নির্বাচনে কোন অনিয়ম বরদাস্ত করা হবে না-বরিশালে প্রধান নির্বাচন কমিশনার

বরিশালে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, ইভিএমে কারচুপির সুযোগ নেই, নির্বাচনে সিসি টিভি ব্যবহার করা হবে, কোন অনিয়ম বরদাস্ত করা হবে না। একই সঙ্গে তিনি প্রার্থীদের আচরণবিধি মেনে চলার আহ্বান জানান।
গতকাল রাতে বরিশাল শিল্পকলা একাডেমী মিলনায়তনে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন উপলক্ষ্যে প্রতিদ্বন্দ্বী মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার।
সিইসি বলেন, সিটি নির্বাচন সিসি ক্যামেরার আওতায় থাকবে। কালো টাকা এবং পেশিশক্তি ব্যবহার করলে সেটা বোঝা যাবে। কোন অনিয়ম বরদাস্ত করা হবে না। সেক্ষেত্রে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন তিনি। থাকবেনা কোন পক্ষপাতিত্ব। মাস্তানী কঠোর ভাবে দমন করা হবে। প্রিজাইডিং অফিসার দায়িত্ব সঠিক ভাবে পালন না করলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ইভিএম নিয়ে শঙ্কার বিষয়ে সিইসি বলেন, ইভিএমএ কারচুপির সুযোগ নাই। গাজীপুর নির্বাচনে যিনি হেরেছেন তিনিও কোন রকম অভিযোগ করেননি। এতেই নির্বাচন সুষ্ঠ হবার প্রমাণ মেলে। বাকী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনগুলো সুষ্ঠু করার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, আচরণবিধিমালা প্রতিপালন করতে হবে। আমরা নির্বাচন কমিশন থেকে বেশ কঠোর অবস্থানে রয়েছি। চেষ্টা করছি। গাজীপুরে যে নির্বাচন হলো আচরণবিধিমালা লঙ্ঘণের দায়ে আমরা একজন গুরুত্বপূর্ণ মেয়র প্রার্থীকে ডাকিয়ে এনেছিলাম। একজন কাউন্সিলর প্রার্থীর প্রার্থীতা বাতিল করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সবকিছু দেখবো না। দেখতে পারবো না, কিন্তু আমাদের চোখে যেটা আসবে, আমরা মিডিয়ার ওপর আমাদের দৃষ্টি থাকবে। বিশেষ করে সোস্যাল মিডিয়া নয়, আমরা কিন্তু ন্যাশনাল প্রিন্ট মিডিয়া এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়া আমরা সব সময় পর্যবেক্ষণ করে থাকি। একটি দুটি নয় সবকটি চ্যানেল ও ২০-২৫টি পেপার আমরা দেখি। যখন দেখি কোন একটা আচরণ ভঙ্গ জাতীয়ভাবে ফোকাস হয়ে গেছে, তখন আমরা বিষয়টি আমলে নেই। যে পদ্ধতি বর্ণিত আছে, আমরা অত্যন্ত দ্রুত তদন্ত করি, জেলা প্রশাসনের কাজ থেকে নেই, পুলিশের কাছ থেকে এবং নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছ থেকে নেই। সেগুলো পর্যালোচনা করে দেখি। সবকিছু মিলিয়ে বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নেই।
ইভিএম নিয়ে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী আবুল খায়ের আাবদুল্লাহ আস্থার কথা প্রকাশ করলেও ইভিএম তুলে ব্যালটে ভোট দেয়ার দাবি করেন জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস। এছাড়া ইভিএম মেশিন নিয়ে নানা ধরণের প্রশ্ন তোলেন ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী সৈয়দ মোহাম্মদ ফায়জুল করীম।
প্রার্থীদের এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, আমাদের দিক থেকে চেষ্টার কোন ত্রুটি হবে না। গাজীপুরে ইভিএম ব্যবহারে ভোটারদের কোন সমস্যা হয়নি। এখন কিন্তু ইভিএম নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ নেই। নির্বাচন আর কয়েকদিন পরে। আমাদের ইভিএম সেট হয়ে গেছে। এখন যদি আপনারা বলেনও, তাহেলে ইভিএম উউথড্রো করে ব্যালটে ভোট নেওয়া সম্ভব নয়। যদি আপনারা আমাদের মনে করেন আমরা অসৎ দুর্নীতিপরায়ন, ইভিএম দিয়ে আমরা কারচুপি করবো। তাহলে কথাটা বোধহয় ঠিক না। আর বিষয়টা এত সহজ নয়।
আচরণবিধিমালার ব্যাপারে বলেছেন, আমরা কিন্তু দৃশ্যমান আচরণবিধি ভঙ্গগুলো দেখবো। রাতের দুটা তিনটার সময় যদি টাকা বিতরণ হয়, আমার কাছে যদি কোন ছবি না থাকে, বা আপনারা যদি ছবি তুলে আনতে না পারেন। আমাদের পক্ষে বিষয়টি আমালে নেয়ার ইচ্ছা থাকলেও সম্ভব নয়। এটা আপনাদের উপলব্ধি করতে হবে। টাকা বিতরণকে নিরুৎসাহিত করতে হবে, প্রতিরোধ করতে হবে। সেই সংস্কৃতি আপনাদেরই গড়ে তুলতে হবে। টাকাপ্রদাণসহ ধরে আনতে পারেন, কালো টাকার বিতরণ হচ্ছে তাহলে আমরা সেটা দেখবো।
তিনি বলেন, কালো টাকা কিন্তু চোখে দেখা যাবে না। কাজেই কালো টাকা চেষ্টা করেও অন্ধকারের মধ্যে বের করতে পারনবো না। কিন্তু কালো টাকা দিয়ে পেশিশক্তি যখন সৃষ্টি হবে তখন জিনিসটা দৃশমান হবে। আপনি হয়তো ১০জন মাস্তান ডান পকেটে পিস্তল, বাম পকেটেও পিস্তল নিয়ে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমি বুঝবো, কারো এতে দরোদ নাই, যে বিনে পয়সায় টাকা পয়সা না পেয়ে দুই পকেটে পিস্তল ঢুকিয়ে আপনার জন্য কাজ করবে। সার্টেনলি ওকে টাকা দেওয়া হয়েছে। ওটাই হচ্ছে কালো টাকা। দৃশমান কালো টাকা। এই দৃশ্যমান বিষয়গুলো কঠোরহস্তে দমন করা হবে।
মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আহসান হাবিব খান বলেন, শত শত নির্বাচন করা হয়েছে ইভিএমে। এখন এটা নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ নেই। বিশ্বাস রাখতে হবে। সন্দেহ দূর করতে হবে।
বরিশালের বিভাগীয় সকমিশনার মো. আমিন উল আহসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলম, ডিআইজি মো. আক্তারুজ্জামান, পুলিশ কমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম, জেলা প্রমাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন, পুলিশ সুপার সহ বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতাকারী মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা।