নারী শিক্ষা নিয়ে তালেবানের পদক্ষেপ ‘অত্যন্ত হতাশাজনক’

এবার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তালেবানের শান্তিচুক্তির মধ্যস্থতাকারী কাতারও তালেবানের নারী বিরোধী নীতির কড়া সমালোচনা করল। কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ মোহাম্মাদ বিন আব্দুর রহমান আল থানি বলেছেন, আফগানিস্তানে মেয়েদের শিক্ষার ব্যাপারে তালেবানের পদক্ষেপ ‘খুবই হতাশাজনক’ এবং ‘একধাপ পিছিয়ে’ রয়েছে। কীভাবে একটি ইসলামী ব্যবস্থা চালাতে হয় তার জন্য কাতারের কাছ থেকে শিক্ষা নিতেও তালেবানের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
বৃহস্পতিবার কাতারের রাজধানী দোহায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতি প্রধান জোসেপ বোরেলের সঙ্গে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
তালেবানরা এখনো আফগান মেয়েদের জন্য মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পড়াশোনা পুনরায় শুরু করার অনুমতি দেয়নি। তালেবানরা ক্ষমতা গ্রহণের কয়েক সপ্তাহ পরেই মেয়েদের হাইস্কুলে যাওয়া বন্ধ রাখার কথা বলা হয়।
কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আফগানিস্তানে আমরা সম্প্রতি কিছু দুর্ভাগ্যজনক ক্রিয়াকলাপ দেখেছি, এমন কিছু পিছিয়ে যাওয়া পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে যা খুবই হতাশাজনক’।
গত মাসে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন বাহিনী প্রত্যাহার, হাজার হাজার বিদেশী এবং আফগানদের সরিয়ে নিতে সাহায্য করা, নতুন তালেবান শাসকদের বিশ্বের সঙ্গে যুক্ত করা এবং কাবুল বিমানবন্দর পুনরায় সচল করার ক্ষেত্রে মূল ভুমিকা পালন করেছে কাতার।
শেখ মোহাম্মদ বলেন, ‘বিশ্বের সঙ্গে তাদের যুক্ত রাখা এবং তাদের এই ধরনের পদক্ষেপ না নেওয়ার আহ্বান জানানো দরকার আমাদের। এবং আমরা তালেবানদেরকেও দেখানোর চেষ্টা করছি যে কীভাবে মুসলিম দেশগুলো তাদের আইন পরিচালনা করতে পারে, কিভাবে তারা নারীদের সমস্যা মোকাবেলা করতে পারে’।
‘এর একটি উদাহরণ হল কাতার রাষ্ট্র, যা একটি মুসলিম দেশ। আমাদের ব্যবস্থা একটি ইসলামী ব্যবস্থা, কিন্তু আমাদের কর্মক্ষেত্রে, সরকারে এবং উচ্চশিক্ষায় পুরুষের চেয়ে নারীর সংখ্যা বেশি’।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে তালেবানদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়েছে, যার মধ্যে গত সপ্তাহে হেরাত শহরে ক্রেন থেকে চারজন অভিযুক্ত অপহরণকারীর মৃতদেহ প্রকাশ্যে ঝুলানোর ঘটনাও রয়েছে।
গত মাসে তালেবানরা ক্ষমতায় আসার পর থেকে গুলিতে নিহত সন্দেহভাজন অপহরণকারীদের লাশ ঝুলানো সবচেয়ে ভয়ঙ্কর প্রকাশ্য শাস্তি ছিল।
এ থেকে ধারণা করা হচ্ছে যে তালেবানরা ১৯৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত তাদের আগের শাসনের মতোই ভয়ঙ্কর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
তালেবান ইসলামী আইনের অত্যন্ত কঠোর ব্যাখ্যা অনুসরণ করে যা নারী ও পুরুষকে পৃথক করে এবং কর্মক্ষেত্রে নারীদের প্রবেশাধিকারও কমায়।
মেয়েদের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যেতে বাধা দেওয়ার প্রায় দুই সপ্তাহ হয়ে গেছে। এবং সাম্প্রতিক দিনগুলোতে আফগানিস্তানজুড়ে নারীদের নেতৃত্বে বিক্ষোভ সমাবেশ ছড়িয়ে পড়েছে।
শেখ মোহম্মদ তালেবানদেরকে ‘বিগত বছরগুলোতে যেসব অগ্রগতি অর্জন হয়েছে সেসব বজায় রাখা এবং সংরক্ষণ’ করার আহ্বান জানিয়েছেন। তবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং ‘বন্ধুত্বপূর্ণ’ রাষ্ট্রগুলোকেও সতর্ক করেছেন যেন তারা আফগানিস্তানকে একা ফেলে না যায়।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতি প্রধান জোসেপ বোরেলও কাতারের শীর্ষ কূটনীতিকের প্রতিধ্বনি করে বলেন, ‘সম্প্রতি আফগানিস্তানে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনা ... বেশ হতাশাজনক’।
তিনি বলেন, ‘আশা করি আমরা আফগান সরকারকে নতুনভাবে পরিচালনা করতে পারব’।
তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, কাতার তালেবানদের ওপর তার ‘শক্তিশালী প্রভাব’ ব্যবহার করে নারী ও বেসামরিক নাগরিকদের সঙ্গে আচরণ উন্নত করতে তাদেরকে উৎসাহিত করতে পারবে।