নিরাপদ হোক নৌপথ

বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীদের ভরসার যানবাহন হচ্ছে লঞ্চ-স্টীমার। কম খরচে স্বাচ্ছন্দে যাতায়াতের অন্যতম পথ হচ্ছে নদী। কিন্তু নানা কারণে নদীপথ বিদজনক হয়ে যাচ্ছে। একসময় ছিল ছোট নৌযান। তীব্র ঝড়ে পড়ে নৌযান ডুবির ঘটনায় শংকিত ছিল যাত্রীসাধারণ ও নদী অঞ্চলের মানুষ। সেই সমস্যা অনেকটা দূর করেছে বিলাসবহুল নৌযান নদীপথে যুক্ত হওয়ায়। গুরুত্বপূর্ণ নৌরুটে নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা না থাকায় ঝুঁকি নিয়েই চলাচল করছে যাত্রীবাহী নৌযান। তবে সাম্প্রতিক বিলাসবহুল লঞ্চে আগুনে পুড়ে মানুষের মৃত্যুর মিছিল নতুন করে ঝুঁকি ও শংকা বেড়েছে। এই শংকা ও ভয় দূর করে আমাদের অন্যতম যাত্রী পরিবহন সেবায় নিয়োজিত নদীপথ নিরাপদ হোক। এটা কেবল দাবি নয়, এটা মানুষের মৌলিক অধিকারের অংশ। তাই আমাদের নদীপথ নিরাদ করতে বাস্তবিক ও কার্যকর উদ্যোগ নিতেই হবে।
সারা বছর দক্ষিণাঞ্চলের বেশিরভাগ যাত্রী নদীপথে আসা-যাওয়া করে। রাতে ঘুমিয়ে ঢাকা যাওয়া-আসা এবং খরচ কম হওয়ায় নদীপথের কদর বাড়ছেই। বরিশাল-ঢাকা নদীপথ তাই আরো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। কিন্তু বরিশাল-ঢাকা নৌপথে নানামুখী সমস্যা বিরাজ করছে। একদিকে যেমন বয়া-বীকন বাতি সংকট রয়েছে, তেমনি নৌপথের নাব্যতা সংকট এবং মূল চ্যানেলে বালু ও সিমেন্টের কাচামালবাহী জাহাজ ডুবির ঘটনায় গুরুতপূর্ণ এই নৌপথ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। দেশের বৃহত্তম এই নদী পথের নিরাপত্তা না থাকায় প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে।
নিরাপদ নৌযান পরিচালনার নীতিমালা থাকলেও সেসব কেবল কাগজের মধ্যে সীমাবদ্ধ। অধিকাংশ নৌযানে পর্যাপ্ত জীবন রক্ষা সামগ্রি নেই। নেই আগুন নেভানোর ব্যবস্থা। ঝড় ও জলোচ্ছাসে ঝুঁকি নিয়েই যাত্রী পরিবহন করে আমাদের দেশের বেশিরভাগ নৌযান। অনেক নৌযানে দক্ষ মাস্টার নেই, নেই চালকও। নৌযান সার্ভে সনদ দেওয়া প্রতিষ্ঠান কেবল কাগজ দেখে ছাড়পত্র দিন। বাস্তবে ওই নৌযানে সব ব্যবস্থা আছে কি না তা যাচাই করেন না। এসব প্রায়শই নৌযান দুর্ঘটনায় জীবনহানীর ঘটনা ঘটছে। এক একটি দুর্ঘটনার পর একটু নড়ে চড়ে বসলেও দিন যেতে যেতে সব কিছুই পুরানো ধারায় চলা শুরু করে। আবারও মৃত্যুর মিছিল দেখা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় নতুন কোন ব্যবস্থা নিতে। এমনটা কেন হয়? আমরা কি অভিযান লঞ্চের দুর্ঘটনার পরও সতর্ক হতে পারবো না। এখনও কেন যাত্রীবাহী নৌযানগুলোতে জীবন রক্ষা সামগ্রি পর্যাপ্ত থাকবে না। কেন সার্ভে সনদ অনুযায়ী যাত্রী পরিবহন করবে না।
বরিশাল-ঢাকা নৌপথ কোবল কার্গো ও মাল বোঝাই জাহাজ ডুবির কারণেই ঝুঁকিতে পড়ছে তা নয়। নৌযান কর্তৃপক্ষের গাভিলতিও নৌপথ ঝুঁকিপূর্ণ হচ্ছে। এছাড়াও বরিশাল-ঢাকা নদীপথ ঝুঁকির অনেকগুলো কারণ রয়েছে। এর মধ্যে নৌযানে জীবনরক্ষা সামগ্রি না থাকা, নৌযানে যথেচ্ছারভাবে দাহ্য পদার্থ পরিবহন করার কারণেও দুর্ঘটনায় পড়তে হচ্ছে। এর সঙ্গে নদী খনন কাজ সঠিকভাবে না হওয়ায়ও গুরুত্বপূর্ণ এই পথটি ঝুঁকিপূর্ণই থেকে যাচ্ছে।
নৌপথে রাতে লঞ্চ চলাচলে অসম প্রতিযোগিতার কারণে একাধিকবার যাত্রীরা ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। প্রাণহানীও ঘটেছে। নৌযানের ক্ষতি হয়েছে। তারপরও ওই প্রতিযোগিতা বন্ধ হয়নি। প্রতিযোগিতার কারণে সংঘর্ষ বন্ধ হয়নি। নৌনিরাপত্তায় নৌযান মালিকদের স্বেচ্ছাচারিতা এবং গাফিলতির কারণেও নদীপথে নৌদুর্ঘটনা ঘটে। আমরা চাই, বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ নদীপথ যেন নিরাপদ থাকে। সেব্যাপারে সঠিক পদক্ষেপ ও উদ্যোগ নেওয়া হোক।
যাত্রীদের নির্বিঘœ ও যাত্রাপথ সুন্দর করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী, লঞ্চ মালিক সমিতি, বিআইডব্লিউটিএসহ সবাইকে দায়িত্ব নিতে হবে। নৌপথের নিরাপত্তা দিতে হবে। দেশের বৃহত্তম যাত্রী সেবা খাত নৌপথের নিরাপত্তা দিতেই হবে। এটাই যাত্রী এবং সবার প্রত্যাশা।