যয়ভার বহনে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন

শুক্রবার বিকেল সোয়া চারটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বরে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থী সামিউল এহসান শাফিন এবং মোহাইমিনুল বাশার রাজ।

সংবাদ সম্মেলনে তারা বলেন, ১৬ জানুয়ারি পুলিশি হামলার ঘটনায় আহত এবং অনশনরত অবস্থায় অসুস্থ শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার সকল খরচ পরিশোধ করায় আমরা প্রথমেই প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। ইতিমধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে পুলিশের হামলার ঘটনায় আহত সজল কণ্ডুর উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় সকল ব্যবস্থা করা হয়েছে। সরকারের নির্দেশনায় শিক্ষামন্ত্রী আমাদের মূল দাবিসহ অন্যান্য দাবি পূরণের আশ্বাস দিয়েছেন। আমরা সকল শিক্ষার্থী প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

শিক্ষামন্ত্রীকে ক্যাম্পাসে আমন্ত্রণ জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা

সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনিকে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দেখা করার এবং আলোচনার জন্য ক্যাম্পাসে আসার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন বলে জানিয়েছেন তারা।

তারা বলেন, মন্ত্রী মহোদয় ক্যাম্পাসে আসার এবং একই সাথে কথা বলার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন, এতে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত। আমরা এ ক্যাম্পাসে তাকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। আমরা তাকে জানাতে চাই, আমরা তার সঙ্গে আমাদের দাবি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আলোচনার জন্য উন্মুখ হয়ে আছি। আশা করি, শিক্ষামন্ত্রী দ্রুতই আমাদের ক্যাম্পাসে এসে আমাদের সাথে আলোচনায় অংশ নেবেন।

শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, আমাদের চলমান আন্দোলন চলবে। আমরা এখন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড এবং বিভিন্ন আলপনা আঁকার মাধ্যমে আন্দোলন চালিয়ে যাব।

নতুন নতুন শারীরিক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন অনশনকারীরা

অনশন ভাঙার পর থেকে শিক্ষার্থীরা সরাসরি ডাক্তারের তত্ত্বাবধানে রয়েছেন। যদিও মাহিন শাহরিয়ার রাতুল ছাড়া সবাই নিজ নিজ আবাসস্থলে অবস্থান করছেন। তবে তাদেরকে সম্মুখীন হতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন সমস্যার।

অনশনকারী একাধিক শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, খাবার ঠিকমতো হজম হচ্ছে না। মাথা ব্যথা কিংবা ঘুমেও ব্যাঘাত ঘটছে। শরীর অনেকেরই দুর্বল হয়ে রয়েছে। হাঁটাচলাতেও হতে হচ্ছে সমস্যার সম্মুখীন। এসব সমস্যার জন্য কয়েকজন ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়েছেন বলেও জানান তারা।

চলচ্চিত্র প্রদর্শনী

শুক্রবার রাতে গোল চত্বরে বড় পর্দায় আন্দোলনের অংশ হিসেবে ‘হীরক রাজার দেশে’ এবং ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’ চলচ্চিত্র দেখানো হবে।

সংগৃহীত-দেশ রূপান্তর