নদীর করালগ্রাসে দ্বীপ জেলা ভোলা

মেঘনা তীরবর্তী ভোলা সদর উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়ন বরাবরই ভাঙ্গনপ্রবণ এলাকা। প্রতি বর্ষাতেই মেঘনা উত্তাল হলে ভাঙ্গতে থাকে এ ইউনিয়ন।
এ মৌসুমে গত ১২ দিন ধরে উজানের ঢলে মেঘনার প্রায় আধা কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ঘূর্ণিস্রোতের সৃষ্টি হয়েছে। তাতে ভাঙ্গছে পাড়।
ভোলাস্থানীয় লোকজন বলেন, প্রতি বছর বর্ষা মৌসুম আসলে নদী ভাঙ্গন শুরু হয়। অনেকের বাড়ি নদীতে নিয়ে গেছে ৩ থেকে ৫ বার পর্যন্ত। কয়েক বছর আগে অনেক বাড়ি ছিল নদী থেকে কয়েক মাইল দূরে। সেইখানেও ভাঙ্গছে। এখন অনেক পরিবারের আশ্রয় নেওয়ার মতো নিজেস্ব কোনো জায়গা নাই।
ভাঙ্গন তীব্র হয়েছে গত ১০-১২ দিন ধরে। স্থানীয়রা আরও বলছেন, বসতবাড়ি, দোকানপাট ছাড়াও বিলীন হয়েছে কৃষিজমি, মাছঘাট ও মসজিদ। নদী চলে এসেছে প্রায় ৭০ মিটার ভেতরে।
এইখানে ভাঙ্গনের পাশে বড় একটি প্রকল্পে কাজ করছে ব্লকের। এইখানে ভেঙ্গে গেলে ওই বড় প্রকল্পটাও হুমকির মধ্যে পরবে। দ্রুত রাত-দিন খাটে ভাঙ্গন প্রতিরোধে বালুভর্তি জিও টিউব ফালাইতে হবে, যাতে পানির স্রোতটা অন্যদিকে যায়। তাহলে ভাঙ্গন কিছুটা রোধ হবে।
এরই মধ্যে নদীর গর্ভে বিলীন হয়েছে রাজাপুর ইউনিয়নের জোড়খাল এলাকায় প্রায় ৪৫০ মিটার অংশ। আতঙ্কে শতাধিক পরিবার বাড়িঘর সরিয়ে নিয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সেখানে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলছে।
রাজাপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান জানান, এটি একটি প্রাচীন এলাকা। মেঘনা এখানে এখন তীব্রভাবে ভাঙ্গছে। বিলীনের ঝুঁকিতে এখন আছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ, ছয়টি বাজার, ২৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ১০ হাজার পরিবারের বাড়ি ও কয়েক হেক্টর ফসলি জমি।
ডিসি তৌফিক ইলাহী চৌধুরী বলেন, আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ড একসঙ্গে মিলে এই জোড়খাল এলাকার মেঘনা নদীর ভাঙ্গন রোধে কাজ করছি। এরই মধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে জিও টিউব ফেলা হচ্ছে।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক মনিটরিং করা হচ্ছে যেন ভাঙ্গন রোধে দ্রুত কাজ বাস্তবায়ন করা হয়। এ ছাড়াও যেসব পরিবার নদী ভাঙ্গনের শিকার হয়েছে, তাদের খাবার সহায়তাসহ পুনর্বাসনের জন্য ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা) মিজানুর রহমান বলেন জোড়খালের এই এলাকাটি হচ্ছে মেঘনা-তেতুঁলিয়া নদীর মোহনা। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে উজান থেকে নেমে আসা পানি। তার জন্য এই নদী ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে।
এরই মধ্যে আমরা রাজাপুর এলাকায় ভাঙ্গন রোধে বাংলাদেশ সরকারের ৩৪২ কোটি টাকার একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছি। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে রাজাপুর এলাকাকে নদী ভাঙ্গনের হাত থেকে টেকসইভাবে রক্ষা করা সম্ভব হবে। এখন প্রাথমিকভাবে জিও টিউব দেয়া হচ্ছে।