নামেই বরিশাল সদর উপজেলার বাসিন্দা তারা, ১৩টি ব্রিজ গলার কাঁটা

নামেই বরিশাল সদর উপজেলার বাসিন্দা তারা, ১৩টি ব্রিজ গলার কাঁটা

বরিশাল সদর উপজেলার চরমোনাই ইউনিয়নের নলচর গ্রামের ১৩ ব্রিজ বাসিন্দাদের গলার কাঁটায় পরিণত হয়েছে। ১৯৯৬ সালে নির্মাণ করা ব্রিজগুলো ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে আছে। গ্রামের মানুষের যোগাযোগের মাধ্য হচ্ছে নৌকা আর ট্রলার। গ্রামবাসী এই বেহাল দলা থেকে মুক্তি চায়।


বরিশাল সদর উপজেলার একটি বিচ্ছিন্ন জনপদের নাম চরমোনাই ইউনিয়নের নলচর গ্রাম। আড়িয়াল খাঁ ও কালাবদর নদী ঘিরে থাকা গ্রামটি ইউনিয়ন থেকেও বিচ্ছিন্ন। উন্নয়ন বঞ্চিত এই গ্রামের প্রায় ছয় হাজার মানুষ চরম দুর্ভোগে দিন কাটান। সরকার আশে সরকার যায় গ্রামের চিত্র পাল্টায় না। এ ছোট্ট গ্রামে হেঁটে চলার জন্য মাটির রাস্তা আর কিছু ইটের রাস্তা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে বাসন্দিাদের। বাধ্য হয়ে গ্রামবাসীর যোগাযোগ রক্ষায় নির্ভর করতে হচ্ছে নৌকা আর ট্রলারের ওপর।


যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না থাকয় নলচর গ্রামের মাটির রাস্তা ও ইটের রাস্তা ধরে এক খাল থেকে অন্য খালের পাড়ে গিয়ে বাসিন্দাদের চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়। কারণ খালের ওপর নির্মাণ হওয়া ব্রিজগুলো দিয়ে পারাপারের সুযোগ নেই। জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে গ্রামের ১৩টি ব্রিজ। এর সঙ্গে নির্মাণ হওয়া কাভার্টগুলোর অবস্থাও বেহাল। যানবাহনবিহীন সড়কের গ্রামটিতে পণ্যসহ যেকোনো ধরণের সামগ্রী পরিবহন করা হয় নৌকা কিংবা ইঞ্জিনচালিত ট্রলারের মাধ্যমে।


সরেজমিনে দেখা গেছে, ব্রিজগুলোর একটিরও অবকাঠামো ভালো অবস্থানে নেই। যার মধ্যে পাঁচটি ব্রিজের কোনো না কোনো অংশ সংযোগ সড়ক থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে কিংবা দেবে গেছে। এমনও দুই/একটি ব্রিজ ভেঙে খালের মধ্যে পড়ে রয়েছে। সেখানে গ্রামবাসী মিলে কাঠ ও বাঁশ দিয়ে পাটাতন তৈরি করে ব্রিজের সঙ্গে জুড়ে দিয়েছেন। যা দিয়ে কোনোভাবে চলছে হাঁটাচলা।
নলচর প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনের পেছনের দিকে থাকা ব্রিজ ভেঙে খালে পড়ে আছে। ওই ব্রিজের লোহার তৈরি কাঠামোগুলো খালের পাশে তুলে রেখে গ্রামবাসী বাঁশ ও সুপারি গাছ দিয়ে সাঁকো বানিয়ে নিয়েছেন এলাকাবাসী। সংস্কার ও পুননির্মাণের দাবি গ্রামবাসীর দীর্ঘদিনের। কিন্তু স্থানীয় ওয়ার্ডের মেম্বর, উপজেলা চেয়ারম্যানসহ জনপ্রতিনিধিরা এ জনপদে না আসায় দাবি এখনও বাস্তবায়ন হচ্ছে না।


