পলাতক পি কে হালদারের সম্পদের খোঁজে পশ্চিমবঙ্গে অভিযান

পলাতক পি কে হালদারের সম্পদের খোঁজে পশ্চিমবঙ্গে অভিযান

আলোচিত পি কে হালদার ও তার সহযোগীর অবৈধ সম্পত্তির খোঁজে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের অন্তত ১০ জায়গায় অভিযান চালানো হয়েছে বলে ডয়েচে ভেলের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।

শুক্রবার ভোরে উত্তর ২৪ পরগণার অশোকনগর ও দক্ষিণ ২৪ পরগণার পোলেরহাটে দুইটি বাড়িসহ বিভিন্ন জায়গায় এই অভিযান শুরু করে ভারতের কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)।

নিরাপত্তাকর্মী নিয়ে কর্মকর্তারা বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে এই তল্লাশি চালান বলে জানা গেছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় প্রকাশিত ডয়েচে ভেলের এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত অভিযান চলছিল বলে জানানো হয়েছে।

অসমর্থিত সূত্রের বরাতে প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, পি কে হালদারের ব্যক্তিগত আইনজীবী সুকুমার মৃধার একটি বাড়ি থেকে প্রচুর অর্থ পেয়েছে ইডি। তবে এই টাকা কোথা থেকে এসেছে সেই বিষয়ে তারা এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি।

ইডি সূত্র জানিয়েছে, তদন্ত শেষে জব্দকৃত অর্থের উৎস সম্পর্কে তারা নিশ্চিত হতে পারবেন। এর সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থ পাচার মামলার আসামি প্রশান্ত কুমার হালদার (পি কে হালদার) জড়িত কিনা তা-ও তদন্ত রিপোর্ট এলে জানা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এদিকে সুকুমার মৃধা বাংলাদেশে বসবাস করলেও পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় তার অনেক মাছের ভেড়ি আছে বলে অভিযোগ রয়েছে। পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখছে ইডি। সুকুমার মৃধার অবৈধ সম্পদ বা অর্থ পাচারের বিষয়ে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ কোনো তথ্য দিয়েছিল কিনা সে বিষয়টি ইডি সূত্র নিশ্চিত করেনি।

পশ্চিমবঙ্গে পরিচালিত অভিযানের বিষয়ে কিছু জানেন না বলে ডয়েচে ভেলেকে জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান।

সুকুমার মৃধা বা পি কে হালদারের পশ্চিমবঙ্গে অবৈধ সম্পত্তির বিষয়ে দুদক বা বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীর বাহিনীর পক্ষ থেকে ভারতের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছিল কিনা তা তিনি নিশ্চিত করে বলতে পারেননি তিনি। তবে ‘মিউচ্যুয়াল লিগ্যাল অ্যাসেসমেন্টের’ মাধ্যমে সহায়তা চাওয়ার সুযোগ আছে বলে তিনি জানান।

পি কে হালদার বা সুকুমার মৃধা বাংলাদেশ থেকে ভারতে অর্থ পাচার করলে সেটি ফেরত আনা সম্ভব হবে বলেও মনে করেন তিনি।

 দুদকের এই আইনজীবী বলেন, ‘ভারতের কর্তৃপক্ষ যদি নিশ্চিত করে এই অর্থ বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়েছে, তাহলে আদালতের মাধ্যমে আমরা সেটা জব্দ করতে পারবো।’

৪২৬ কোটি টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন এবং বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে প্রায় ছয় হাজার ৮০ কোটি টাকা লেনদেনের মামলায় পলাতক পি কে হালদারসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা রয়েছে৷

‘অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের’ এই মামলায় গত বছরের জানুয়ারিতে পি কে হালদারের ব্যক্তিগত আইনজীবী সুকুমার মৃধা ও তার মেয়ে অনিন্দিতা মৃধাকে গ্রেপ্তার করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

সেসময় বাংলাদেশের একটি সংবাদমাধ্যমকে দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রনব কুমার ভট্টাচার্য্য বলেন, ‘পি কে হালদার বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার পর তার অবৈধ সম্পদ দেখাশোনা করতেন সুকুমার ও অনিন্দতা মৃধা। পিকে হালদারের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানও করেন সুকুমার মৃধা।’

দুদক সচিব মুহা. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেন, ‘পি কে হালদার ভুয়া ঋণ দেখিয়ে অবৈধভাবে অর্জিত প্রায় ১০০ কোটি টাকা তার মা লিলাবতী হালদারের বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে রাখেন। পরে লিলাবতী হালদারের ব্যাংক হিসাব থেকে সুকুমার মৃধা, অবন্তিকা বড়াল ও অনিন্দিতা মৃধার মাধ্যমে আবার পি কে হালদারের কাছে হস্তান্তর ও স্থানান্তর করা হয়। এভাবে তারা মানিলন্ডারিং করেছেন বলে তদন্তকারী কর্মকর্তা তথ্য পেয়েছেন।’

দুদক সুকুমার মৃধার প্রায় ২০ কোটি টাকার সম্পদ এবং তার মেয়ে অনিন্দিতার প্রায় দেড় কোটি টাকার সম্পদের তথ্য পেয়েছে, যা পি কে হালদারের অবৈধ উপায়ে অর্জিত সম্পদ।

দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান জানান, সুকুমার মৃধা পিকে হালদারের আয়কর আইনজীবী ছিলেন। পি কে হালদার ও তার মেয়ে আদালতের কাছে তাদের অপরাধ স্বীকার করেছেন।