নির্মম মৃত্যু কারো কাম্য নয়,কারো সন্তান যেন নয়নবন্ড না হয়

নির্মম মৃত্যু কারো কাম্য নয়,কারো সন্তান যেন নয়নবন্ড না হয়
একটি সম্পাদকীয়তে লিখেছিলাম রিফাত হত্যার নির্মমতার দায় নিতেই হবে। আজ বলতে হচ্ছে নির্মম মৃত্যু কারো কাম্য নয়। একটি নির্মম হত্যাকান্ড আমাদের আরো একটি নির্মম মৃত্যু প্রত্যক্ষ করতে বাধ্য করেছে। কারো সন্তান যেন নয়ন ব-ের মতো বেপরোয় না হয়। যেন এইভাবে মুত্যুর স্বাদ নিতে না হয়। আমরা জানি জন্মিলে মৃত্যু হবেই। কিন্তু মৃত্যু কি এইভাবে কোন বাবা-মা, পরিবার, সামাজ রাস্ট্র কামনা করে? অবশ্যই সবাই একবাক্যে বলবেন না। তারপরও আমাদের সামনে এমন এমন মৃত্যু ঘটে যা মানতে কষ্ট হয়। প্রকাশ্যে রিফাতের মতো এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এটা তো আমাদের আদিম সমাজের দিকে ইঙ্গিত করছে। আর ওই মৃত্যুই আবার আমাদের আরেক মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে। পুলিশের সঙ্গে বন্দুক যুদ্ধে নির্মমভাবে মরতে হয়েরছ নয়ন বন্ড কে। গতকাল আমরা লাইন বেঁধে নির্মমভাবে হত্যাকারী নয়ন ব-ের মৃত দেহ দেখতে ভীড় জমিয়েছি। যেন চিড়িয়াখানা কোন যন্তু দেখতে ভীড় জমিয়েছে উৎসুক মানুষ। এই দুটো মৃত্যুর কোনটাই স্বাভাবিক নয়। আমরা চাই আমাদের যেন স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা দেওয়া হয়। সেজন্য সামাজিক নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে। সন্ত্রাসীদের ব্যাপারে শুণ্য সহনশীল অবস্থান নিতে হবে। তাহলে কেউ একজন আর নয়ন ব- হওয়ার সাহস দেখাবে না। এজন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে রাজনৈতিক সদিচ্ছারও প্রয়োজন আছে। ২০১০ সালে বরিশাল পলিটেকনিক কলেজে ছাত্রলীগ কর্মীরা কুপিয়ে হত্যা করে ইমরানকে। একই প্রতিষ্ঠানে কয়েক বছর পর হত্যার শিকার হয় রেজাউল। এরপর ঢাকায় নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয় বিশ^জিৎ নামে এক যুবককে। এই সব হত্যার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন ছাত্রলীগ-আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। সব শেষ বরগুনা জেলায় দিনের বেলা কুপিয়ে হত্যা হয় রিফাত শরীফকে। বরিশাল পলিটেকনিক এবং বগুনার ঘটনা একই রকম। দিনের আলোয় অনেক মানুষের সামনে দুটি হত্যাকা- ঘটায় ছাত্রলীগ নামধারীরা। গত ২৬ জুন বরগুনায় একটি কলেজের সামনে প্রকাশ্যে কুপিয়ে গুরুতর জখম করা হয়েছে রিফাত শরীফ (২৫)কে। অতিরিক্ত রক্তক্ষণে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় রিফাত। রিফাত হত্যার নির্মম ঘটনার ভিডিও ফুটেজ দেখে যে কোন বিবেকবান মানুষ আঁতকে উঠবে। হয়েছেও তাই। গত কয়েক দিন সারা দেশে আলোচনার বিষয় ছিল এই নির্মম হত্যাকা-। কি কারণে রিফাত হত্যা হয়েছে সেটা বড় কথা নয়। একজন মানুষকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। সন্ত্রাসীদের ভয়ে তাকে বাঁচাতে কেউ এগিয়ে আসেনি। রিফাতের স্ত্রীর আর্তনাদ ছাড়া আর কোন সহযোগীকে দেখা যায়নি সেখানে। যদিও কোন একজন ওই নির্মম দৃশ্য ধারণ করেছে। ওই দৃশ্য দেখে হতবাক হয়েছে গোটা দুনিয়া। এই নির্মম হত্যার দায় কোনভাবেই এড়ানো যাবে না। এই দায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সরকাকেই নিতে হবে। সেই সঙ্গে সমাজের প্রতিটি নাগরিই এই দায় এড়াতে পারে না। রিফাত হত্যা যেমন আমাদের ব্যথিত করেছে। ভেতরে কষ্টের বীজ বুনে দিয়েছে। তেমনি নয়ন বন্ডের মৃত্যুও কিন্তু আমাদের স্বস্তি দেয়নি। কারণ বন্দুক যুদ্ধে মৃত্যুও তো অস্বাভাবিক মৃত্যু। আগামীতে আর যেন কোন সন্তানকে এইভাবে অস্বাভাবিক মৃত্যুর মুখে পড়তে না হয়, সেইজন্য পরিবার, বিশেষ করে বাবা-মাকে বেশি দায়িত্বশীল হতে হবে। সন্তান কোথায় যায়, কার সঙ্গে মেশে সেই খোঁজ-খবর রাখতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীল ভূমিকা নিতে হবে। এইক সঙ্গে সমাজের প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব নিতে হবে। দায়িত্ব নিতে হবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকেও। সেই সঙ্গে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে হবে। সরকার এব্যাপারে ইতিবাচ ভূমিকা নেবে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় অস্বাভাবিক মৃত্যু বন্ধ করা সম্ভব হবে। আসুন, আমরা সবাই মিলে আমাদের সোনার বাংলাদেশটাকে সুন্দরভাবে সমিৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাই। তাহলে আর নয়ন বন্ডের মতো কোন সন্তান বিপথে যাবে না। মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের সঙ্গে কারো সন্তান যুক্ত হবে না। এরকম একটা সুন্দর বাংলাদেশ আমদের টেকসই উন্নয়নের মহাসড়কে নিয়ে যাবে।