প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন নসরত গাজীর মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সঙ্গে সঙ্গে রমজানে নিয়মিত ইফতার ও খতম তারাবির নামাজ আদায় করা হয়।
আর জুমার নামাজে স্থানীয় মুসল্লিদের পাশাপাশি দূর-দুরান্ত থেকেও মুসল্লিরা আসেন প্রাচীনতম এই মসজিদটিতে নামাজ আদায় করতে।
নসরত গাজীর মসজিদ বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত। উপজেলা সদর থেকে নদী পাড় হয়ে ১৫ কিলোমিটার পূর্ব দিকে মধ্য শিয়ালঘূনী গ্রাম। আর এ গ্রামের চৌধুরী বাড়ির প্রবেশ পথেই দেখা মিলবে সুন্দরতম সাজসজ্জার এক গম্বুজওয়ালা নসরত গাজীর মসজিদের।
মসজিদের সীমানায় প্রবেশের প্রধান ফটকে প্রতিষ্ঠাকাল ১৫৩২ খ্রিস্টাব্দ লেখা থাকলেও স্থানীয়দের কাছ থেকে নিশ্চিত করে নির্মাণসাল পাওয়া যায়নি। মসজিদের গায়ে থাকা শিলিলিপিটি হারিয়ে যাওয়ার কারণে নিশ্চিত তথ্য জানতে অসুবিধা হচ্ছে।
বর্গাকার ভূমি-পরিকল্পনায় নির্মিত এক গম্বুজবিশিষ্ট এ মসজিদটি চুন-সুরকি ও পাতলা বর্গাকারের ইট ব্যবহার করা হয়েছে। মসজিদের অভ্যন্তরের দৈর্ঘ্য-প্রস্থ ৪.৫০ মিটার ১৪ ফিটের একটু বেশি, পাশাপাশি দেয়ালগুলো ১.৪৩ মিটার বা প্রায় ৫ ফুট পুরু।
মসজিদের বাহিরের অংশে চারকোনায় চারটি অষ্টভূজাকার স্তম্ভ রয়েছে। পূর্ব, দক্ষিণ ও উত্তর দিকে গোথিক খিলানবিশিষ্ট প্রবেশপথ রয়েছে। তবে উত্তর ও দক্ষিন দিকের প্রবেশপথ দুটি জানালা হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে বর্তমানে। মসজিদটির অভ্যন্তরের পশ্চিম দেয়ালে একটি মিহরাব রয়েছে। এছাড়া উত্তর ও দক্ষিণ দেয়ালে ছোট ছোট ৪ টি মিহরাব ও আলোকবাতি রাখার স্থান রয়েছে। মসজিদের দেয়াল, কার্নিস এবং স্তম্ভে ফুল ও লতাপাতার কিছু অলংকরণ করা রয়েছে।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, মসজিদটির প্রবেশপথের খিলান নকশার সঙ্গে বাগেরহাটের ষাটগম্বুজ মসজিদের প্রবেশপথের খিলান নকশার যথেষ্ট মিল রয়েছে।
মসজিদটির অভ্যন্তরের পশ্চিম দেয়ালে একটি মিহরাব রয়েছে। মুসলিম স্থাপত্যের এ নিদর্শনটি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের একটি সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসেবে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তালিকাভূক্ত এবং তত্ত্বাবধানে রয়েছে।
মসজিদের মুসল্লি ও বয়োজেষ্ঠ্য মজিবুল হক চৌধুরী জানান, প্রাচীনতম এই মসজিদ ভবনে জায়গা সংকুলন না হওয়ায় এর সামনেই আলাদাভাবে নতুন মসজিদ ভবন নির্মান করা হচ্ছে। যার কাজ এখনও চলমান। তবে নামাজ আদায় ও ঈমাম সাহেবের অবস্থান প্রাচীনতম মসজিদ ভবনেই থাকে।
তিনি বলেন, এই মসজিদে রমজান মাসে প্রতিদিন প্রায় ৬০-৭০ জন লোক ইফতার করেন। পাশাপাশি ১ শত জনের ওপরে তারাবির নামাজ আদায় করেন। এছাড়াও ঐতিহাসিক মসজিদ হওয়ায় এখান দেশের বিভিন্ন এলাকা ও দেশের বাহির থেকেও তাবলিক জামায়াতের মানুষ প্রায়ই আসেন।
তিনি বলেন, বর্তমানে প্রচন্ড গরম আবহাওয়া থাকলেও নসরত গাজীর প্রাচীনতম মসজিদের ভেতরটা বেশ ঠান্ডা থাকে। নামাজ আদায় করেও বেশ প্রশান্তি পাওয়া যায়।
স্থানীয় বাসিন্দা কামাল হোসেন গাজী মসজিদের ইতিহাস সম্পর্কে বলেন, মসজিদটির ইতিহাস একটু ভিন্নভাবে আমরা শুনেছি। যতদূর জানতে পেরেছি, এ অঞ্চলে নসরত গাজী আসার পর মসজিদ বানানোর চিন্তা করেন। সেই চিন্তা থেকে বাড়ির পাশেই মসজিদ নির্মাণের কাজ শুরু করে।
তিনি বলেন, ঐতিহাসিক এই মসজিদটি ২০০০ সালে প্রথম এবং ২০১৫ সালে দ্বিতীয়বারের মতো সংস্কার করা হয়েছে। এটি এখন দেখভাল করার জন্য সরকারি লোকের প্রয়োজন। নয়তো ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে প্রত্নতাত্তিক নিদর্শনটি।
মসজিদের উত্তর, পশ্চিম ও দক্ষিন দিক জুড়ে রয়েছে কবরস্থান রয়েছে। তবে সেখানে নুসরত গাজীকে সমাধিত করা হয়নি।
সূত্র- বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম