পবিপ্রবির ছাত্রলীগ নেতৃত্ব শূন্য

দীর্ঘ সাড়ে চার বছর ধরে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়(পবিপ্রবি)শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি, সহ-সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক পর্যায়ের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ না থাকায় সাংগঠনিক কাঠামো মুখথুবড়ে পড়েছে দক্ষিণবঙ্গের এই ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির।
জানাযায়, সর্বশেষ ২০১৭ সালের ২৫ জুলাই পবিপ্রবি শাখা ছাত্রলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সম্মেলন শেষে মোশায়েদুল ইসলাম সাদিকে সভাপতি ও মোঃ রাকিবুল ইসলাম রাকিবকে সাধারণ সম্পাদক করে ২০ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করে তখনকার কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসেন। এর পর সাড়ে চার বছর অতিবাহিত হলেও নতুন কমিটি হয়নি। ২০১৯ সালের ১৬ জুন পবিপ্রবি ছাত্রলীগের বর্ধিত সভা শেষে তখনকার কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সভাপতি রেজয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী ২০১৯ সালের ৫ অক্টোবর সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করেন। পরবর্তীতে তারা দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পাওয়ার পর দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও নতুন দায়িত্ব পাওয়া সভাপতি আল-নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য সম্মেলন করেননি।
যার ফলে সংগঠনের চেইন অব কমান্ড না থাকায় নেতাকর্মীরা বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। সামনে বড় ধরনের সহিংসতার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। আবার অনেকের সাংগঠনিক গতিশীলতা না থাকায় মূল স্রোতধারা থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। উল্লেখযোগ্য গত বছরের ২৫ নভেম্বর কৃষি গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা উপলক্ষে আয়োজিত শুভেচ্ছা মিছিলে স্লোগান ধরা নিয়ে দুই গ্রুপের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি ও ঝামেলা সৃষ্টি হয়; যা প্রক্টোরিয়াল বডির হস্তক্ষেপে শান্ত হয়। ৯ মে ২০১৮ সালের ১৮৬ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটির প্রায় ১০০ জনের অধিক নেতা ইতিমধ্যে পড়াশুনা শেষে ক্যাম্পাস ত্যাগ করেছেন। যেমন সাধারণ সম্পাদক মোঃ রাকিবুল ইসলাম করোনাকালীন ছুটি শেষে আর ফেরেননি। তিনি গত বছর ১৫ অক্টোবর বিয়ে করেছেন।কমিটির ৪৮ জন সহ-সভাপতির মধ্যে রাতুল দেউড়ি ও ইমতিয়াজ আলম বাদে অন্য ৪৬ জন সবাই রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন। পূর্ণাঙ্গ কমিটির ৯ জন যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এর মধ্যে শুধু নাঈম হোসেন ক্যাম্পাসে আছেন। ৯ জন সাংগঠনিক সম্পাদকের মধ্যে কেবল শুভজিৎ চক্রবর্তী ক্যাম্পাসে আসেন তাও অনিয়মিত। আরও জানা যায়, পবিপ্রবি ছাত্রলীগের অধীনস্থ আটটি হল কমিটি ও একটি বহিঃস্থ ক্যাম্পাস কমিটিরও মেয়াদ উত্তীর্ণ। উক্ত কমিটির অনেকেই সরকারি-বেসরকারি চাকরি করেন।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক জাকারিয়া খান ভোরের আলোকে বলেন, এ ব্যাপারে আমরা অবগত আছি এবং সিনিয়রদের জানিয়েছি। আমরা প্রতিনিধি পাঠিয়েছিলাম।এ ব্যাপারে আশু উপযুক্ত একটা ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রতিবেদনের জন্য কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ থেকে পাঠানো প্রতিনিধি মোঃ আশিকুর রহমান রাজিব এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমাকে প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য যে পবিত্র দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তা আমি নির্ভুলভাবে মার্চের শুরুতে জমা দেব। উক্ত প্রতিবেদনে যেন একজনও প্রকৃত ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী বঞ্চিত না হয় সেদিকে সজাগ দৃষ্টি থাকবে আমার।
পবিপ্রবি ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শুভ জ্যোতি চক্রবর্তী ভোরের আলোকে বলেন, কেন্দ্রীয় বা তৃণমূল পর্যায়ের নেতাদের সুপারিশে নয়; একমাত্র কাউন্সিলের মাধ্যমে যোগ্যতা দিয়ে তৈরিকৃত কমিটি আগামীর পবিপ্রবি ছাত্রলীগকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে। পবিপ্রবি ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক তুহিন রায়হান বলেন, কোনমতে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি।জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে অতি দ্রুত একটি নতুন কমিটি দরকার।
পবিপ্রবি শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানা হিমেল ভোরের আলোকে বলেন, পবিপ্রবি ছাত্রলীগ এখন চরম অভিভাবকহীনতায় ভুগছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পবিপ্রবি ছাত্রলীগ কর্মী ভোরের আলোকে বলেন, আগামী ২০২৩ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজপথে থেকে নৌকার জয় সুনিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ পরিমাণ শ্রম ও মেধা দিতে যারা প্রস্তুত থাকবে এমন নেতাকর্মীরাই কমিটিতে আসুক; তাহলে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে ও চতুর্থ শিল্প বিপ্লব বাস্তবায়নে সহায়ক হবে।