সারা দেশে গত ৬ মাসে ৭৬টি নৌ দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে ৭১ জন নিহত ও নিখোঁজ হন ৯৩ জন। নিখোঁজদের সন্ধান না পাওয়ার কারণে তাদের সলিলসমাধি হয়েছে বলে ধরে নেয়া হয়। এ হিসাবে ছয় মাসে প্রাণহানির সংখ্যা ১৬৪। এ ছাড়া এসব দুর্ঘটনায় আহত হন ২২৬ জন।
শিপিং অ্যান্ড কমিউনিকেশন রিপোর্টার্স ফোরামের (এসসিআরএফ) নিয়মিত মাসিক জরিপ ও পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল মঙ্গলবার প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে।
এসসিআরএফ সভাপতি আশীষ কুমার দে বলেন, বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, নৌ দুর্ঘটনায় নিখোঁজ কাউকে পরবর্তী সময়ে খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাদের সলিলসমাধি (মৃত্যু) হয়েছে বলেই ধরে নেয়া হয়। এই বিবেচনায় গত ছয় মাসে নৌ দুর্ঘটনায় লাশ উদ্ধার হওয়া ৭১ জন ও নিখোঁজ ৯৩ জন মিলিয়ে নিহতের সংখ্যা ১৬৪।
প্রতিবেদনে বলা হয়, নিহতদের মধ্যে ১২ নারী ও ১৩ শিশু রয়েছে। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ ও উপকূলীয় নৌপথে যাত্রী ও পণ্যবাহী ট্রলারসহ ছোট ছোট দুর্ঘটনায় এই হতাহতের ঘটনা ঘটে।
নিকট-অতীতে সংঘটিত বিভিন্ন নৌ দুর্ঘটনার উদাহরণ টেনে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, তবে এ বছর লঞ্চডুবির মতো বড় কোনো দুর্ঘটনা ও একসঙ্গে ব্যাপক প্রাণহানি ঘটেনি।
৬ মাসের দুর্ঘটনার চিত্র
প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ বছরের জানুয়ারিতে ১০টি দুর্ঘটনায় দুই নারী ও দুই শিশুসহ ৯ জন নিহত, ৩৭ জন আহত ও ২০ জন নিখোঁজ হয়। ফেব্রুয়ারিতে ১৫টি দুর্ঘটনায় ১১ জন নিহত হয়; যার মধ্যে দুই নারী ও দুই শিশু রয়েছে। আর আহত ও নিখোঁজের সংখ্যা যথাক্রমে ৬৭ ও ৩৮। মার্চে ১৮টি দুর্ঘনায় চার নারী ও পাঁচ শিশুসহ ১৫ জন নিহত, ৫০ জন আহত ও ১১ জন নিখোঁজ হয়। এপ্রিলে ১৪টি দুর্ঘটনায় ১৭ জন নিহত হয়; যার মধ্যে এক নারী রয়েছেন। ওই মাসে আহত ও নিখোঁজ হয় যথাক্রমে দুইজন ও ১৬ জন। মে মাসে দুর্ঘটনা ঘটে ১২টি; এতে দুই নারী ও দুই শিশুসহ ১৩ জন নিহত এবং ৪৬ জন আহত ও সাতজন নিখোঁজ হয়। জুনে সাতটি দুর্ঘটনায় এক নারী ও দুই শিশুসহ ছয়জন নিহত হয়। আহত ও নিখোঁজের সংখ্যা যথাক্রমে ২৪ ও এক।
আশীষ কুমার দে জানান, তাদের পর্যবেক্ষণে নৌ দুর্ঘটনা সহনীয় মাত্রায় নেমে আসার পেছনে পাঁচটি প্রধান কারণ চিহ্নিত হয়েছে। সেগুলো হলো:
১. নৌখাতের বিগত সময়ের নানা অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ।
২. সামাজিক সংগঠনগুলোর দুর্ঘটনাবিরোধী তৎপরতার কারণে জনসচেতনতা বৃদ্ধি।
৩. নৌ মন্ত্রণালয়ের কঠোর নজরদারির ফলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোর সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ।
৪. নৌপথে কোস্টগার্ড ও নৌ পুলিশের টহল জোরদার।
৫. যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে উন্নতমানের নৌযানের সংখ্যা বৃদ্ধি।