নলচর গ্রামের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম অভিযোগ করেন, দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে গ্রামের খালগুলোর ওপরে থাকা ব্রিজগুলোর বেহাল দশা। অনেক ব্রিজের একাংশ ভেঙে রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। কিন্তু যথাযথ কর্তৃপক্ষ সেগুলো মেরামতের উদ্যোগ না নেওয়ায় গ্রামবাসী নিজ উদ্যোগ ভাঙা ও ব্রিজগুলোর ওপর দিয়ে চলাচলের ব্যবস্থা করে যাচ্ছেন। আবার ভাঙা ও জোড়াতালি দেওয়া ব্রিজ দিয়ে পার হতে গিয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। শুধু ব্রিজ নয়, গ্রামজুড়ে রাস্তাঘাটের অবস্থাও খারাপ। খালের পাশ দিয়ে বয়ে চলা রাস্তার বিভিন্ন অংশ প্রায়ই ধসে পড়েছে। অনেক স্থানের মাটি সরে গিয়ে রাস্তা ও কালভার্টের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার পথে। এ মুহূর্তে খাল ও খালের তীর সংস্কার, রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট সংস্কার প্রয়োজন।


গ্রামের বাসিন্দা মিজানুর রহমান জানান, নলচর গ্রামটি বরিশাল সদর উপজেলার চরমোনাই ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়ার্ড। বেশ কিছুদিন আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর স্থানীয় সংসদ সদস্য একবার এসেছিলেন। তিনি গ্রামের বেহাল দশা দেখে রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্টগুলো প্রয়োজন অনুযায়ী মেরামত ও পুননির্মাণ করা, বিদ্যুতের লাইন এনে দেওয়া, বিশুদ্ধ পানির জন্য বেশকিছু চাপকল বসানোর আশ্বাস দিয়ে গেছেন। সম্প্রতি বৈদ্যুতিক খুঁটি বসানোর কাজ শুরু হলেও বাকিগুলো নিয়ে কোনো আশার আলো দেখা যাচ্ছে না। আর ওয়ার্ডের মেম্বর আ. রব হাওলাদার থাকেন বরিশাল শহরে। তিনি এদিকে তেমন একটা আসেন না। ফলে তাকে সমস্যার কথাও বলা যায় না।


গ্রামের বাসিন্দা হাবিবুর রহমান বলেন, সংসদ সদস্য আসার পর প্রকৌশলীরা এসে ব্রিজ ও রাস্তার অবস্থা দেখে গেছেন। তারা কাজ করার কথাও বলে গেছেন। কিন্তু দীর্ঘ সময় পার হলেও এখন পর্যন্ত বাস্তবে কিছুই দেখা যাচ্ছে না।
এ বিষয়ে বরিশাল সদর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মাহববুর রহমান মধু বলেন, সংসদ সদস্য কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীমের নির্দেশে নলচরের সমস্যাগুলো সমাধানে কাজ শুরু হয়েছে। বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার জন্য গ্রামজুড়ে খুঁটি বসানো হয়েছে। বাকি কাজ চলছে। বিদ্যুৎ গেলে উন্নয়ন কাজ আরও বেগবান হবে। ব্রিজ ও রাস্তা সংস্কারের কাজও কিছুদিনের মধ্যে শুরু হবে।
প্রতিমন্ত্রী এবং সদর আসনের সংসদ সদস্য জাহিদ ফারুক বলেন, এলাকাটি বরিশাল থেকে বিচ্ছিন্ন। বৈদ্যুতিক খুঁটি লাগানো হয়েছে। সড়কে বাতি (সোলার বাতি) দিয়েছি। লোহার কালভার্ট ও রাস্তার কাজ করার কথা আমরা বলেছি। কালভার্টের কয়েকটি বরাদ্দও পেয়েছি। কাজ শুরু হওয়ার কথা। তবে শুরু হয়নি কেন তা খতিয়ে দেখা হবে। আশা করি দুই/তিন মাসের মধ্যে নলচরের চিত্র পাল্টে যাবে।